হাসান আল মাহমুদ
সমাজে বহুল প্রচলিত আছে, স্বামীর পায়ের নীচে স্ত্রীর বেহেশত। স্বামী সমাজ এ নিয়ে গর্ব করেই বলে থাকে। হাদিস সম্পর্কে অল্প জ্ঞানের অধিকারী বক্তারাও এ নিয়ে বেশ রঙ চড়িয়ে বলে থাকেন। অথচ, স্বামীর পদতলে স্ত্রীর বেহেশত বা আল্লাহ তায়ালা স্বামীর পায়ের নীচে স্ত্রীর বেহেশত রেখেছেন এ কথাটির কোনো সূত্র হাদিস বা ইসলামি শরীয়তের কোনো কিতাবে পাওয়া যায়নি।
হাদিস শরীফে এমন পাওয়া যায়, নবী সাঃ বলেছেন, যদি আমি কাউকে সিজদা করতে আদেশ দিতাম, তাহলে মেয়েদেরকে বলতাম তোমরা স্বামীদের সেজদা করো- (মিশকাত-২/২৮২)।
মুআত্তা মালেক (হাদীস ৯৫২) হাদিস গ্রন্থে পাওয়া যায়, একবার এক নারী সাহাবী রাসূল সা: এর কাছে এলেন নিজের কোনো প্রয়োজনে। যাওয়ার সময় রাসূল সা: তাকে জিজ্ঞেস করলেন, তোমার কি স্বামী আছে? তিনি বললেন, জী, আছে। নবীজী বললেন, তার সাথে তোমার আচরণ কেমন? সে বলল, আমি যথাসাধ্য তার সাথে ভালো আচরণ করার চেষ্টা করি। তখন নবীজী বললেন, হাঁ, তার সাথে তোমার আচরণের বিষয়ে সজাগ থাকো, কারণ সে তোমার জান্নাত বা তোমার জাহান্নাম।
এছাড়া রাসুল সা: নারীদেরকে স্বামীর আনুগত্য করার প্রতি উদ্বুদ্ধ করেছেন এবং এর ফযীলতও বর্ণনা করেছেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, নারী যখন পাঁচ ওয়াক্ত নামায ঠিকমত আদায় করবে, রমযানের রোযা রাখবে, আপন লজ্জাস্থানের হেফাজত করবে, স্বামীর আনুগত্য করবে, তখন সে জান্নাতের যেই দরজা দিয়ে ইচ্ছা প্রবেশ করতে পারবে(-সহীহ ইবনে হিব্বান, হাদীস ৪১৬৩)।
মূলত এসব হাদিস দ্বারা স্বামীর মর্যাদার বিষয় বুঝানো উদ্দেশ্য। আবার গুনাহের কাজ নয় এমন বিষয়ে স্বামীর আনুগত্য জরুরি এসব হাদিস সেদিকে গুরুত্ব দেয়। কিন্তু ‘স্বামীর পদতলে স্ত্রীর বেহেশত’ এ ধরণের কথাবার্তা হাদিস নয়। শরীয়ত সমর্থন যোগ্যও নয়।
প্রণিধানযোগ্য, স্ত্রীর ওপর স্বামীর যেমন হক আছে, স্বামীর ওপরও স্ত্রীর হক আছে। স্ত্রীকে যেমন স্বামীর আনুগত্য করার গুরুত্ব দেয় তেমনিভাবে কোনো স্বামীর জন্য স্ত্রীর হক নষ্ট করে বা স্ত্রীর ওপর জুলুম করে বেহেশতে যাওয়াও কঠিন হওয়ার ঘোষণাও দেয়। ইসলামি শরীয়ত স্বামী-স্ত্রী উভয়কে একে অপরের প্রতি ভালোবাসার বন্ধন মজবুত রাখতে আদেশ দেয়। আল্লাহ আমাদের সহীহ বুঝ দান করুক এবং কবুল করুক। আমীন।
এইচএএম