আলেমা আরিফা তাবাসসুম সাকী
স্রেফ একঝাঁক পুরুষে একটি পরিবার, সমাজ বা জাতির নাম নয়। নারী ও পুরুষের সমন্বয়কেই একটি পরিবার সমাজ বা জাতি বলা হয়।
শিক্ষা ব্যতীত একটি আদর্শ সমাজ যেমন অসম্ভব, তেমনি শিক্ষিত মা ব্যতীত শিক্ষিত জাতি গঠন করাও অসম্ভব। কিন্তু কোন শিক্ষা? কোন শিক্ষায় সে নিজেকে একজন আদর্শ মা হিসেবে তৈরি করতে পারবে? কোন শিক্ষায় সে সফলতার স্বর্ণশিখরে আরোহন করতে পারবে?
এ সফলতার স্বর্ণদ্বার হল, ওই শিক্ষা যা খালেক ও মাখলুকের মধ্যেকার দূরত্ব ঘুচিয়ে মাখলুককে খালেকের নিকটবর্তী করে দেয়। আর এটা সম্ভব কেবলমাত্র দীনি শিক্ষার মাধ্যমেই।
জাতির মুক্তির দিশারী রাসূলুল্লাহ সা. পুরুষের পাশাপাশি নারীদের ঈমান আমলের সঙ্গে জ্ঞান অর্জনের তাগিদ দিয়েছেন। শিক্ষাকে পুরুষের জন্য যেরূপ আবশ্যক করেছেন তেমনিভাবে নারীর জন্যও আবশ্যক করেছেন।
গভীর ইলম অর্জনে পুরুষ সাহাবীগণ যেমনিভাবে সক্রিয় ছিলেন তেমনিভাবে মহিলা সাহাবিগণও নিঃসঙ্কোচে মহানবী সা. থেকে বিভিন্ন বিষয়ের ফজিলত ও মাসআলার জ্ঞান অর্জন করেছেন।
ইসলামের সোনালি যুগের মুসলমানগণ উন্নতির চরম শিখছে পৌঁছতে সক্ষম হয়েছিলেন, কারণ তখনকার সময়ে মুসলিম নারীদের অধিকাংশই ইসলামি শিক্ষাগত শিক্ষিত ছিলেন।
‘তামাদ্দুনে আরব’গ্রন্থে এমন অনেক মুসলিম নারীর নাম উল্লেখ করা হয়েছে যারা ইসলামি শিক্ষার পাশাপাশি গণিত, প্রকৌশলবিদ্যা, কথাসাহিত্যসহ বিভিন্ন শিক্ষায় শিক্ষিত ছিলেন।
কিন্তু বর্তমান পুরুষতান্ত্রিক সমাজে নারীর দীনী শিক্ষার বিষয়টি উপেক্ষার শিকার। নারীরা বেশি শিক্ষিত হয়ে কী করবে! এ ধরণের সংকীর্ণ মনভাবের কারণে বহু আলেম মহিলা মাদরাসার সাথে যুক্ত পরিচয় দিতেও লজ্জাবোধ করেন। এবং ‘অযোগ্যরাই মহিলা মাদরাসায় পড়ান’ বলেও বহু বড় বড় পন্ডিতদের তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করতে দেখা যায়।
ইতিবাচক দিকগুলি ভুলে দিয়ে নেতিবাচকভাবে উপস্থাপন করেন। ফলে মুসলিম নারীরা আজ কথিত আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে ইসলাম বিদ্বেষীরূপে গড়ে উঠেছে। বিরূপ মনোভাব নিয়ে বেড়ে উঠছে। যার ফলে তসলিমার মত কুখ্যাত লেখিকা সৃ্ষ্টি হচ্ছে। সেলিনা হোসেন, আয়শা খানম ও রাশেদা কে চৌধুরীর মত ভিনদেশীদের পদলেহী ও কমিউনিজমপন্থী আত্মবিক্রিত নারীবাদীদের জন্ম হচ্ছে।
নারীরা আজ বহুজাতিক সাম্রাজ্যবাদীদের ইসলাম বিদ্বেষী ষড়যন্ত্র বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। ফলশ্রুতিতে এই দ্বিতীয় বৃহত্তম মুসলিম কান্ট্রিতে শিকড় গেড়ে বসেছে ‘বিশ্ব সুন্দরী প্রতিযোগিতা’।
আমার মনে হয় দীনী শিক্ষার অভাবেই তারা আজ মুসলিম নারীদেরকে তাদের অভিমুখী করছে। যদি সমাজে নারীর দীনী শিক্ষালয় ব্যাপকভাবে থাকতো তাহলে অপঘাতীরা এভাবে মুসলিম নারীদের নিয়ে হোলিখেলায় মেতে উঠার বিন্দুমাত্র অবকাশ পেত না।
গত তিন’দশক আগেও এদেশে ইসলামকে সঠিকভাবে জানা ও উপলব্ধি করার মত নারীসংখ্যা ছিল না। ধর্মীয় শিক্ষার চেয়ে কুসংস্কারে আচ্ছন্ন ছিল বেশি। জানার জন্য, শিক্ষার জন্য স্বীকৃত নির্ভরযোগ্য কোনো দীনী প্রতিষ্ঠান ছিল না।
কিন্তু আজ আশার কথা হল, শত প্রতিকূলতা সত্ত্বেও এ দেশে নারীদের ধর্মীয় শিক্ষার মাধ্যম হিসেবে বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। বহু মুসলিম নারী এসব প্রতিষ্ঠানের কল্যাণে ধর্মীয় শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে দ্বীনি মেজাজ নিয়ে ইসলামের খেদমত করে যাচ্ছে । উন্নত বিশ্বের এ সময়ে আর সেসব পুরান কথার সুযোগ নেই যে, নারীর এত পড়ার কী দরকার!
সুতরাং আমি বলবো-আসুন! উদভ্রান্তের মত গোলক ধাঁধাঁয় আর নয়, বিভ্রান্তির হিমাগারেও আর নয়, নারীর দ্বীনি শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা নিরপেক্ষ দৃষ্টিতে অনুধাবনের চেষ্টা করে ইতিবাচক ও সম্ভাবনার দিকটিকে প্রাধান্য দিয়ে দ্বীনী শিক্ষার নব দ্বার উন্মোচনে প্রয়াসী হই। আপ্রাণ চেষ্টা করি।
আল্লাহ আমাদের সকল মেহনতকে কবুল করুন ও সম্মিলিত হিম্মতের তাওফীক দিন।
লেখিকা: পরিচালক, জামিয়াতুস সালিহাত মহিলা মাদরাসা, বোর্ডবাজার গাজীপুর
আরআর