কৌশিক পানাহী: ছেলেটার নাম গাজী সালেহ। বয়স ১০ বছর। অনাহারে শিশুটি কঙ্কালসার হয়ে গেছে, ওজন গিয়ে ঠেকেছে ৮ কিলোগ্রামে। দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় ইয়েমেনের তয়েজের এক হাসপাতালে শুয়ে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছে অনাহারক্লিষ্ট শিশুটি।
চিকিৎকেরা জানিয়েছেন, অনাহারে এতো দুর্বল হয়ে গেছে যে, শ্বাস-প্রশ্বাস নিতেও রীতিমতো যুদ্ধ করতে হচ্ছে ছেলেটিকে।
ইয়েমেনে যুদ্ধ-সংঘাত শুরুর তিন বছর পেরিয়ে গেছে। রক্তপাত, বোমার শব্দ এখন সেখানে রোজনামচা। জাতিসংঘের হিসাব বলছে, বিধ্বস্ত ইয়েমেনে বিপন্ন প্রায় এককোটি শিশু।
জাতিসংঘের তৈরি করা পরিসংখ্যানের ভিত্তিতে শিশুদের অধিকার আদায়ের জন্য কাজ করা আন্তর্জাতিক সংগঠন সেভ দ্য চিলড্রেনের এক রিপোর্ট বলছে, গত তিন বছরে ইয়েমেনে যুদ্ধের সময়ে অপুষ্টিতে ভুগে ৮৫ হাজার শিশু মারা গেছে।
কিছুদিন আগে আমাল হোসেন নামে শীর্ণকায়, কঙ্কালসার এক শিশুর ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় ঝড় তুলেছিল। যুদ্ধবিধ্বস্ত ইয়েমের রূপটা বাইরে এনে প্রতিবাদের মুখ হয়ে উঠেছিল সেই শিশু।
আমাল নেই, তবে তার অনেক প্রতিচ্ছবি এখনও ইয়েমেনের আনাচেকানাচে রয়ে গেছে। কঙ্কালসার গাজি সালেহ-ই তার প্রমাণ।
এনটিডিভির খবরে প্রকাশ, আল-মুদাফার হাসপাতালে রয়েছে গাজী সালেহ। তার বিছানায় শুয়ে থাকা একটি ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে।
ওই ছবিতে দেখা যায়, শীর্ণকায় চেহারার গাজী সালেহের রুগ্ন বুকের ভেতর থেকে বেরিয়ে এসেছে পাঁজরের হাড়। কঙ্কালসার হাত দু’টো মুচড়ে বুকের ওপর জড়ো করে রাখা।
আল-মুদাফার হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, সালেহের শরীর খুবই দুর্বল। সে এতো দুর্বল যে, তার শ্বাসের আওয়াজও প্রতি মুহূর্তে ক্ষীণ হয়ে আসছে।
সূত্রের খবরে উল্লেখ, চূড়ান্ত অপুষ্টিতে ভুগতে থাকা গাজিকে শরণার্থী শিবির থেকে সম্প্রতি হাসপাতালে আনা হয়েছে।
ওই হাসপাতালের নার্স ইমান আলি বলেছেন, ‘গাজি এতো দুর্বল যে, কোনও খাবারই নিতে পারছে না। অপুষ্টি ছাপ ফেলেছে সারা শরীরে। হৃদস্পন্দন কমে যাচ্ছে ধীরে ধীরে। ১০ বছরের শিশুর ওজন মাত্র আট কিলোগ্রাম হয়ে গেছে।’
আল-মুদাফার হাসাপাতালের নিউট্রিশন বিভাগের প্রধান সোনা ওথমানের ভাষ্য, ‘প্রতিদিনই হাসপাতালে অপুষ্টিতে ভোগা-রুগ্ন শিশুরা ভর্তি হচ্ছে। কাউকে বাঁচাতে পারছি, কেউ হার মানছে জীবনের লড়াইয়ে। কঙ্কালসার শিশুগুলোর চেহারা ইয়েমেনের আসল রূপটাকে সামনে আনছে।’
চিকিৎসক ও নার্সরা জানিয়েছেন, তারা গাজীকে বাঁচানোর আপ্রাণ চেষ্টা করছেন। কিন্তু কোনো খাবারই গিলতে পারছে না সে। তার শরীরে মাংস বলে কিছুই নেই। প্রতিবার মুখে খাবার দেওয়ার পর বমি করে দিচ্ছে।
২০১৪ সালে ইয়েমেনের সাবেক প্রেসিডেন্ট আলী আব্দুল্লাহ সালেহের প্রতি অনুগত সেনা সদস্যদের সঙ্গে একজোট হয় ইরান সমর্থিত হুথি বিদ্রোহীরা। ওই সময় তারা সানাসহ দেশটির বড় একটি অংশ নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নেয়। এর পর থেকেই বিভিন্ন সংঘাত শুরু হয় ইয়েমেনে।
ইয়েমেনের ক্ষমতাচ্যুত প্রেসিডেন্ট আব্দ-রাব্বু মানসুর হাদির কর্তৃত্ব পুনঃপ্রতিষ্ঠা করার প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে ২০১৫ সালের ২৬ মার্চ থেকে সৌদি আরব ও তার মিত্র দেশগুলো ইয়েমেনে সামরিক অভিযান পরিচালনা শুরু করে।
এ অভিযান শুরুর পর ১০ হাজারেরও বেশি মানুষ নিহত হন। ঘরহারা হন কয়েক লাখ মানুষ। সেভ দ্য চিলড্রেন বলছে, ২০১৫ সালের এপ্রিল থেকে ২০১৮ সালের অক্টোবর পর্যন্ত প্রায় ৮৪ হাজার ৭শ’ শিশুর প্রাণহানি হয়েছে।
সূত্র: এনডিটিভি