প্রশ্ন: অনেক সময় ফজরের নামাজের সময় মসজিদে গিয়ে দেখা যায়, জামাত শুরু হয়ে গেছে কিংবা নামাজের ইকামত চলছে। এমন অবস্থায় দ্বিধা-দ্বন্ধে পড়ে যাই, সুন্নত পড়ব কিনা। এ ক্ষেত্রে আমাদের করণীয় কী? বিস্তারিত জানতে চাই।
উত্তর: এমতাবস্থায় দেখতে হবে, সুন্নত পড়ে ইমাম সাহেবকে কমপক্ষে দ্বিতীয় রাকাতে পাওয়ার সম্ভাবনা আছে কিনা? সম্ভাবনা থাকলে সুন্নত পড়ে জামাতে শরিক হবে।
এ প্রসঙ্গে আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.), হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) ও আবু দারদা (রা.)-এর মতো বিশিষ্ট সাহাবিদের থেকে বর্ণিত আছে যে, তারা ফজরের জামাত শুরু হয়ে গেলেও সুন্নত পড়ে নিতেন।
وعن عبد الله بن أبي موسى قال جاءنا ابن مسعود والامام يصلي الصبح فصلى ركعتين إلى سارية ولم يكن صلى ركعتي الفجر.
আবু দারদা (রা.) ফজরের সময় মসজিদে প্রবেশ করে লোকজনকে ফজরের জামাতে কাতারবদ্ধ পেলে মসজিদের এক কোণে (ফজরের) সুন্নত পড়তেন। অতপর মানুষের সঙ্গে জামাতে শরিক হতেন। (শরহু মায়ানিল আসার)
আর যদি সুন্নত পড়ে ইমাম সাহেবকে দ্বিতীয় রাকাতে পাওয়ার সম্ভাবনা না থাকে, তাহলে সুন্নত পড়া ছাড়াই জামাতে অংশ গ্রহণ করবে। এ ক্ষেত্রে তা পরে পড়ে নিতে হবে। কারণ, সুন্নত নামাজের মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে ফজরের দুই রাকাত সুন্নত। হাদিস শরিফে এর প্রভূত ফজিলত সম্পর্কে বিভিন্ন বর্ণনা এসেছে। এছাড়াও এর প্রতি যেরূপ তাগিদ দেওয়া হয়েছে, যা অন্য সুন্নতের ক্ষেত্রে ততটুকু দেওয়া হয়নি। এ প্রসঙ্গে আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিস শরিফে এসেছে, রাসুল (সা.) ইরশাদ করেছেন,
لا تدعوهما وإن طردتكم الخيل
‘তোমরা ফজরের সুন্নত ছেড়ে দিয়ো না। যদিও শত্রুবাহিনী তোমাদেরকে তাড়া দেয়।’ (আবু দাউদ, হাদিস নং : ১২৫৮)
আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে রাসুল (সা.) বলেন,
ركعتا الفجر خير من الدنيا وما فيها
ফজরের দুই রাকাত (সুন্নত) দুনিয়া ও দুনিয়ার মধ্যে যা কিছু আছে তার চেয়ে উত্তম। (মুসলিম, হাদিস নং : ৭২৫)
আরেক হাদিসে আছে,
لم يكن النبي صلى الله عليه وسلم على شيء من النوافل أشد منه تعاهدا على ركعتي الفجر.
নবী (সা.) ফজরের দুই রাকাত (সুন্নত) নামাজে এত গুরুত্ব দিতেন যে, অন্য কোনো নফল (বা সুন্নত) নামাজে ততটুকু দিতেন না। (বুখারি, হাদিস নং : ১১৬৩; মুসলিম, হাদিস নং : ৭২৪)
সুতরাং ফজরের জামাত শুরু হয়ে গেলেও সুন্নত পড়ে যদি জামাতের সঙ্গে অন্তত দ্বিতীয় রাকাতও পাওয়া যায়, তাহলে সুন্নত নামাজ পড়ে নিতে হবে। আর দ্বিতীয় রাকাত পাওয়ার সম্ভাবনা না থাকলে সুন্নত পড়বে না; বরং জামাতে শরিক হয়ে যাবে এবং সূর্যোদয়ের পর সুন্নত পড়ে নেবে। কেননা আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত হাদিসে রাসুল (সা.) বলেন,
من لم يصل ركعتي الفجر فليصلهما بعدما تطلع الشمس.
‘যে ফজরের দুই রাকাত (সুন্নত) পড়তে পারে না, সে যেন তা সূর্যোদয়ের পর পড়ে নেয়।’ (তিরমিজি, হাদিস নং : ৪২৩)
উল্লেখ্য, কোনো কোনো ফকিহ অবশ্য সুন্নত পড়ার পর ইমামকে তাশাহহুদে পাওয়ার সম্ভাবনা থাকলেও সুন্নত পড়ে নেওয়ার কথা বলেছেন। তবে উপরে উল্লেখিত কথাটিই অধিকাংশ ফকিহ’র অভিমত।
উত্তর দিয়েছেন : মুফতি মুহাম্মাদ শোয়াইব, সহকারী মুফতি, জামিয়া রহমানিয়া সওতুল হেরা, টঙ্গী, গাজীপুর। সম্পাদক, আরবি ম্যাগাজিন মাসিক ‘আলহেরা’।