আওয়ার ইসলাম: শ্রমিকের ন্যায্য অধিকার ও মর্যাদা প্রতিষ্ঠায় ইসলামী শ্রমনীতি বাস্তবায়নসহ ১৭ দফা দাবী আদায়ে আগামী ১ মে বুধবার দেশব্যাপী শ্রমিক সমাবেশ ও র্যালী করবে ইসলামী শ্রমিক আন্দোলন। ঢাকার বায়তুল মোকাররমের পশ্চিম গেটে ইসলামী শ্রমিক আন্দোলন ঢাকা মহানগর শাখার উদ্যোগে শ্রমিক সমাবেশ ও র্যালী অনুষ্ঠিত হবে।
দলীয় সূত্রে জানা যায়, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের সিনিয়র নায়েবে আমীর শায়খে চরমোনাই মুফতী সৈয়দ মোহাম্মদ ফয়জুল করীম এতে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখবেন। এছাড়া গাজীপুরে শ্রমিক সমাবেশে প্রধান অতিথি থাকবেন ইসলামী শ্রমিক আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সভাপতি অধ্যাপক আশরাফ আলী আকন, চট্টগ্রামে প্রধান অতিথি থাকবেন সেক্রেটারী জেনারেল হাফেজ মাওলানা সিদ্দিকুর রহমান, গোপালগঞ্জে প্রধান অতিথি থাকবেন কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি প্রকৌশলী গোলাম মোস্তফা।
নোয়াখালীতে প্রধান অতিথি থাকবেন কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি ক্যাপ্টেন অবঃ ইব্রাহিম, লক্ষীপুরে প্রধান অতিথি থাকবেন জয়েন্ট সেক্রেটারী জেনারেল শহিদুল ইসলাম কবির, হবিগঞ্জ এ প্রধান অতিথি থাকবেন এ্যাসিস্টান সেক্রেটারী জেনারেল হাসান ইমাম মুন্সিসহ দেশের প্রত্যেক জেলায় শ্রমিক সমাবেশ ও র্যালী করবে ইসলামী শ্রমিক আন্দোলনের সংশ্লিষ্ট জেলা/মহানগর ও উপজেলা শাখা।
মে দিবস উপলক্ষে ইসলামী শ্রমিক আন্দোলন ‘মে দিবসের ডাক’ শিরোনামে একটি পোষ্ঠার প্রকাশ করেছে। যাতে ১৭ দফা দাবীকে কৃষক-শ্রমিকের মুক্তির বার্তা হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, মে দিবসের হৃদয়বিদারক ঘটনা পুঁজিবাদের একটি বিভৎস চেহারা। তাই শ্রমিকের সার্বিক মুক্তির লক্ষ্যে পুঁজিবাদসহ সকল মানবরচিত অভিশপ্ত মতবাদসমূহের বিরুদ্ধে সোচ্চার হউন।
১৭ দফা দাবি সমূহ হলো- ১.সভ্যতার কারিগর, উৎপাদন ও উন্নয়নের কর্ণধার, সুখী-সমৃদ্ধ কল্যাণরাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার অগ্রসৈনিক ও মানবতার কল্যাণে নিবেদিতপ্রাণ কৃষক শ্রমিকগণকে সম্মানিত নাগরিক হিসেবে রাষ্ট্রীয়ভাবে স্বীকৃতি দিতে হবে। তাদের প্রকৃত মর্যাদা ও ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে।
২.আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের লক্ষ্যে সকল শ্রমিককে আইডি কার্ড প্রদান করে রেশনিং ব্যবস্থা চালু করতে হবে। তাদের পরিবারের শিক্ষা, চিকিৎসা ও পরিবহন ব্যয় অর্ধেক করতে হবে। ৩. ব্যাপক কর্মসংস্থান সৃষ্টি করে বেকারত্বের অবসান, অর্থনৈতিক উন্নয়নের স্বার্থে বিদেশী বিনিয়োগের মাধ্যমে নতুন নতুন কলকারখানা স্থাপন, বন্ধ কল-কারখানা চালু ও রুগ্নশিল্প কারখানাগুলোতে উৎপাদনের স্বাভাবিক পরিবেশ সৃষ্টি করে সাপ্তাহিক এবং মাসিক বেতনধারী শ্রমিকদের নিয়মিত বেতন ও বোনাস পরিশোধ করতে হবে।
৪. দ্রব্যমূল্যের আলোকে মানবিক দিক বিবেচনা করে সকল শ্রমিকের সর্বনিম্ম মজুরি ১৬,০০০/- (ষোল হাজার) টাকা নির্ধারণ করতে হবে। এছাড়া মজুরীর সাথে সম্মানজনক লভ্যাংশ দিতে হবে এবং শ্রমিকদের সর্বজনীন পেনশন স্কিমের’ আওতায় আনতে হবে। ৫. কথায় কথায় শ্রমিক ছাঁটাই শ্রমিকের ওপর কঠিন জুলুম। তাই যৌক্তিক কারণ ও ছাঁটাইয়ের শর্ত পূরণ ছাড়া শ্রমিক ছাঁটাই করা যাবে না এবং শ্রমিকের সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।
৬. ব্যাপক উৎপাদনের স্বার্থে ইসলামী শ্রমনীতি বাস্তবায়ন করতে হবে। রাষ্ট্র ও শিল্প কারখানার সকল সেক্টর থেকে অসৎ ও অযোগ্য নেতৃত্ব অপসারণ করে সৎ ও যোগ্য নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠা করতে হবে। ৭. শ্রমিকদের ওপর কোনো ধরনের শোষন-নিপীড়ন, নির্যাতন ও অধিকার বঞ্চিত করা যাবে না। ৮. মানবিক কারণে পায়েচালিত রিকশা, ভ্যান ও ঠেলা গাড়ির লাইসেন্স ফি মওকুফ করতে হবে এবং টোকেনপ্রথা বাতিল করতে হবে। ভারি ও হালকা যানবাহনসহ সকল ধরনের ড্রাইভারদের লাইসেন্স ফি অর্ধেক করতে হবে।
৯. হকার্স পুনর্বাসন ছাড়া উচ্ছেদ করা অমানবিক; তাই জনসাধারণের চলাচলের বাধা সৃষ্টি না করে ফুটপাতের এক তৃতীয়াংশ জায়গা হকার বসার ব্যবস্থা করতে হবে। ১০. অটো ইজি বাইক ও সি.এন.জি বন্ধের পাঁয়তারা বন্ধ করতে হবে। এ জাতীয় যানবাহন চলাচলের জন্য আলাদা লেন করার ব্যবস্থা করতে হবে। ১১. মৎস্য শ্রমিকদের জীবনের নিরাপত্তার স্বার্থে সামুদ্রিক মাছ ধরার ট্রলারে অস্ত্রের লাইসেন্স দিতে হবে এবং সামুদ্রিক জেলেগণ যাতে অগ্রিম আবহাওয়ার পূর্বাভাস জেনে নিরাপদ আশ্রয় নিতে পারে সে লক্ষে নেটওয়ার্ক ব্যবস্থাজোরদার করতে হবে।
১২. ভ্রাম্যমান হকারদের বাস, ট্রেন এবং লঞ্চে ওঠে পণ্য বিক্রির সুযোগ দিতে হবে এবং তাদের কোন ধরনের হয়রানি করা যাবে না। ১৩. হোটেল রেস্তোরাঁ শ্রমিকদের স্বাস্থ্যকর পরিবেশে কাজ ও থাকার নিশ্চয়তা প্রদান করতে হবে। ডিউটি কালীন সময় ভাল পোষাক ও মান সম্মত খাবারের ব্যবস্থা করতে হবে। মাহে রমজান মাসকে কেন্দ্র করে শ্রমিক ছাঁটাই করা যাবে না এবং দুই ঈদে দুটি ফুল বোনাস প্রদান করতে হবে।
১৪. শ্রমিকদের উদ্বুদ্ধ করে কাম্যমানের কৃষি পণ্য উৎপাদন এবং কৃষকের উৎপাদন ব্যয় পুষিয়ে নেয়ার স্বার্থে সার, সেচ এবং বীজ বিনামূল্যে প্রদান করে বিনা সুদে প্রয়োজনীয় ঋণ প্রদান করতে হবে। প্রাকৃতিক দুর্যোগ, বীজ ও কীটনাশকের ভেজালের কারণে ফসল ক্ষতিগ্রস্থ হলে কৃষকদের ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। ১৫. বন্ধ হওয়া তাঁত শিল্প সচল করার স্বার্থে সূতা ও রংয়ের মূল্য কমাতে হবে। উন্নত তাত ক্রয়ের জন্য বিনা সুদে ঋণ প্রদান এবং বিদেশে তাঁত বস্ত্র রফতানির ব্যবস্থা করে তাঁত শ্রমিকদের বেতন বোনাস সবধরনের সুযোগ-সুবিধা প্রদান করতে হবে।
১৬. কুঠির শিল্পের মানোন্নয়নের জন্য আধুনিক যন্ত্রপাতি সরবরাহ ও কাঁচা মাল সহজ লভ্য করে কুঠির শিল্পের উৎপাদিত পণ্য বিদেশে রফতানির ব্যবস্থা করতে হবে। কুঠির শিল্পের শ্রমিকদের বেতন-বোনাস নিয়মিত পরিশোধ করতে হবে। ১৭. নদী বন্দর, সমুদ্র বন্দর, স্থল বন্দর ও বিমানবন্দরসহ সকল বন্দরে অশুভ চক্রের অবৈধ হস্তক্ষেপ ও চাঁদাবাজীসহ সকল প্রকার শ্রমিক হয়রানি বন্ধ করতে হবে এবং সকল বন্দরশ্রমিকের ন্যায্য প্রাপ্য নিশ্চিত করতে হবে।
-এএ