আওয়ার ইসলাম: যুক্তরাষ্ট্রে এক বাড়ির মালিক তার ভাড়াটিয়াকে মুসলিম বাবা আর সন্তানের কাছে রেস্টুরেন্টের জন্য জায়গা ইজারা দিতে নিষেধ করেছিলেন৷ এ কারণে ৬,৭৫,০০০ ডলার (৫ কোটি ৪০ লাখ টাকা) দিয়ে আপোস করতে হবে তাকে৷
যুক্তরাষ্ট্রের ক্যাপিটাল হিলের পাশের শহর ডেনভারে ২০১৬ সালে একটি বাড়ি ভাড়া নেন ক্রেইগ ক্যাল্ডওয়েল৷ সেখানে তিনি একটি ফ্রাইড চিকেনের রেস্টুরেন্ট খোলেন৷ ২০১৭ সালের শেষ দিকে এসে সেটি বন্ধ করে দেয়ার সিদ্ধান্ত নেন ক্যাল্ডওয়েল৷
কিন্তু বাড়ির মালিকের সাথে চুক্তি অনুযায়ী তাঁকে হয় নতুন ভাড়াটিয়া খুঁজে দিতে হবে, নয়তো ৫ বছর ভাড়া পরিশোধ করে যেতে হবে৷ ক্যাল্ডওয়েল তাই নামেন ভাড়াটিয়ার সন্ধানে৷
পেয়ে যান রাশাদ খান ও তাঁর বাবা জুনেদকে৷ তাঁরা সেখানে বাংলা ও ভারতীয় খাবারের দ্বিতীয় একটি রেস্টুরেন্ট খোলার জন্য আগ্রহী হন৷
কিন্তু সমস্যা বাধলো ক্যাল্ডওয়েল যখন বাড়ির মালিক ক্যাটিনা গ্যাচিসকে তাঁদের পরিচয় দিলেন৷ মুসলিম শোনার পর তিনি ভাড়ার চুক্তিতে অনুমোদন দেয়ার বিষয়ে আর কোনো আগ্রহ দেখালেন না৷
৭১ বছর বয়সি ক্যাল্ডওয়েল বলেন, ‘বিষয়টি আমি কোনোভাবেই বিশ্বাস করতে পারছিলাম না৷ আমাকে কেউ বিশ্বাস করবে, সেটাও মনে হচ্ছিল না৷’
এক সপ্তাহ পর ক্যাল্ডওয়েল আবারও গেলেন তাঁর বাড়ির মালিকের কাছে৷ এবার তিনি কথোপকথন রেকর্ড করেন মোবাইলের অ্যাপ ব্যবহার করে৷
ক্যাটিনা এ সময় তাঁকে বলেন, ‘আমি অ্যামেরিকান চাই, যে তোমার আর আমার মতো ভাল৷’ ক্যাল্ডওয়েল পরে আবার তার সাথে দেখা করতে গেলে তিনি বলেন, ‘তারা মধ্যপ্রাচ্য থেকে সব মুসলিম ধরে নিয়ে আসছে এখানে৷ আর সেকারণে আমি নানা সমস্যায় পড়ছি৷’
পরবর্তীতে নিজের আইনজীবীর পরামর্শে বিষয়টি নিয়ে আদালতে যান ক্যাল্ডওয়েল৷ সেখানে ক্যাটিনা গ্যাচিসও তার এই কথোপকথনের কথা স্বীকার করেন৷
গ্যাচিসের কথায় অবশ্য খুব একটা আশ্চর্য হননি রাশাদের বাবা৷ কিন্তু নাম শুনেই তাঁর গোটা জীবনকে পরিমাপ করে ফেলার বিষয়টিকে হালকাভাবে নিতে পারেননি রাশাদ৷
তিনি বলেন, ‘আমার ভীষণ রাগ হয়েছিল৷ মর্মাহত হয়েছিলাম৷ ব্যাপারটি নিয়ে আমার নিজের মধ্যেই সন্দেহ তৈরি হয়৷ আরো কেউ কি এভাবে চিন্তা করে, নাকি এই নারীই শুধু...?’
আদালতে বিষয়টি গড়ানোর পর স্থানীয় গণমাধ্যমেও এই খবর আসে৷ ঐ বাড়ির মালিকের ব্যবসা প্রত্যাখ্যানের হিড়িক ওঠে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে৷
এপ্রিলে আদালতে দুই পক্ষ একটি সমঝোতায় পৌঁছায়৷ সে অনুযায়ী বাড়ির মালিককে তার আচরণের জন্য ৬,৭৫,০০০ ডলার দিতে হবে বাদীদেরকে৷ যা বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ৫ কোটি ৪০ লক্ষ টাকা।
এক বছর মামলা চলার পর এটিকে বড় ধরনের স্বস্তি হিসেবে উল্লেখ করেছেন রাশাদ৷ বলেন, ‘আমি আর আমার বাবা শুধু দেখতে চেয়েছিলাম যে, বিচার বলে কিছু আছে, যার কারণে এই নারী এমনটি করতে পারেন না৷’
১১ বছর বয়সে যুক্তরাষ্ট্রে আসেন রাশাদ৷ বাবার সাথে ব্যবসায় নামার আগে কলোরাডো বোল্ডার বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তথ্য প্রযুক্তিতে ডিগ্রি অর্জন করেন৷
বাংলাদেশ আর যুক্তরাজ্যের সাথেও তাঁর পরিবারিক সংযোগ রয়েছে বলে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা এপি৷
-এমডব্লিউ