মুফতি সুহাইল আবদুল কাইয়ূম
রমজানে রোজা রেখে ইচ্ছাকৃত ভেঙ্গে ফেললে কাজা ও কাফফারা উভয়টি ওয়াজিব হয়। রোজার কাফফারা হলো, একটি গোলাম আজাদ করা। এটা সম্ভব না হলে ধারাবাহিকভাবে ষাটটি রোজা রাখা। মাঝে একদিনও যদি রোজা না রাখে বা রেখে ভেঙ্গে ফেলে তাহলে আবার নতুন করে ষাটটি রোজা রাখতে হবে।
মহিলাগণ মাসিক আসার কারণে যে কয়দিনের রোজা ভাঙ্গবে, এর কারণে তাদের নতুন করে আবার ৬০টি রোজা রাখতে হবে না। ধারাবাহিকভাবে ষাটটি রোজা রাখতে সক্ষম না হলে ৬০ জন মিসকীনকে দু‘বেলা পেট ভরে খানা খাওয়াবে বা প্রত্যেককে এক ফিতরা (যা পৌনে দুই সের =১ কেজি ৬৩২.৯৬ গ্রাম গম বা তার মূল্য অথবা ৩ কেজি ২৬৫.৯২ গ্রাম জব, খেজুর, পনির ও কিসমিস বা তার মূল্য) সদকা করে দিবে। (রদ্দুল মুহতার : ৩/৩৯০; জাওয়াহিরুল ফিকাহ : ১/৪২৭)।
উল্লেখ্য, যদি স্ত্রী সহবাস ছাড়া অন্য কোনো মাধ্যমে রোজা ভেঙ্গে ফেলে তাহলে এক রমজানের সকল রোজার জন্য একটি কাফফারা যথেষ্ট হবে। আর স্ত্রী সহবাসের মাধ্যমে রোজা ভাঙলে প্রত্যেক রোজার জন্য একটি করে কাফফারা দিতে হবে। (রদ্দুল মুহতার : ২/৪১৩)।
অসুস্থতার কারণে কাফফারার রোজার মধ্যে বিচ্ছিন্নতা ঘটলে আবার নতুন করে শুরু করতে হবে। এমনিভাবে মাঝে রমজান চলে আসলেও আবার নতুন করে শুরু করতে হবে। (ফাতাওয়া হিন্দিয়া : ১/৫১২)।
৬০টি রোজা রাখতে না পারলে করণীয়
৬০টি রোজা রাখতে না পারলে ৬০ জন মিসকীনকে দু‘বেলা পেট ভরে খাওয়াবে। একদিনে দু‘বেলা খাওয়াতে পারবে আবার দু‘দিনেও দু‘বেলা খাওয়াতে পারবে। তবে শর্ত হলো, একই ব্যক্তিকে দু‘বেলা খাওয়াতে হবে। দুই ব্যক্তিকে দু‘বেলা খাওয়ালে কাফফারা আদায় হবে না। (ফাতাওয়া হিন্দিয়া : ১/৫১৪)।
মিসকীন খাওয়ানোর পদ্ধতি : একই ব্যক্তিকে ৬০ দিন দু‘বেলা খাওয়ানো হোক বা একই দিনে ৬০ জনকে খাওয়ানো হোক অথবা ৬০ জনকে ৬০ দিনে খাওয়ানো হোক, সর্বাবস্থায় কাফফারা আদায় হবে। (আলবাহরুর রায়িক : ৪/১০৯)।
ক্ষুধার্ত মিসকীনকে খাওয়াতে হবে : যাদেরকে খানা খাওয়ানো হবে তাদের ক্ষুধার্ত থাকা শর্ত। পরিতৃপ্তকে খাওয়ালে কাফফারা আদায় হবে না। (রদ্দুল মুহতার : ৩/৪৭৯)।
নাবালিগ মিসকীনকে খাওয়ালে কাফফারা আদায় হবে না : ছোট বাচ্চা যে বালিগের বয়সের কাছাকাছিও পৌঁছায়নি, তাকে খাবার খাওয়ানোর দ্বারা কাফফারা আদায় হবে না। তবে নগদ অর্থের মালিক বানিয়ে দিলে আদায় হবে। (আলবাহরুর রায়িক : ৪/১০৯)।
খানা খাওয়ানোর ক্ষেত্রে ধারাবাহিক ৬০দিন হওয়া শর্ত নয় : খানা খাওয়ানোর ক্ষেত্রে ৬০দিন ধারাবাহিক হওয়া শর্ত নয়। বিচ্ছিন্নভাবে ভিন্ন ভিন্ন দিনে খাওয়ানো যাবে। (ফাতাওয়া হিন্দিয়া : ১/৫১৪)।
নগদ অর্থের মাধ্যমে কাফফারা আদায় : নগদ অর্থের মাধ্যমে কাফফারা আদায় করার ক্ষেত্রে একজনকে একদিনে শুধু দু‘বেলা খাবারের টাকা দেয়া যাবে। বেশি দিলেও এক দিনের বলেই গন্য হবে। অতএব একই ব্যক্তিকে দিতে চাইলে পৃথকভাবে ৬০ দিনে দিবে অথবা একদিনে ৬০ জনকে দু‘বেলা খাবারের টাকা দিবে। (ফাতাওয়া হিন্দিয়া : ১/৫১৩)।
কাফফারার টাকা কাকে দেয়া যাবে : কাফফারার টাকা গরীবদের মালিক বানিয়ে দেওয়া জরুরি। মসজিদ, মাদরাসা, হাসপাতাল বা অন্য কোনো প্রতিষ্ঠানে দিলে কাফফারা আদায় হবে না। (আলবাহরুর রায়িক : ৪/১০৯)।
কাজা ও কাফফারা আদায় না করে তওবা করা যথেষ্ট নয় : রোজার কাজা ও কাফফারা ওয়াজিব হলে কাজা ও কাফফারাই আদায় করতে হবে। কাজা ও কাফফারা আদায় না করে শুধু তওবা করা যথেষ্ট নয়। (আলবাহরুর রায়িক : ২/২৭৮)।
নায়েবে মুফতি, ইসলামিক ফিকাহ একাডেমী, ঢাকা।
এমডব্লিউ/