মুহাম্মদ ছফিউল্লাহ হাশেমী
একটানা পাঁচদিন অগ্নিদগ্ধের অসহ্য যন্ত্রণা ভোগ করে অবশেষে চলে গেলেন নুসরাত জাহান রাফি । বুধবার রাত সাড়ে ৯টার সময় তার মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসকরা।
গত ২৭ মার্চ ফেনীর সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদরাসার অধ্যক্ষ সিরাজ-উদ-দৌলা ওই শিক্ষার্থীকে নিজ কক্ষে ডেকে নিয়ে যৌন হয়রানি করেন বলে অভিযোগ ওঠে। এ ঘটনায় মেয়েটির মা বাদী হয়ে মামলা করেন। পরে শনিবার (৬ এপ্রিল) ওই শিক্ষার্থী মাদরাসা পরীক্ষা কেন্দ্রে পরীক্ষা দিতে গেলে অধ্যক্ষের অনুসারী কয়েকজন দুর্বৃত্ত হত্যার উদ্দেশ্যে তার শরীরে পেট্রোল ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয়।
এ ঘটনার নিন্দা জানানোর কোন ভাষা নেই। মানুষ যে এত নিষ্ঠুর হতে পারে তা কোন সভ্য মানব সমাজে কল্পনাও করা যায় না। এ ঘটনার সাথে জড়িত ব্যক্তিরা মানুষ নামের কলংক।
প্রতিদিনই বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে নারী হত্যা, নারী ধর্ষণ, নারী নির্যাতন ও নারীদের পুড়িয়ে হত্যা এবং হত্যার অপচেষ্টার খবর বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত হচ্ছে।গত কয়েক সপ্তাহ ধরে পত্রিকার পাতা কিংবা ফেসবুক খুললেই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে যৌন নিপীড়নের যে চিত্র দেখতে পাচ্ছি তা কেবল হতাশাজনকই নয়, আতঙ্কেরও জন্ম দিচ্ছে। এসব ঘটনা প্রমাণ করে দেশে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির কী সাংঘাতিক অবনতি ঘটেছে। এক শ্রেণির মানুষের মধ্যে নীতি-নৈতিকতা ও ধর্মীয় মূল্যবোধের চরম অবনতি ঘটার কারণেই সমাজে নৈরাজ্য চলছে। দেশে আইনের শাসন ও ন্যায় বিচার না থাকার কারণেই সমাজে অরাজকতা চলছে।
নুসরাত জাহান রাফিকে পুড়িয়ে হত্যার ঘটনার সাথে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে দেশবাসী ঐক্যবদ্ধ। এ ঘটনার সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্ত করে ঐ ঘটনার সাথে জড়িত ব্যক্তিদের গ্রেফতার করে আইনের আওতায় এনে কঠোর শাস্তি প্রদান করার দাবি করছি। যাতে আর কোনো নুসরাতকে এমন পৈশাচিক যৌননিগ্রহ ও হত্যাকাণ্ডের শিকার হতে না হয় এবং প্রতিটি অভিভাবককে যাতে সন্তানদের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগজনক সময় কাটাতে না হয়। আইনের ফাঁকফোকর গলে যাতে এই জঘন্য মানবতাবিরোধী অপরাধীরা সামান্যতমও অনুকম্পা না পায়, সেটা রাষ্ট্রকে নিশ্চিত করতে হবে। মহান আল্লাহর কাছে দোয়া করছি যেন নুসরাতকে জান্নাতের সর্বোচ্চ মর্যাদা দান করেন।
লেখক: প্রাবন্ধিক ও কলেজ শিক্ষক
-এএ