আফিয়া আফরিন:
মাথায় গজানো পশমকে চুল বলে। আল্লাহ তায়ালা মানুষকে প্রকৃতিগতভাবেই অন্যান্য জিনিসের সাথে এ চুলটাও দিয়েছেন। পৃথিবীর খুব কম, একেবারেই কম মানুষ আছে, যাদের মাথায় চুল গজায়নি আজন্ম।
চুলের স্বাভাবিকতা হল বড় হওয়া; যেমন নখ বড় হয়। নখের বিধান হল, প্রত্যেক মানুষের সপ্তায় একবার হলেও নখ কাটা। নখ বড় রাখা মানুষের স্বভাববিরুদ্ধ কাজ। তাই ইসলামে নর-নারী সবাইকে নখ কেটে রাখার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
অপরদিকে চুল কেটে রাখার ব্যাপারে ইসলাম নর-নারীর বিভাজন করেছেন। কারণ চুল বড় রাখা নারীর জন্য সৌন্দর্য্য। যেমনিভাবে দাড়ি রাখা পুরুষের জন্য সৌন্দর্য্য। তাই ইসলাম মানুষের এই সভ্যতার মূল্যায়ন করেছে।
ইসলাম নারীকে চুল লম্বা রাখার এবং পুরুষকে চুল ছোট রাখার আদর্শ বিধান দিয়েছে। অবশ্য, পুরুষের জন্য তিন ধরণের চুল রাখা সুন্নাহ সম্মত বলে হাদিসে রয়েছে। কিন্তু নারীর জন্য চুল রাখা, লম্বা করাকে ইসলাম গুরুত্ব দিয়েছে।
লম্বার পরিমাণ সম্পর্কে বলা হয়েছে নারীর চুল যাতে এ পরিমান লম্বা হয় যে, কিছু অংশ কাটলে পুরুষের চুলের সাথে সাদৃশ্য হবে না। যদি এমন না হয়, তাহলে তার জন্য ঐ পরিমাণ চুল কাটা জায়েয হবে।
পক্ষান্তরে যে নারীর চুলের লম্বা পরিমান হল এই, যার থেকে অল্প কাটলে কাঁধ সমান হয়ে যাবে এবং পুরুষের বাবরী চুলের মতো দেখা যাবে, তাহলে এমন নারীর জন্য অল্প পরিমান চুল কাটারও অনুমতি নেই।
শরীয়তের বিধান প্রযোজ্য হয় সাবালগ হবার পর। তাই সাবালিগা তথা প্রাপ্ত বয়স্কা নারীকে চুল কাটা জায়িয নয় ঘোষণা করেছে। হাদিসে সাবালিগা নারীর ওজর ছাড়া চুল কাটার মধ্যে ২টি পাপ বিশেষভাবে উল্লেখ করা হয়েছে।
১. নারীকে পুরুষের সাদৃশ্য অবলম্বন করার পাপ
২. কাফির ও বিজাতীয়ের সাথে সাদৃশ্য অবলম্বনের পাপ।
তবে ইসলাম যেহেতু মানুষের সহজাত ধর্ম। তাই ইসলাম মানুষের সহজাতকে যেমন বুঝতে চায়, তদ্রূপ মানুষের ওজর-অসহায়ত্বকেও স্বীকার করে তাকে অভ্যাহতি দেয় এবং সে অনুযায়ি নির্দেশনা দেয়। এজন্য ইসলাম কোনো নারীর যদি এমন
জটিল অসুস্থ হয়, যে রোগ সারাতে অভিজ্ঞ ডাক্তারের নির্দেশনায় নারীকে চুল কাটতে বলে, তাহলে এমন প্রয়োজনের তাগিদে চুল কাটার অনুমোদন ইসলামে রয়েছে।
দ্রষ্টব্য: মিশকাতুল মাসাবিহ- ২/৩৮০-৩৮১, সহীহ বুখারী ২/৮৭৪, জামে তিরমিযী ১/১০৩, তাকমিলা ফাতহুল মুলহিম ১/৪৭২, ফাতাওয়া আলমগীরী-৫/৩৫৮, ফাতাওয়া শামী-৬/৪০৭, ফাতাওয়া মাহমূদিয়া-১১/৩৭৪।
এইচএএম