আওয়ার ইসলাম
কওমি মাদরাসায় শুরু হয়েছে নতুন বর্ষ। সকল কওমি মাদরাসায় শিক্ষাবর্ষ আরবি মাস অনুযায়ী নির্ধারিত হয়। সে হিসেবে প্রতি আরবি বছরের শাওয়াল মাস থেকে শাবান মাস পর্যন্ত কওমি মাদরাসার একটি শিক্ষাবর্ষ ধরা হয়। এখন চলছে কওমি মাদরাসার শিক্ষা বর্ষের প্রথম মাস “শাওয়াল মাস”।
কওমি মাদরাসায় চলছে ভর্তি কার্যক্রমের প্রাক প্রস্তুতী। প্রায় সব মাদরাসাতেয় ভর্তিযুদ্ধ শুরু হয় ৮ শাওয়াল থেকে। ভর্তিচ্ছু সকল ছাত্র/ছাত্রীরাও প্রস্তুত তার কাঙ্ক্ষিত মাদরাসায় নির্ধারিত শ্রেণি /বিভাগে ভর্তি হওয়ার জন্য। তবে সে ক্ষেত্রে অনেক ভর্তিচ্ছুরা নানান কারণে তিক্ত বিড়ম্বনার শিকার হন। আমরা এখানে নবাগত, অনুজ ও অগ্রজ শিক্ষার্থীদের জন্য সংক্ষিপ্তভাবে কিছু দিক নির্দেশনা উল্লেখ করছি।
দিক-নির্দেশনা-১
ভর্তির ক্ষেত্রে প্রথমত আপনাকে নির্বাচন করতে হবে আপনি কোন মাদরাসায় ভর্তি হবেন? কওমি মাদরাসা শিক্ষার মানদণ্ড ও লক্ষ্য এক হলেও শিক্ষাদানের পদ্ধতি ও তদারকির ভিন্নতার কারণে কওমি মাদরাসাসমূহের মধ্যে গ্রহণযোগ্যতা ও সুনামের উল্লেখযোগ্যতার বিচারে খানিকটা তফাত রয়েছে।
আমাদের মনে রাখতে হবে, প্রবাদ আছে- ধারেও কাটে, ভারেও কাটে। সুতরাং মাদরাসা নির্বাচনের আগে মাদরাসার ইলমি ও আমলী রক্ষনাবেক্ষনের যথেষ্টতা, মাদরাসার রেজাল্ট ও সুনামের পাল্লা, প্রতিষ্ঠাতা ও পরিচালনা পর্ষদের আন্তরিকতা ও মাদরাসার ভৌগলিক অবস্থান নির্ধারণ করা একজন ভালো মানের মুত্তাকি আলেম হওয়ার জন্য খুবই প্রয়োজন। আপনার ভর্তির জন্য সম্ভাব্য কাঙ্খিত মাদরাসা নির্ধারণের আগে উপরোক্ত বিষয়গুলো ভালোভাবে যাঁচাই করুন।
[এখানে উল্লেখ্য, বর্তমান যুগে হাফেজে কুরআন ব্যাতিরেকে কিতাব বিভাগে (গায়রে হাফেজদের) অধ্যয়ন করা একটি ভুল সিদ্ধান্ত । কেননা হাফেজে কুরআন হওয়া ব্যাতিত আলেম হলে যথেষ্ট অপূর্ণতার কারণে কর্মক্ষেত্রে অনেকাংশে দুর্বলতা ও জটিলতা দেখা দেয়।
ফলে কওমি মাদরাসায় পড়ার মূল উদ্দেশ্যও যথাযথতা পরিপূর্ণ হয়ে ওঠে না। তবে হাফেজ হওয়ার মত ধী ও স্মরণশক্তির দুর্বলতা থাকলে সরাসরি কিতাব বিভাগে অধ্যয়নের সুযোগ রয়েছে। তবে এ ক্ষেত্রে গায়রে হাফেজদের কিতাব বিভাগে ভর্তি হওয়ার পূর্র্বে পুরো কুরআন মাজিদের নাজেরা সুন্দর ও তারতীলের সাথে সহিহ শুদ্ধভাবে অধ্যয়নের পূর্ণ যোগ্যতা থাকতে হবে]
দিক-নির্দেশনা-২
আপনার ভর্তির জন্য কাঙ্কিত মাদরাসায় নির্ধারিত ক্লাশ/বিভাগে ভর্তি হওয়ার জন্য কোন কোন কিতাব/বিষয়ের উপর পরীক্ষা হবে তা আগেই জানার চেষ্টা করুন।
এবং ভর্তি হওয়ার জন্য নির্ধারিত পাশ নাম্বার কত তাও জেনে নিন। এবার ভর্তি পরীক্ষার আগে আপনি পরীক্ষার নির্ধারিত কিতাব/বিষয় অধ্যয়ন করুন। রিভাইস (মুতালায়া) দিন। যেন পরীক্ষকের নিকট আপনার পূর্ণ দক্ষতা প্রকাশ পায়।
দিক-নির্দেশনা-৩
ঢাকসহ দেশের প্রায় সকল নামিদামি মাদরাসায় ভর্তি ফরমের সাথে দুই কপি পাসপোর্ট সাইজের ছবি (কোথাও কোথাও ৪ কপি) বাধ্যতামূলক। ভর্তি পরীক্ষায় নিরিক্ষনের জন্য আপনাকে অবশ্যই শারীরিক পরিপাটি বজায় রাখা আবশ্যক। চুল ছোট (সামনে পিছনে সমান) করা, দাড়ি মুন্ডন, কাটা/ছাটা থেকে সম্পূর্ণ দূরে থাকা, হাত পায়ের নখ ছোট রাখা, টুপি-পোশাক পরিচ্ছেদ স্টাইলিশ না হওয়া বাঞ্চনীয়। এগুলো আগেই ঠিক ঠাক করে রাখুন।
দিক-নির্দেশনা-৪
কওমি মাদরাসাগুলোতে ভর্তির সময় এককালীন ভর্তি ফি, উন্নয়ন ফি ইত্যাদি দিতে হয়। তাই প্রায় সকল উল্লেখযোগ্য কওমি মাদরাসাগুলোতে ভর্তির সময় সবগুলো আর্থিক ফান্ড মিলে আপনাকে ২ হাজার থেকে ৩ হাজার টাকা পর্যন্ত ভর্তিকালীন জমা দিতে হতে পারে। তাই নিজ খরচ ছাড়াও ভর্তির জন্য উল্লেখ্য পরিমাণ টাকা সঙ্গে নিয়ে আসুন।
দিক-নির্দেশনা-৫
আপনার ভর্তির জন্য কাক্সিক্ষত মাদরাসার ভর্তির তারিখ জেনে যথা সময়েই মাদরাসায় যেয়ে ভর্তি ফরম তুলে ভর্তির প্রয়োজনীয় কার্যাদি পেরেশানমুক্তভাবে সেরে ফেলুন। এ ক্ষেত্রে পেরেশানী বা তাড়াহুড়ো করার প্রয়োজন নেই। এতে আপনার জন্য ভর্তি পরীক্ষায় কৃতকার্য হওয়া সমস্যাও হতে পারে। কেননা পেরেশান বা চিন্তা থেকেই মানসিক দুর্বলতা সৃষ্টি হয়।
[উল্লেখ্য, অনেক মাদরাসায় ভর্তির সময় ভর্তিচ্ছুর লিগ্যাল অভিভাবকের প্রয়োজন হয়, আবার কোথাও কোথাও এ বছর থেকে ভর্তির সময় লিগ্যাল অভিভাবক ও ভর্তিচ্ছুর ভর্তি ফরমের সাথে জাতীয় পরিচয় পত্রের আবশ্যিকতা থাকতে পারে। এ জন্য জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি সঙ্গে রাখুন।
দিক-নির্দেশনা-৬
ভর্তি পরীক্ষায় দুটি ধারায় নাম্বারের স্তর করা হয়। ১. ভর্তির উপযোগী হওয়ার জন্য নির্ধারিত নাম্বার। ২. মাদরাসা কর্তৃক বিনা মূল্যে খানা প্রাপ্তীর জন্য নির্ধারিত নাম্বার।
অনেক মাদরাসায় ভর্তির জন্য ভর্তি উপযোগী নাম্বার পেলেই ভর্তি হওয়া যায় কিন্তু অনেক নামিদামি মাদরাসা আছে, যেখানে ভর্তির উপযোগী নাম্বার পেলেও অপেক্ষা করতে হয় ভর্তি কার্যক্রমের শেষ পর্যন্ত।
ভর্তি কার্যক্রম শেষ হলে ভর্তি উপযোগীদের মাঝে কোটা অনুযায়ী শতকরা বেশি নাম্বার প্রাপ্তদের ভর্তি হওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়। সুতরাং এমন নীতির মাদরাসাগুলোতে ভর্তি হওয়ার জন্য আপনি পরীক্ষা দেওয়া ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ নাম্বার পাওয়ার চেষ্টা করুন।
উল্লেখ্য, মাদরাসা কর্তৃক বিনামূল্যে প্রদত্ব খানা শুধুমাত্র অতিম ও ভরণপোষণে অক্ষমদের ক্ষেত্রে গ্রহণ করা জায়েয। সুতরাং আপনার পরিবার সচ্ছল হলে কোনোভাবেই খানা প্রাপ্তীর নাম্বার পেলেও উক্ত বিনামূল্যের খানা গ্রহণ করা উচিত নয়। এতে যেমনিভাবে নাজায়েজ চর্চা হবে ঠিক তেমনি রুহানী ক্ষতির সমূহ সম্ভাবনার কথাও বুযুর্গদের লিখনিতে উল্লেখ আছে। সুতরাং এ ব্যপারে লোভে না পড়ে সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করুন।
দিক-নির্দেশনা-৭
অনেক শিক্ষার্থীই এক মাদরাসায় ভর্তি পরীক্ষা দিয়ে ফলাফলের জন্য অপেক্ষা করতে থাকেন। এর মধ্যে অন্য কোথায় ভর্তি পরীক্ষা দেন না। এটা ঠিক নয়। কারণ অধিকাংশ মাদরাসাতেই ৮ থেকে ১০/১২ শাওয়ালের মধ্যে ভর্তি পরীক্ষা শেষ হয়ে যায়।
এক্ষেত্রে একটাতে উত্তীর্ণ না হলে পরে আর অন্যটাতে যাওয়া সম্ভব হয় না। সে কারণে এই দুইদিন পছন্দের সব মাদরাসাতেই ভর্তি পরীক্ষা দিতে হবে এবং একটাতে পরীক্ষা দিয়ে বসে থাকা যাবে না। একদিনে দুই তিনটা মাদরাসায় ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিতে হবে।
দিক-নির্দেশনা-৮
ভর্তির পর আবাসিক ব্যবস্থাপনায় থাকার জন্য ১টি ছোট ট্রাঙ্ক, বিছানা+মশারি, প্রয়োজনীয় পাঞ্জাবী পাজামা, দুটি লুঙ্গি, গামছা, ব্রাশ+পেষ্ট, প্লেট, গ্লাস ইত্যাদি সঙ্গে আনতে হবে।
ঢাকা ও ঢাকার বাইরে উল্লেখযোগ্য মাদরাসার কিতাব বিভাগে ভর্তি হওয়ার জন্য কোন জামাত/শ্রেণিতে কি কি কিতাবের পরীক্ষা হয় তার বিবরণ।
(তবে, নিম্ন তালিকা ছাড়াও কোনো কোনো মাদরাসায় মৌখিক ও লিখিত কিতাব/বিষয়ের পার্থক্য/অতিরিক্ত বিষয় সংযোজন থাকতে পারে)
তাখাসসুস ফিল ফিক্হ (ইফতা)
তিরমিজি, বুখারি ১ম, হেদায়া/নূরুল আনোয়ার। তবে অধিকাংশ ক্ষেত্রে উন্মুক্ত পরীক্ষা হয়।
১। তাকমিল ফিল হাদিস
মেশকাত, হেদায়া, তাফসিরে বাইজাবি
২। মেশকাত
জালালাইন, হেদায়া
৩। জালালাইন
শরহে বেকায়া, নূরুল আনওয়ার, মাকামাতে হারিরি
৪। শরহে বেকায়া
কাফিয়া/শরহে জামি, কুদুরি, উসুলুস শাসী
৫। কাফিয়া/শরহে জামি
হেদায়াতুন নাহু, নূরুল ইজাহ, তাইসিরুল মানতেক
৬। হেদায়াতুন নাহু
নাহবেমির, শরহেমিয়াতে আমিল, ইলমুস সরফ/পাঞ্জেগাঞ্জ, মালাবুদ্ধা মিনহু
৭। নাহবেমির
মিযান মুনশায়েব, ইলমুস সরফ, এসো আরবি শিখি
৮। মিযান
তাইসিরুল মুবতাদি, তালিমুল ইসলাম অথবা উর্দু দুসরি
৯। তাইসির
উর্দু কায়দা, কুরআন শরীফ
-এটি