জুনায়েদ হাবীব
আওয়ার ইসলাম
চট্টগ্রামের আগ্রাবাদে অবস্থিত জাম্বুরী মাঠ। যেখানে একসময় খেলাধুলার কোলাহলে সর্বদা মেতে থাকতো মাঠটি। আর এটি এখন একটি পার্কে রুপান্তরিত হয়েছে।
তবে সর্বসাধারণের জন্য পার্ক হলেও এটি এখন প্রেমিক যুগলের আড্ডাস্থল হিসেবে পরিচিতি লাভ করতে যাচ্ছে। তাদের আনাগোনাতেই মুখর থাকে প্রায় সময়।
এমন একটি সুদৃশ্যমান খেলার মাঠকে পার্ক করার বিষয়ে দীর্ঘ ৫ বছরের ও বেশি সময় দ্বন্দ্বে অনেক আন্দোলন হলেও পরিশেষে সেটিকে পার্ক করার সিদ্ধান্তে অটল ছিল গণপূর্ত অধিদপ্তর।
খেলার মাঠকে পার্ক করা নিয়ে নানান জটিলতার বাধা পেরিয়ে সেটিকে পার্ক করা হলেও সমালচনা থেকে রেহায় পায়নি আগ্রাবাদের জাম্বুরী মাঠটি। আগ্রাবাদের শফিক আহমদ নামের এক বাসিন্দা বলেন, একটা সময় এই মাঠে আমরা ফুটবল নিয়ে আসতাম খেলার জন্য কিন্তু এখন এটাকে পার্কে রূপান্তর করা হয়েছে। খেলাধুলা বা শরীর চর্চার আর সুযোগ নেই।
অবশ্য এসব প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী ডা. মেশাররফ হোসেন। তিনি বলেন, ঢাকায় অনেক পার্ক থাকলেও চট্টগ্রামে তুলনামুলকভাবে পার্ক কম। আর খেলাধুলা নিয়ে মন্ত্রী বলেন, আপনারা জানবেন পার্কের পাশেই অবস্থিত শিশু পার্কটি ভেঙে কয়েকটি ধাপে খেলার মাঠ করার প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে।
২. চট্টগ্রাম নগরীর কাজীর দেউড়িতে অবস্হিত এম এ আজিজ স্টেডিয়াম যেখান থেকে শুরু হয় বাংলাদেশ জাতিয় ক্রিকেট দলের সদস্য মিনহাজুল আবেদিন নান্নু, আকরাম খান এবং তামিম ইকবালের খেলাধুলার হাতেখড়ি এখন সেই মাঠটিকেও হাতছাড়া করতে হলো শিশু কিশোরদের!
এম এ আজিজ স্টেডিয়ামের এর আউটার স্টেডিয়াম নামের পরচিত এই মাঠে এখন গেলে দেখা মিলবে মালবাহী ট্রাক এর অস্হায়ী স্ট্যান্ড যার থেকে মাসোহারা হিসেবে নেতারা অর্থ ইনকাম করছেন।
মাঠটিতে একসময় বিভিন্ন ক্রিকেট ট্রেনিং একাডেমির শিশু কিশোরদেরকে শেখানো হতো খেলাধুলা তবে সেটা এখন আস্তে আস্তে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। রুপ নিচ্ছে জোয়া ও মাদকসেবীদের স্বর্গরাজ্যে!
বিষয়টি নিয়ে একজন অভিভাবক বলেন, আমার ছেলে ড্রীম ক্রিকেট একাডেমীতে প্রেক্টিস করে। ওদের ট্রেনিং দেওয়া হয় এই মাঠেই কিন্তু এখন এই মাঠের পরিবেশ অনেক বাজে হয়ে গেছে।
তিনি আরো বলেন, আগে চট্টগ্রামে অনেকগুলো মাঠ ছিল কিন্তু এখন সবই বিলিন হয়ে যাচ্ছে!এখন যদি আমার ছেলেকে এই মাঠে খেলতে আসতে না দেই তাহলে সে বাসায় মেবাইল কম্পিউটারে গেমস নিয়ে ব্যস্ত থাকবে।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে চট্টগ্রামের অন্যতম মনরোগ্য বিশেষজ্ঞ ডা. ইফতেখার চৌধুরী আওয়ার ইসলামকে বলেন, শিশু কিশোরদের জন্য খেলাধুলা অত্যন্ত প্রয়োজনীয় বিষয় তবে এখনকার প্রজন্ম এটাকে বিলীন করে দিচ্ছে সোশ্যাল মিডিয়ার কারণে।
তিনি বলেন, একটি ছেলে যখন নিয়মিত রুটিন মাফিক খেলবে তখন তার শারীরিক গঠন আর মানসিক শক্তি বৃদ্ধি পাবে। কিন্তু সে তা না করে সারাদিন ফেসবুক, টুইটার, ইউটিউব নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ছে। আর চট্টগ্রামে ও আগের থেকে তুলনামূলকভাবে মাঠগুলো কমে আসছে যার কারনে শিশুরা পর্যাপ্ত পরিমাণ খেলার যায়গা পাচ্ছে না।
সোশ্যাল নেটওয়ার্ক নিয়ে বলতে গিয়ে তিনি বলেন, একটি ছেলে যখন ভার্চুয়াল সাইট নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ে তখন তার মনযোগ সর্বক্ষণ সেটিকে আকৃষ্ট করে রাখে এবং তাতে শিশুদের মস্তিষ্কে বিরুপ প্রভাব ফেলে। সে কারণে অভিভাবকদের প্রয়োজন সন্তানদের সময় করে খেলার তাগিদ দেওয়া।
তিনি খেলার মাঠের সঙ্কট নিয়ে বলেন, শিশুদের ভার্চুয়াল আসক্তি কমাতে খেলাধুলা ও সবুজ পরিবেশের পর্যাপ্ত উপস্থিতি দরকার। যার কমতির কারণে আমাদের বড় বিপদ ডেকে আনতে পারে।
চট্টগ্রামের আলোচিত জাম্বুরী মাঠ এখন দৃষ্টিনন্দন পার্ক!
-আরআর