আবদুল্লাহ তামিম
সম্প্রতি মাস্টার্স সমমান দেয়া হয়েছে দাওরায়ে হাদিসকে। কওমি মাদরাসা শিক্ষা পদ্ধতি সিলেবাস ইত্যাদি নিয়ে হচ্ছে আলোচনা। সে আলোচনায় যুক্ত হয়েছে দাওরায়ে হাদিসের শিক্ষার্থীদের বয়স।
সম্প্রতি হাইআতুল উলয়া কর্তৃপক্ষ একটি নোটিশে জানিয়েছে দাওরায়ে হাদিসের নিবন্ধনকারীদের বয়স হতে হবে ২১। তবে এ পূর্ব পরিকল্পনা ছাড়াই এ সিদ্ধান্ত শুনে অনেকেই বিপাকে পড়েছেন। কারণ এ বছর যারা দাওরা পড়ছেন তাদের অধিকাংশের বয়সই ২০ পার হয়নি।
সুতরাং এ অবস্থায় সিদ্ধান্তটি বহাল থাকলে তারা বিপদে পড়বেন। এর এ কারণে তাকমিল শিক্ষার্থীদের দাবি এখনই যেন বয়সের সীমা নির্ধারণ করা না হয়। একান্তই যদি এ বয়স একজন মাস্টার্সের শিক্ষার্থীর জন্য উপযুক্ত না হয় তাহলে দাওরায়ে হাদিসকে এক বছর থেকে বাড়িয়ে দেয়ার কথা বলেছেন তারা।
এখনই এ নিয়ম কার্যকর করা হলে অনেক শিক্ষার্থী পরীক্ষা থেকে বাদ পড়তে পারে এমন আশঙ্কা করে জামিয়া আরাবিয়া ইমদাদুল উলূম ফরিদাবাদ মাদরাসার দাওরায়ে হাদিসের ছাত্র মুহাম্মদ উবায়েদুল্লাহ বলেন, হাইয়াতুল উলিয়ার তাকমিলের পরীক্ষার বয়সসীমা ২১ করলে প্রথম তো এ বছর যারা পড়াশোনা করছে তাদের কী অবস্থা হবে।
তিনি বলেন, আমার মনে হয় একান্তই করতে হলে এক দুই বছর সময় নিয়ে করা যায়। তাহলে শিক্ষার্থীদের আশা করি কোনো আশঙ্কায় পড়তে হবে না।
জামিয়া ইসলামিয়া দারুল উলূম মাদানিয়া, যাত্রাবাড়ী, ঢাকার দাওরার শিক্ষার্থী মুহাম্মদ জিয়াউর রহমান বলেন, আমরা তো স্বীকৃতি পেয়েছি কিন্তু এখন যদি পরীক্ষাই না দিতে পারি তাহলে কেমন হবে।
তিনি বলেন, আমার বয়স ২০। আমাদের জামাতে অনেক ছাত্র আছে যাদের বয়স ২১ এর নিচে। তাই বিষয়টি নিয়ে আবারও বিবেচনা করার অনুরোধ করছি।
মারকাযুল ফিকরিল ইসলামি (ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার) বাংলাদেশ, বসুন্ধরা, ঢাকা মাদরাসার তাকমিলের ছাত্র আবদুল করিম বয়সসীমাকে পজেটিভ বলে মনে করছেন।
তিনি বলেন, হাইআতুল উলইয়া হয়তো বিষয়টি সুদূর পরিকল্পনা থেকেই নিয়েছে। মাস্টার্স পরীক্ষা দিতে সাধারণত ১৭ থেকে ১৮ বছর লেগে যায়। তবে কওমি অঙ্গনের বিষয়টি সে পর্যায় নিতে আমি মনে করি নিচের দিকে কিছু বিভাগ যুক্ত করা হলে ভালো হয়।
তিনি বলেন, প্রাথমিকভাবে সমস্যা দেখা দিলেও আস্তে আস্তে মানানসই হয়ে যাবে বলে মনে করছি। তাই বিষয়টি শুরুতে মানিয়ে নিতে এক বছর বা দুই বছর সময় নিয়ে সিলেবাসে পরিবর্তন এনে সময় বাড়ানো হোক। এতে পড়াশোনাও মজবুত হবে, সনদেরও মান বেড়ে যাবে।
বাংলাদেশে প্রায় ২০ হাজার কওমি মাদরাসার মধ্যে মহিলা মাদরাসার সংখ্যা কম নয়। এ মহিলা মাদরাসাতে অসংখ্য মেয়েরা পড়াশোনা করছেন। দাওরায়ে হাদিস পড়ুয়া এ শিক্ষার্থীদের বয়স বেশির ভাগই বিশের নিচে।
যদি হাইয়াতুল উলিয়ার এ সিন্ধান্ত এখনই কার্যকর হয় তাহলে তারা গভীর সমস্যায় পড়বে। এমনটিই জানালেন ঢাকার মানিক নগরের খাতুনে জান্নাত মহিলা মাদরাসার মুহতামিম, মাসিক আদর্শ নারীর সম্পাদক মুফতী আবুল হাসান শামসাবাদী।
তিনি বলেন, হাইআতুল উলইয়া যে বয়স সীমা নির্ধারণ করেছে অবশ্যই তা চিন্তা ভাবনা করেই সুদূর প্রসারী প্ররিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য করছে। তবে এখনই এ সিদ্ধান্ত কার্যকর করতে গেলে আমাদের সমস্যায় পড়তে হবে।
যেহেতু বিশ্ববিদ্যালয়ে মাস্টার্স পাস করতে ১৭ থেকে ২০ বছর লেগে যায়। সে হিসেবে দাওরায়ে হাদিসের বয়সসীমা যৌক্তিক। তবে শুরুতেই বয়সসীমা না বাড়িয়ে ভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করা যায়।
ভিন্ন উদ্যোগ হিসেবে তিনি দাওরায়ে হাদিসকে দুই বছর করার কথা জানিয়ে বলেন, দুই বছর দাওরায়ে হাদিস পড়ালে আরো যোগ্যতা সম্পন্ন হয়ে ওঠবে ছাত্র ছাত্রীরা। ইলমের মধ্যে তাদের গভীরতা আসবে।
তবে হাইআতুল উলইয়ার কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায় ভিন্ন প্রসঙ্গ। তারা এখনই এ সিদ্ধান্ত কার্যকর করছে না বলেই জানিয়েছে আওয়ার ইসলামকে।
এ বিষয়ে প্রতিষ্ঠানটির দপ্তর বিষয়ক সম্পাদক ও পরীক্ষার কমিটির সদস্য মাওলানা ওসিউর রহমান বলেন, হাইআতুল উলইয়ার গত রোববারের (২১ অক্টোবর) বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীকে সংবর্ধনার বিষয়ে সিন্ধান্ত গ্রহণের পাশাপাশি এ বিষয়টি আলোচনা হয়।
আলোচনায় ২১ বছর বয়সসীমা আপাতত কার্যকর না করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। তিনি জানান, এ বিষয়ে তদারকির জন্য আপাতত দুই জনকে দায়িত্ব দেয়া দেয়া হয়েছে। তারা প্রতিবেদন জমা দিলেই বয়সসীমা নির্ধারণের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হবে।
শিক্ষার্থীদের দাবি অনুযায়ী দাওরায়ে হাদিস দু’বছর করার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, সিলেবাসের বিষয়েও এ মিটিংয়ে কথা হয়েছিলো তবে বিষয়টি যেহেতু খুবই গুরুত্বপূর্ণ তাই পরবর্তী বৈঠকগুলোতে আলোচনা হবে।
দাওরায়ে হাদিসের পরীক্ষা ৮ এপ্রিল; আসছে ব্যাপক পরিবর্তন
-আরআর