আওয়ার ইসলাম: একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে আগামী ৩০ ডিসেম্বর পর্যন্ত সব গায়েবি মামলা স্থগিত করার দাবি জানিয়েছে ২০ দলীয় ঐক্যজোট।
এ ছাড়াও তারা সকল ডিসি-এসপিদের বদলি ও রিটার্নিং কর্মকর্তার আগে গণমাধ্যমে ফল না প্রকাশের ব্যবস্থা নিতে নির্বাচন কমিশনের কাছে লিখিত দাবি জানিয়েছে।
বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের মুখপাত্র অবসরপ্রাপ্ত কর্নেল অলি আহমদ নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে আলোচনার পর রোববার বিকালে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন।
তিনি আরো বলেন, এখনও সারা দেশে গায়েবি মামলায় বিএনপির নেতাকর্মীদের গ্রেফতার করা হচ্ছে। এসব মামলায় কোনো আসামির নাম উল্লেখ না থাকায়, নির্বাচনের আগে পুলিশ বিএনপির এজেন্টদের এসব মামলায় গ্রেফতার দেখাবে।
তাই আগামী ৩০ ডিসেম্বর পর্যন্ত এসব মামলা স্থগিত রাখার দাবি জানিয়েছি। আমরা যে ১৩টি প্রস্তাব এনেছি তাতে ইসি একমত হয়েছে।
কর্নেল অলি আহমদ বলেন, আমরা বিতর্কিত কর্মকর্তাদের শাস্তি চাই না, বদলি চাই। সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের স্বার্থে এক জেলার কর্মকর্তাদের অন্য জেলায় বদলি করা জরুরি। এখনও সবার জন্য সমান সুযোগ সৃষ্টি হয়নি। পুলিশ নেতাকর্মীদের গ্রেফতার করছে। ইসির নির্দেশনার মাঠ পর্যায়ে কোনো প্রতিফলন নেই।
তিনি বলেন, আমরা বলেছি গণমাধ্যম বা বেসরকারি টেলিভিশনের যেন ভোটের ফল সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা ঘোষণা করার আগে প্রচারিত না হয় সে ব্যবস্থা নিতে। কেননা, এতে বিভ্রান্তির সৃষ্টি হতে পারে। তবে ভোটের দিন ভোটকেন্দ্রগুলোতে গণমাধ্যমের প্রবেশে বাধা দেওয়া না হয়, সে ব্যবস্থা নিতেও বলেছি।
নির্বাচনকালে আমরা বলেছি-‘প্রাইভেট টিভি হোক, সরকারি টিভি হোক, রিটার্নিং অফিসার বা সহকারী রিটার্নিং অফিসারে অনুমতি ছাড়া কোনো নির্বাচনী এলাকার ফলাফল ঘোষণা না করে। না হলে এটাতে নিরপেক্ষতা থাকবে না। মানুষ বিভ্রান্ত হবে।’
জোটের লিখিত দাবিনামাতেও বলা হয়েছে, নির্বাচনকালীন সময়ে সরকারি রেডিও ও টেলিভিশনে ইসি নিয়ন্ত্রণে থাকা বাঞ্চনীয় বলে মনে করে বিশ দলীয় জোট। বেসরকারি গণমাধ্যমের নিরপেক্ষতা নিশ্চিতের লক্ষ্যে ইসির তরফ থেকে একটি গাইডলাইন করা প্রয়োজন।
লিখিত বক্তব্যে আরও উল্লেখ করা হয়, রিটার্নিং কর্মকর্তাদের অনেকেই সরকারি দলের প্রার্থীকে জয়ী করার জন্য রাতের আঁধারে ব্যালট পেপারে ভোট কাস্ট করে রাখেন। চাকরি রক্ষার জন্য অনেক সময় তারা এই রকম অনৈতিক কাজে আত্মসমর্পণ করেন। এধরনের কর্মকান্ড এড়াতে ইসির আগে থেকেই ব্যবস্থা নেয়া দরকার।
ইসির নির্দেশনা সত্ত্বেও সরকারের এমপি মন্ত্রীরা সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা ব্যবহার করে নির্বাচনী এলাকা প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। এ অবস্থায় সুষ্ঠু নির্বাচন আশা করা যায় না। কমিশনকে এ ক্ষেত্রে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে।
প্রত্যেক নির্বাচনী এলাকায় পূর্ণ ক্ষমতাসহ ১১ ডিসেম্বর হতে ম্যাজিট্রেট নিয়োগ করা প্রয়োজন। ভোটের দিন এই সংখ্যা বাড়ানো দরকার।
এত টাকা ব্যয় করে জনগণের ইচ্ছার বিরুদ্ধে ইভিএম ব্যবহার করা উচিত নয়। এটি বন্ধ করুন। নির্বাচালীন সময় মন্ত্রী ও সিনিয়র নেতারা ব্যক্তিগত নিরাপত্তার জন্য স্পেশাল ব্রাঞ্চের নিরাপত্তা রক্ষী পেয়ে থাকেন।
একইভাবে বিএনপি স্থায়ী কমিটির সকল সদস্য সহ নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের নিরাপত্তা দেযা যুক্তিযুক্ত। তা না হলে ইসি পক্ষপাতিত্ব করছে বলে মনে হবে।
অতীতে তত্ত্বাবধায়ক সরকারগুলো বিরোধী দলের দাবি দাওয়া শুনতো ও ব্যবস্থা নিত। সেইভাবে এখন ইসি এই ব্যবস্থা নিতে পারে।
এ সময় বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মোহাম্মদ ইব্রাহিম বীরপ্রতীক প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, ৩০ ডিসেম্বর ভোট হবে। এর আগে ২৮ নভেম্বর পর্যন্ত মনোনয়নপত্র জমা, ২ ডিসেম্বর বাছাই ও ৯ ডিসেম্বর প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ সময় রয়েছে।
নারায়ণগঞ্জ জেলার এএসপির স্ত্রী ফাতেমাতুজ জোহরা আওয়ামী লীগ দলীয় এমপি। সস্প্রতি সন্তানসহ প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তিনি ছবি তুলেছেন তারা। এমন অবস্থায় ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও তার পক্ষে নিরপেক্ষভাবে দায়িত্ব পালন করা সম্ভব না।
নির্বাচনকালীন সময়ে আইন-শৃঙ্খলা ভঙ্গকারীদের গ্রেফতারের ক্ষমতা দিয়ে পুলিশের মত সশস্ত্র বাহিনীকেও দায়িত্ব দেয়া দরকার।
১৫ ডিসেম্বর থেকে নির্বাচনী এলাকায় শান্তিশৃঙ্খলা রক্ষায় পুলিশের পাশাপাশি সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের মোতায়েন করা প্রয়োজন।