মাওলানা শহিদুল ইসলাম ফারুকী । ।
একের পর এক চারিদিক থেকে ভয়াবহ অশনি সংকেত শোনা যাচ্ছে! আমাদের আস্থা, বিশ্বাস ও বেঁচে থাকার জায়গাগুলো ধ্বংস করার জন্য পরিকল্পিত ষড়যন্ত্র হচ্ছে, না আল্লাহর গজব নেমেছে, না রাজার পাপে রাজ্য জ্বলছে তাও বোঝা যাচ্ছে না।
একদিকে মাহফিল ও বক্তাদের নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা, অপরদিকে একের পর এক নজীরবিহীনভাবে মসজিদ মাদরাসা থেকে হত্যা, ধর্ষণ ও যৌন হয়রানির অশ্রুভেজা সংবাদ, ঠিক তখনই হাইয়াতুল উলইয়া ও বেফাকের প্রশ্নফাঁস ও পরীক্ষা স্থগিত।
এর মধ্যে আবার আমেরিকার সতর্কবার্তা জারি। সব মিলিয়ে খুব ভয়ই লাগছে। পরিস্থিতি ভয়াবহতার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। আমাদের শত্রুরা ওঁৎ পেতে বসে আছে।
কওমী মাদরাসার ১৫৩ বছরের ইতিহাসে নিজেদের হাতে ইমেজ ধ্বংসের এমন খেলা কখনো হয়নি। দীনি মদরাসাগুলোকে ধ্বংস করা করার জন্য ভেতরে ইঁদুর ঢুকে পড়েছে। তারপর আবার ঘরের শত্রু বিভিষণ হয়ে দেখা দিয়েছে। নিজেরাই নিজেদের ইমেজ ধ্বংস করছি। বাইরের শত্রু এতদিন বাইরেই ছিলো। এখন তারা ভেতরে ঢোকার চেষ্টা শুরু করেছে।
আমাদের ঘরের শত্রুরা তাদেরকে ভেতরে আনার চেষ্টা করছে। হামলার পথ সুগম করছে। বুঝে না বুঝে অহেতুক প্রচার প্রচারনার মাধ্যমে আমরা নিজেরাই নিজেদেরকে ক্ষতির মুখে ঠেলে দিচ্ছি
মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ যখন কোনো দেশ দখল করতে চায় তখন তারা আগেই হুটহাট করে হামলা চালায় না, বরং একটা সময় পর্যন্ত ক্রমাগত মিথ্যা ও নেগেটিভ প্রচার প্রচারনার মাধ্যমে তাদের সম্পর্কে বিশ্ববাসীর সামনে ভুল ধারনা দিতে থাকে। বিশ্ববাসীর সামনে তাদেরকে ভয়ানক আকারে উপস্থাপন করে আগ্রাসনের পরিবেশ সৃষ্টি করে।
এরপর সেদেশে তাদেরকে স্বাগত জানানো জন্য একটি দালালগোষ্ঠী সৃষ্টি করে। যারা তাদের আগমনের পথ সুগম করে। যখন দেখে এবার হামলা চালালে সহজেই বিজয়ী হওয়া সম্ভব, তখন দালালগোষ্ঠীর সহায়তায় দেশটি দখল করে নেয়।
আজ আমাদের শত্রুরা আমাদের মাদরাসাগুলো সরাসরি দখল করতে চায় না। মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের মতো তারা আগে একটি দালালগোষ্ঠী সৃষ্টি করছে। যারা ক্রমাগত প্রচার চালিয়ে আমাদের আস্থা ও বিশ্বাসের জায়গাগুলো ধ্বংস করছে। সেই দালালগোষ্ঠী ঘরের শত্রু বিভিষণ হয়ে দেখা দিয়েছে।
তারা ভেতরের নেগেটিভ খবরগুলো ক্রমাগত প্রচার দিয়ে বাইরের শত্রুকে স্বাগতম জানানোর পথ সুগম করছে। আমাদের শত্রুরা বন্ধুবেশে আমাদের সাথে মিশে গেছে। অনেকে না বুঝেই এসব উস্কানিমূলক প্রচার প্রচারনায় জড়িয়ে পড়ছে। যা ভয়াবহ বিপদ ডেকে আনতে পারে।
আমরা আমাদের খবরগুলো প্রচার করে উল্লসিত হচ্ছি। উল্লসিত হওয়ার কিছু নেই। কান্ডারী হুঁশিয়ার! সতর্কতার সাথে চোখ কান খোলা রেখে পথ চলতে হবে। খবর প্রচারের আগে চিন্তা করতে হবে জাতিগতভাবে আমরা ক্ষতিগ্রস্ত হব কিনা।
আমার কোনো ভুল পদক্ষেপে যেনো জাতির উপর বিপর্যয় নেমে না আসে। যাচাই বাছাইহীন হুটহাট সংবাদ প্রকাশের ক্ষেত্রে আমাদের গণমাধ্যম ও ফেসবুকে আরো সতর্ক হতে হবে।
আমাদের আস্থা ও বিশ্বাসের জায়গাগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয় এমন নিউজ ও সংবাদ প্রকাশ থেকে বিরত থাকতে হবে। বড়দের প্রতি আস্থা ও বিশ্বাস ধরে রাখতে হবে।
যারা বেফাঁস বয়ান দেয়া, যৌন হয়রানি করা, হত্যা করা ও প্রশ্নফাঁস করার মতো ভয়াবহ ও জাতি বিনাশী কর্মকান্ডের মাধ্যমে জাতির ইমেজ নষ্ট করছে, আলেম সমাজের মুখে কালিমা লেপন করছে এবং আমাদের আস্থা, বিশ্বাস ও বেঁচে থাকার জায়গাগুলো ধ্বংস করছে, তাদেরকে চিহ্নিত করার সময় এসেছে।
তারা এগুলো ইচ্ছায় করছে, না অনিচ্ছায় করছে, না শত্রুর ক্রীড়নক হয়ে করছে তা সঠিক তদন্তের মাধ্যমে বের করে কঠিন পদক্ষেপ নিতে হবে। শুদ্ধি অভিযান চালাতে হবে।
জাতীয় জীবনের এই ক্রান্তিলগ্নে বড়দেরকে যে কোনো সিদ্ধান্ত নিতে হবে ঠান্ডা মাথায় পরিপক্কতার সাথে এবং সময় নিয়ে। কোনো হুটহাট ও ভুল সিদ্ধান্তে যেনো বিপর্যয় নেমে না আসে সেদিকে সতর্ক লক্ষ্য রাখতে হবে। চারিদিকে বিপর্যয়ের অশনি সংকেত শোনা যাচ্ছে। মাদরাসা ও দীনি সংগঠনগুলোতে ব্যাপকভাবে তরবিয়তি প্রোগ্রাম চালু করতে হবে।
ছাত্র, শিক্ষক ও কর্মীদেরকে সময়ের ভয়াবহতা বুঝাতে হবে। তারা যেনো শত্রুর ফাঁদে পা না দেয়, নিজেদের মধ্যে দলগত ও গোষ্ঠীগত বিভেদ না বাড়ায়, এক দল বা এক মাদরাসা অন্য দল বা মাদরাসার বিরুদ্ধাচারন করতে গিয়ে জাতির ক্ষতি করে না ফেলে এবং গণমাধ্যম ও সামাজিক মাধ্যম ব্যবহারে সংযত ও সতর্ক হয়—এসব বিষয় তরবিয়তি প্রোগ্রামে তুলে ধরতে হবে। মনে রাখতে হবে, বিপর্যয় নেমে আসলে কেউই রক্ষা পাব না।
লেখক : পরিচালক, শায়খ আবুল হাসান আলী নদভী ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার।
আরএম/