শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪ ।। ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ ।। ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬


মাদরাসা পড়ুয়াদের বলছি...

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

সাইয়্যেদ আবুল হাসান আলী নদভী: আমাদের মাদরাসাগুলাের মূল লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য তাে ছিল, তারা দীনের অতন্দ্র প্রহরী তৈরি করবে, যারা দীনের সীমান্ত রক্ষায় আত্মনিবেদিত থাকবে, যাতে কোন চোর বা গুপ্তচরের অনুপ্রবেশ না ঘটে।

এখন তারাও যদি লবণের খনিতে পড়ে লবণ হয়ে যায় অর্থাৎ যেমন দেশ তেমন বেশ-এর দৃষ্টান্তে পরিণত হয়ে যায়, যুগের সাথে তাল মিলিয়ে কর্তব্য বিস্মৃত গড্ডালিকা প্রবাহের মত হয়ে যায় এবং শরীয়তসম্মত ও শরীয়তবর্জিত যে কোন গর্হিত কাজে সমর্থন দিতে শুরু করে, অধিকন্তু তারাই সেসবের নেতৃত্বে অবতীর্ণ হয়, তাহলে আর আশা-ভরসা কোথায়? কবির ভাষায় :

কাবার থেকেই যদি জন্ম হয় কুফরীর,
মুসলমানী রইবে তখন কোথা?
জাতির রক্ষকই যদি ভক্ষক হয়ে যায়।
তাহলে সে জাতির অবলুপ্তি আর কতদিনের ব্যাপার!

আরবী ভাষা শেখার বদৌলতে প্রাপ্ত চাকুরীই যদি মূল লক্ষ্য হয়, তাহলে আরবী আর ইংরেজীর মাঝে ব্যবধান কী রইল? আলেমগণ ‘ওয়ারাছাতুল আম্বিয়া' খেতাবে ভূষিত। নবীগণ ছিলেন দীনের ব্যাপারে অতিশয় মর্যাদাবােধসম্পন্ন ও অনুভূতিপ্রবণ।

ইহুদীরা হযরত মূসা আলাইহিস সালামের খিদমতে আবদার করল, ‘ইজআল লানা লাহান কামা লাহুম আলিহাহ' অর্থাৎ আমাদের জন্য এমন কোন প্রকার জৌলুসপূর্ণ মাবুদ (প্রতিমা) বানিয়ে দিন, যেমন রয়েছে ঐ (মিসরীয় কিবতী) লােকদের।

তিনি তখন নবীসূলভ তেজস্বিতার সাথে ভাবগম্ভীর জবাব দিয়েছিলেন, “তোমরা তাে চরম গন্ডমূর্খের দল। (আরে) এরা যাতে (লিপ্ত) রয়েছে, তাতো ধ্বংসোন্মুখ আর তারা যা কিছু করে, তা তাে বাতিল ও ভন্ডুল।" (সূরা আরাফ : ১৩৭-১৩৮)

বিশ্বনবীর রিসালাত যুগে এক সফরের সময় হুবহু এমনই মর্যাদাপূর্ণ ও অনুকরণশীল মনােভাবপ্রসূত একটি ঘটনা ঘটেছিল। আরবের কোন কোন গােত্রের ‘থাত আনওয়াত' নামে সজীব পল্লবীতে গাছের প্রতি বিশেষ ভক্তি-শ্রদ্ধা ছিল। তারা সে গাছে অস্ত্র ঝুলিয়ে রাখত, তার তলায় নৈবেদ্য পেশ করত, বলি দিত এবং সেখানে একদিন অবস্থান করত।

গাযওয়া-ই হুনায়ন (হুনায়ন যুদ্ধ)-এর সময় গাছতলার ঐ দৃশ্য দেখে কিছু নতুন মুসলমান (যাদের অন্তরে তখনও ঈমান সুদৃঢ় হয়নি) বলে ফেলল, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমাদের জন্য মনের ভক্তি প্রকাশ এবং অর্থ নিবেদনের একটি ক্ষেত্র ও কেন্দ্র নির্ধারণ করে দিন, যেমন এসব গােত্রের রয়েছে।

তাদের এ প্রস্তাব হযরত সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নবীসূলভ গায়রাত ও মার্যাদাবােধে কম্পন সৃষ্টি করল। তিনি গম্ভীর জবাব দিলেন, “তােমরা তাে হযরত মূসা-এর কওমের অনুরূপ ঘটনা ঘটালে। অবশ্যই বুঝা যায়, তােমরা তােমাদের পূর্ববর্তী জাতিসমূহের প্রতিটি পদক্ষেপ ও পদ্ধতির হুবহু অনুকরণ করবে।”

আলেমদের হতে হবে অনুরূপ তেজ ও গাম্ভীর্যতাসম্পন্ন এবং তাওহীদ ও সুন্নত বিষয়ে মর্যাদাবােধসম্পন্ন। আমাদের দীনি আরবি মাদরাসাগুলাে প্রতিষ্ঠিত করা হয়েছিল এ ধরনের ইস্পাতদৃঢ় তেজস্বী মনােভাবসম্পন্ন ও মর্যাদাবােধসমৃদ্ধ ব্যক্তিত্ব গড়ে তােলার লক্ষ্যেই। চিরদিন এ বৈশিষ্ট্য স্থায়ী ও অক্ষুন্ন রাখা এ প্রতিষ্ঠানসমূহের পবিত্র আমানত ও কর্তব্য।

- সাইয়্যেদ আবুল হাসান আলী নদভী রহ. -এর মূল নিবন্ধ থেকে অনুবাদ করেছেন মাওলানা মুহাম্মদ সাদেক হুসাইন।  - তারুণ্যের প্রহিৃদয়ের তপ্ত আহ্বান (বই)

আরএম/


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ