রকিব মুহাম্মদ
যুগ্ম বার্তা সম্পাদক
ক্ষমতার অপব্যবহার, বেআইনি কর্মকাণ্ড এবং দুর্নীতির কারণে আলোচনায় থাকা ইসলামিক ফাউন্ডেশনের (ইফা) মহাপরিচালক (ডিজি) সামীম মোহাম্মদ আফজাল শারীরিক কারণ দেখিয়ে পদত্যাগ করেছেন বলে শনিবার (১৫জুন) বিভিন্ন ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় এ খবর প্রচারিত হয়েছে।
ধর্ম মন্ত্রণালয় ও ফাউন্ডেশনের সকল পর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীরাদের মাধ্যমে ইফা ডিজির পদত্যাগের বিষয়টি সামনে উঠে এসেছে। তারা বলছেন, ইফা ডিজি পদত্যাগ করেছেন এবং তার পদত্যাগপত্র আনুষ্ঠানিকভাবে দুই একদিনের মধ্যে জমা দেওয়া হবে। তবে ধর্ম প্রতিমন্ত্রী শেখ মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ এ ব্যাপারে সুনিশ্চিত কোন তথ্য দিতে পারেননি।
একটি সূত্র বলছে, এর আগে শনিবার (১৫ জুন) সকালে সামীম মোহাম্মদ আফজাল আগারগাঁও অফিসে আসেন। অভিযোগ উঠে, অফিসে কিছুক্ষণ অবস্থান করে অর্ধশতাধিক ফাইল বেঁধে নিয়ে গাড়িতে উঠতে চাইলে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের তোপের মুখে পড়েন। কর্মকর্তা-কর্মচারীরা তাকে ঘেরাও করে রাখে। ইফার সচিবের বাধার মুখে ফাইল ফেরৎ দিতে বাধ্য হন আফজাল। এ খবর পেয়ে শত শত কমর্কতা-কমচারি সাপ্তাহিক বন্ধ সত্ত্বেও অফিসে এসে ডিজির রুমের বাইরে অবস্থান নেন।
উত্তেজনাকর পরিস্থিতি সৃষ্টি হলে অতিরিক্ত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য নিয়োগ করা হয়। ছুটে যান ইসলামিক ফাউন্ডেশনের বোড অব গভনরস-এর সদস্য আলহাজ মিছবাহুর রহমান চৌধুরী। পরে তার মধ্যস্ততায় পদত্যাগ করে সামীম আজজাল অফিস ত্যাগ করেন। এ সময় ইসলামিক ফাউন্ডেশনের সচিব কাজী নুরুল ইসলাম ও ইসলামিক ফাউন্ডেশনের আইন উপদেষ্টা এ আর মাসউদ উপস্থিত ছিলেন।
অন্য একটি সূত্রে মতে, ওই দিন সকালে সরকারি ছুটির দিন হলেও সামীম মোহাম্মদ আফজাল ফাউন্ডেশন কার্যালয়ে গেলে তিনি পদত্যাগ করছেন বলে গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়ে। কার্যালয়ে গেলেও পদত্যাগপত্র জমা দেননি তিনি। গুরুত্বপূর্ণ কিছু ফাইল সরিয়ে নিতে তিনি অফিসে এসেছেন।
এমনকি ডিজির আস্থাভাজন এক পরিচালক কিছু গুরুত্বপূর্ণ ফাইল গাড়িতে করে অফিসের বাইরে নিতে চাইলে বাধা দেন ইফার সচিব। এ খবর পেয়ে শত শত কমর্কতা-কমচারি সাপ্তাহিক বন্ধ সত্ত্বেও অফিসে এসে ডিজির রুমের বাইরে অবস্থান নেন। এ সময় কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দিলে তিনি পুলিশি প্রহরায় কার্যালয় ত্যাগ করেন।
মহাপরিচালক সামীম মোহাম্মদ আফজালের পদত্যাগ বিষয়ে আলহাজ মিছবাহুর রহমান চৌধুরী বলেন, ‘আসলে ডিজি সাহেব অসুস্থ। তিনি দীর্ঘ ১০ বছর এই দায়িত্ব পালন করেছেন। শারীরিক কারণেই এখন তার বিশ্রাম প্রয়োজন। তাকে সেই পরামর্শই দেওয়া হয়েছে।’
তবে শনিবার রাত ১১টায় ধর্ম প্রতিমন্ত্রী শেখ মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ একটি অনলাইন সংবাদমাধ্যমকে বলেন, “ইফা মহাপরিচালক শারীরিক ও মানসিকভাবে খুবই অসুস্থ। তিনি মানসিক ভারসাম্যও হারিয়ে ফেলেছেন তিনি। তাই শনিবার ছুটির দিনে পদত্যাগ করতে গিয়ে সরকারি অর্ধশতাধিক ফাইল অফিস থেকে সরিয়ে বাসায় নিতে চেয়েছিলেন। সরকারি ফাইল এভাবে নেয়ার অপচেষ্টা করা তার মোটেও উচিৎ হয়নি।”
“সকালে তিনি পদত্যাগ করতে গেলেও পদত্যাগ করেননি। পরবর্তীতে দিনে কয়েকবার বিভিন্ন ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন সংবাদ প্রচারিত হলেও, রাত পর্যন্তও নিশ্চিত তথ্য পাওয়া যায়নি।” যোগ করেন প্রতিমন্ত্রী।
প্রসঙ্গত, ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মসজিদ ও মার্কেট বিভাগের পরিচালক মহীউদ্দিন মজুমদারকে সাময়িক বরখাস্ত করার কারণে তাকে শোকজ করা হয়।
শোকজের চিঠিতে বলা হয়, ‘ইসলামিক ফাউন্ডেশন কর্তৃক ক্ষমতা বহির্ভূত, বেআইনি, অসৎ উদ্দেশ্যপ্রণোদিত, স্বেচ্ছাচারিতা ও ক্ষমতার অপব্যবহারের কারণে কেন তার চুক্তি বাতিলের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হবে না তা লিখিতভাবে পত্র প্রাপ্তির সাত কার্যদিবসের মধ্যে ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয় বরাবর প্রেরণের জন্য অনুরোধ করা হলো।’
সম্প্রতি দুর্নীতি দমন কমিশন থেকে তার বিরুদ্ধে প্রাপ্ত সুনির্দিষ্ট কিছু অভিযোগের বিষয়ে তদন্ত করতে ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ে চিঠিও পাঠানো হয়েছে।
উল্লেখ্য, ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর টানা ১০ বছর ধরেই গুরুত্বপূর্ণ এই প্রতিষ্ঠানটির প্রধান দায়িত্ব পালন করে আসছেন সাবেক জেলা জজ।
২০০৯ সালের জানুয়ারিতে ইসলামিক ফাউন্ডেশনে মহাপরিচালক নিয়োগ দেওয়া হয় সামীম মোহাম্মদ আফজালকে। ২০১৬ সালের ২০ ডিসেম্বর তার মেয়াদ বাড়ানো হয়। ২০১৭ সালের ৩১ ডিসেম্বর আরও দুই বছরের জন্য চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেওয়া হয়।
গত মে মাসের শুরুতে সামীম মোহাম্মদ আফজালকে ইসলামী ব্যাংকের পরিচালকের পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। এ পদ থেকে কেন তাকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে তার কারণও স্পষ্ট নয়। বিষয়টি অনেকটা গোপনে হয়েছে। ২০১৭ সালের মে মাসে তিনি এই নিয়োগ পেয়েছিলেন।
আরএম/