আওয়ার ইসলাম: আজ ১৭ এপ্রিল, ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবস। ১৯৭১ সালের এই দিনে তত্কালীন কুষ্টিয়া জেলার মেহেরপুর মহকুমার বৈদ্যনাথতলার আম্রকাননে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের প্রথম মন্ত্রিসভা শপথ গ্রহণ করে। ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। এর তিন সপ্তাহ পর বৈদ্যনাথতলা নামে পরিচিত ওই বিশাল আমবাগান এলাকাকেই পরে ‘মুজিবনগর’ নাম দিয়ে বাংলাদেশের অস্থায়ী রাজধানী ঘোষণা করা হয়েছিল।
বাংলাদেশকে পাক হানাদার বাহিনীর দখলমুক্ত করতে মুজিবনগর সরকারের নেতৃত্বেই পরিচালিত হয় সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধ। অস্থায়ী সরকারের সফল নেতৃত্বে ৯ মাসের সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বিজয়ের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ স্বাধীনতা অর্জন করে।
একাত্তরের ১৭ এপ্রিলের সেই মাহেন্দ্রক্ষণে তাজউদ্দীন আহমদ ও সৈয়দ নজরুল ইসলাম অন্য নেতৃবৃন্দকে সাথে নিয়ে সকাল ৯টার দিকে বৈদ্যনাথতলায় পৌঁছান। গ্রামবাসীর পাশাপাশি দেশি-বিদেশি শতাধিক সাংবাদিক এবং ভারতীয় নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরাও আসেন।
বহু প্রতীক্ষিত শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান শুরু হয় বেলা ১১টায়। মেজর আবু উসমান চৌধুরীর পৌঁছতে বিলম্ব হওয়ায় ক্যাপ্টেন মাহবুব উদ্দীন আহমেদ ইপিআর আনসারের একটি ছোট্ট দল নিয়ে নেতাদেরকে অভিবাদন জানান। অভিবাদন গ্রহণের পর স্থানীয় শিল্পীদের জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশনের মধ্য দিয়ে সৈয়দ নজরুল ইসলাম বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে রাষ্ট্রপতি ও মুক্তিবাহিনীর সর্বাধিনায়ক, সৈয়দ নজরুল ইসলামকে উপ-রাষ্ট্রপতি, তাজউদ্দিন আহমদকে প্রধানমন্ত্রী এবং ক্যাপ্টেন এম মনসুর আলী ও এএইচএম কামারুজ্জামানকে মন্ত্রিসভার সদস্য করে স্বাধীন বাংলা অস্থায়ী বিপ্লবী সরকার গঠন করা হয়।
পাকিস্তানের কারাগারে বন্দী বঙ্গবন্ধুর অনুপস্থিতিতে উপ-রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলামকে করা হয় অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি। এদিন স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র পাঠ ও অনুমোদন হয়। আওয়ামী লীগের চিফ হুইপ দিনাজপুরের সংসদ সদস্য অধ্যাপক মো. ইউসুফ আলী ঘোষণাপত্র পাঠ করেন এবং অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলামসহ মন্ত্রিসভার সদস্যদের শপথ বাক্য পাঠ করান।
ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবস উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী দিয়েছেন। বাণীতে রাষ্ট্রপতি বলেছেন, তরুণ প্রজন্ম মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস জানার পাশাপাশি দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে জাতি গঠনমূলক কাজে অবদান রাখবে। তিনি বলেন, ‘স্বাধীনতা বাঙালি জাতির শ্রেষ্ঠ অর্জন। স্বাধীনতা সংগ্রামের গৌরবময় ইতিহাস তরুণ প্রজন্মের কাছে সঠিকভাবে তুলে ধরা আমাদের নৈতিক দায়িত্ব।’
বাণীতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবসের প্রেরণায় উদ্বুদ্ধ হয়ে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়তে দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
আরএম/