হাসান আল মাহমুদ
আলেম, লেখক
বিবাহবহির্ভূত কোনো নারীর সঙ্গে জোরপূর্বক যৌন সঙ্গম করলে তাকে বলে ধর্ষণ। এ ক্ষেত্রে যে ব্যক্তি এরকম জোরপূর্বক আচরণ করেছে, তাকে বলে ধর্ষক। আর যার অসম্মতিতে জোরপূর্বক সঙ্গম করা হয়েছে, তাকে বলা হয়ে থাকে ধর্ষিতা। ইংরেজিতে যাকে বলে Rape।
উইকিপিডিয়ার ইংরেজি ভার্সনে Rape'র সংজ্ঞায় বলা হয়েছে, Rape is a type of sexual assault usually involving sexual intercourse or other forms of sexual penetration carried out against a person without that person's consent.
উইকিপিডিয়ার বাংলা ভার্সনে ধর্ষণ'র সংজ্ঞায় বলা হয়েছে, ধর্ষণ এক ধরনের যৌন আক্রমণ। সাধারণত, একজন ব্যক্তির অনুমতি ব্যতিরেকে তার সঙ্গে যৌনসঙ্গম বা অন্য কোনো ধরনের যৌন অনুপ্রবেশ ঘটানোকে ধর্ষণ বলা হয়।
বাংলাদেশ দন্ডবিধির ৩৭৫ নং ধারায় ধর্ষণের সংজ্ঞায় বলা হয়েছে, কোনো নারীর ইচ্ছার বিরুদ্ধে অথবা কোনো নারীর সম্মতি ছাড়া অথবা কোনো নারীকে মৃত্যু বা শারীরিক আঘাতের ভয় দেখিয়ে শারীরিক সম্পর্কে সম্মতি দিতে বাধ্য করলে অথবা নাবালিকা অর্থাৎ ১৬ বছরের কম বয়স্ক শিশু সম্মতি দিলে কিংবা না দিলে (সে যদি নিজ স্ত্রীও হয়) অথবা কোনো নারীকে বিয়ে না করেই ব্যক্তিটি তার আইনসঙ্গত স্বামী এই বিশ্বাস দিয়ে যদি কোনো পুরুষ যৌন সম্পর্ক স্থাপন করে তাকে আইনের ভাষায় ধর্ষণ বলা হবে।
ইসলাম ধর্ষণের আলাদা কোনো সংজ্ঞা না করে বিবাহবহির্ভূত যৌণ সম্পর্ককে ব্যভিচার আখ্যায়িত করেছে। এ ক্ষেত্রে কারো সম্মতি থাকুক বা না থাকুক নর-নারী উভয়কে ব্যভিচারি-ব্যভিচারিনী সাব্যস্ত করে তাদের শাস্তি ধার্য করেছে।
তবে, অবিবাহিত নর-নারীর কাউকে ব্যভিচারে জোরপূর্বক বাধ্য করা হলে ইসলাম তাকে শাস্তির আওতাধীন রাখেনি। বরং যে জোরজবরদস্তি করেছে তথা ধর্ষককে ইসলাম জালেম সাব্যস্ত করেছে।
ইসলামের দৃষ্টিতে জোরপূর্বক যিনা যাকে ধর্ষণ বলা হয়ে থাকে তা ব্যভিচার থেকেও ভয়াবহ অপরাধ গণ্য। কারণ, ধর্ষণে যিনা সংঘটিততো আছেই, উপরন্তু ধর্ষক জালেম সাব্যস্তও হয়। অপরদিকে ধর্ষিতা হয় মাজলুম বা নির্যাতিতা। আর ইসলামের অবস্থান বরাবরই মাজলুমের পক্ষে। তাই ধর্ষিতার কোনো শাস্তি ইসলামে নেই। যেমন:
হজরত ওয়াইল ইবনে হুজর রা. বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সা.-এর যুগে এক মহিলাকে জোরপূর্বক ধর্ষণ করা হলে রাসুলুল্লাহ সা. ওই মহিলাকে কোনোরূপ শাস্তি দেননি, তবে ধর্ষককে হদের (কুরআন-হাদিস নির্ধারিত শাস্তির পরিমান ও পদ্ধতিকে হদ বলে) শাস্তি দেন। -ইবনে মাজাহ: ২৫৯৮।
হজরত উমর রা. এর যুগে সরকারি মালিকানাধীন এক গোলাম গণিমতের পঞ্চমাংশে পাওয়া এক দাসির সঙ্গে জবরদস্তি করে ব্যভিচার (ধর্ষণ) করে। এতে তার কুমারিত্ব নষ্ট হয়ে যায়। হজরত উমর রা. ওই গোলামকে কশাঘাত করেন এবং নির্বাসন দেন। কিন্তু দাসিটিকে কোনো শাস্তি প্রদান করেননি।-সহিহ বোখারি: ৬৯৪৯।
প্রণিধানযোগ্য, ধর্ষণের কারণে কারো মৃত্যু হলে সাধারণ আইনে ধর্ষককে মৃত্যুদণ্ড দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। পক্ষান্তরে ধর্ষণের কারণে কারো মৃত্যু হলে ইসলাম ধর্ষকের জন্য প্রথমে ব্যভিচারের শাস্তি পরে হত্যার শাস্তি ধার্য করেছে।
হত্যা প্রসঙ্গে ইসলামের শ্বাস্বত বিধান হলো, কাউকে অস্ত্র দিয়ে হত্যা করা হলে হত্যাকারীর ওপর কিসাস তথা হত্যার বদলে হত্যা (মৃত্যুদণ্ডের) বিধান আরোপ করা হবে।
আর কাউকে অস্ত্র ছাড়া এমন কিছু দিয়ে হত্যা করা হলে, যা দিয়ে সাধারণত হত্যা করা যায় না, তাহলে এ ক্ষেত্রে ইসলাম হত্যাকারীর জন্য অর্থদণ্ড ধার্য করেছে। যার পরিমাণ একশত উট বা মূল্য সমপরিমাণ অর্থ (প্রায় কোটি টাকা)।
আরআর