শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪ ।। ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ ।। ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬


জেলা প্রশাসকদের দেয়া ইসলামী আন্দোলনের স্মারকলিপিতে যা আছে

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

হামিম আরিফ: অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের দাবীতে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ-এর পক্ষ থেকে দেশের জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে মহামান্য রাষ্ট্রপতি বরাবর আজ স্মারকলিপি দিয়েছে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ।

গত ৫ অক্টোবর সোহরাওয়ার্দীতে মহাসমাবেশ থেকে ঘোষিত ১০ দফা দাবি দ্রুত আদায় না হলে এ কর্মসূচি দিয়েছিল দলটি।

স্মারকলিপিতে রাষ্ট্রপতি বরাবর ইসলামী এ দলটি বলেছে, মহামান্য রাষ্ট্রপতি! সম্প্রতি দেশের সামগ্রিক অবস্থা আপনি জানেন। দেশের মানুষ আজ আতঙ্কিত। দেশের ভবিষ্যৎ নিয়ে আমরাও আজ চিন্তিত। পরস্পর বিরোধী দু’টি প্রধান রাজনৈতিক জোট আজ মুখোমুখী অবস্থান নিয়েছে। আগামী জাতীয় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে এক ভীতিকর পরিস্থিতির সৃষ্টি করা হচ্ছে।

তুলনামূলক রাজনীতি: রাজনীতির বিশ্লেষণ

দেশময় সংঘাত আর সহিংসতার অশনি সংকেত পাওয়া যাচ্ছে। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ নবম জাতীয় সংসদে একতরফাভাবে সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী পাশ করার পর থেকেই রাজনৈতিক সংকটে নতুন মাত্রা যোগ হয়েছে। আমরা বারবার রাজনৈতিক সংকট উত্তরণে ক্ষমতাসীনদের কাছে দাবী জানিয়ে আসছি।

দেশের প্রায় সব রাজনৈতিকদল এবং নাগরিকসমাজের প্রতিনিধিগণ সরকারী দলের প্রতি সংকট সমাধানের উদ্যোগ গ্রহণের কথা বলে আসলেও, ক্ষমতাসীনরা সঠিক কোন উদ্যোগ গ্রহণ করেনি। তারা দেশের নির্বাচন ব্যবস্থাকেই ধ্বংস করে ফেলেছে।

বিগত ১০ বছরে দেশে কোন সুষ্ঠু নির্বাচন হয়নি। স্থানীয় সরকারের নির্বাচনগুলোতেও জনগণ তাদের পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে পারেনি। ক্ষমতাসীনরা তাদের দলীয় লোকদের নির্বাচিত করার জন্যে এহেন কাজ নেই যা করেনি। নির্লজ্জভাবে মানুষের ভোটাধিকার কেড়ে নেয়া হয়েছে।

নির্বাচন কমিশন এবং প্রশাসন কেউই নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করেনি। ফলে নির্বাচনকে মানুষ এখন প্রহসন এবং তামাশা মনে করে। আগামীতে মানুষ আর তামাশা ও প্রহসনের নির্বাচন দেখতে চায় না।

স্মারকলিপিতে বলা হয়, বর্তমান ক্ষমতাসীন সরকার এবারও জাতীয় সংসদ বহাল রেখে নির্বাচন করতে চাচ্ছে। বর্তমান সংসদ বহাল রেখে নির্বাচন করলে নির্বাচন সুষ্ঠু হবে না বরং ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির মতো নির্বাচনের নামে তামাশা হবে। যে নির্বাচন অধিকাংশ রাজনৈতিক দল বর্জন করেছিল। জনগণও ভোট দিতে ভোটকেন্দ্রে যায়নি।

রং বিনা ভোটে ১৫৪জন হাস্যকরভাবে সংসদ সদস্য হয়ে গেছেন। যা গোটা দুনিয়ায় বাংলাদেশের ভাবমূর্তিকে কলঙ্কিত করেছে। দেশবাসী আর কোন তামাশার নির্বাচন মেনে নেবে না। তাই আমাদের দাবি, নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকারের বিল পাশ করা হোক এবং নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পূর্বে জাতীয় সংসদ ভেঙ্গে দিয়ে একজন নিরপেক্ষ ও নির্দলীয় ব্যক্তির হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করা হোক।

আর বর্তমান নির্বাচন কমিশন যে অযোগ্য এবং দলীয় আজ্ঞাবহ তাও প্রমাণিত হয়েছে। আমরা এই কমিশনের পদত্যাগ এবং নির্বাচনকালীন সরকারের অধীনে নিবন্ধিত সকল দলের মতামতের ভিত্তিতে নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনের দাবি জানাচ্ছি।

স্মারকলিপিতে আরও বলা হয়, আমরা চাই জনমনে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা দূর হয়ে সর্বত্র স্বস্তি ও শান্তি ফিরে আসুক। আমরা চাই দেশে প্রতিহিংসা, জিঘাংসা আর ধ্বংসের রাজনীতির অবসান ঘটুক। আমরা চাই সকলে মিলে ঐক্যবদ্ধভাবে দেশকে সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে নিতে।

আমরা চাই দেশের সকল নাগরিকের ভ্রাতৃপ্রতীম শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান। তাই আজকের স্মারকলিপির মাধ্যমে আমরা দেশের ক্ষমতাসীন এবং বিরোধী সকল রাজনৈতিক পক্ষকে দলীয় সংকীর্ণতার উর্ধ্বে উঠে সমঝোতা, সহনশীলতা ও উদারতার মধ্য দিয়ে দেশ ও জনগণের স্বার্থে বর্তমান সঙ্কট সমাধানে শান্তিপূর্ণ উদ্যোগ গ্রহণের আহ্বান জানাচ্ছি। মনে রাখতে হবে, আল্লাহ তায়ালা সীমালংঘনকারীদের পছন্দ করেন না।

আমরা বিশ্বাস করি, দেশের উন্নয়ন ও সুখ-সমৃদ্ধির পথে প্রধান বাধা খোদাদ্রোহী সমাজব্যবস্থা, দুর্নীতি ও সন্ত্রাস। নির্বাচন পদ্ধতি নিয়ে যে সংকট চলছে, এর চাইতে বড় সংকট হলো রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়ন।

এ সংকটের সমাধান না হলে, নির্বাচন যত সুষ্ঠু হোক না কেন জনগণের ভাগ্যের কোন পরির্বতন হবে না, যা বিগত দিনের কর্মকান্ডে প্রমাণিত। এতএব একটি সুখী-সমৃদ্ধশালী কল্যাণরাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে দুর্নীতি ও রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়নের বিরুদ্ধে আপনার সোচ্চার ভূমিকা আমরা প্রত্যাশা করছি।

কওমি মাদরাসা ম্যানেজমেন্ট সফটওয়্যার – বিস্তারিত জানুন

স্মারকলিপিতে ইসলামী আন্দোলন নেতারা আরও বলেছেন, রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়ন যেভাবে মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে, দুর্নীতি সন্ত্রাস যেভাবে তৃণমূল পর্যায়ে বিস্তার করেছে, রাজনৈতিক নৈরাজ্য ও প্রতিহিংসার আগুন যেভাবে ধেয়ে আসছে, তা যদি নির্মূল করা না যায় তাহলে বিভিন্ন সংঘাতপূর্ণ দেশের মত আমাদের দেশেও গৃহযুদ্ধ শুরু হয়ে যেতে পারে। তার আলামতই দিন দিন প্রকট থেকে প্রকটতর হচ্ছে।

আর এ সুযোগে আমাদের দেশে বিদেশি সম্রাজ্যবাদী ও আধিপত্যবাদী অপশক্তি সমূহ ঘাটি গেড়ে বসার সুবর্ণ সুযোগ পাবে। যার ফলে দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব হুমকির সম্মুখীন হতে পারে। এ অবস্থা থেকে উত্তরণের লক্ষ্যে একটি অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানে আপনার কার্যকর উদ্যোগ দেশবাসী প্রত্যাশা করে।

সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানে আমাদের দাবী সমূহ :

১. নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পূর্বে জাতীয় সংসদ ভেঙ্গে দিতে হবে।

২. সকল নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের মতামত নিয়ে নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার গঠন করতে হবে।

৩. বর্তমান নির্বাচন কমিশন বাতিল করে নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করতে হবে।

৪. তফসিল ঘোষণার পর থেকে নির্বাচিত সরকার ক্ষমতা গ্রহনের পূর্ব পর্যন্ত সশস্ত্রবাহিনী মোতায়েন করতে হবে এবং নির্বাচনের দিন সশস্ত্রবাহিনীর হাতে বিচারিক ক্ষমতা দিতে হবে।

৫. নির্বাচনে সকল দলের জন্যে সমান সুযোগ তৈরী করতে হবে। রেডিও, টিভিসহ সকল সরকারী বেসরকারী গণমাধ্যমে সবাইকে সমান সুযোগ দিতে হবে এবং রাজনৈতিক দলের নেতা কর্মীদের বিরুদ্ধে সকল ধরনের হয়রানী বন্ধ করতে হবে।

৬. দুর্নীতিবাজদেরকে নির্বাচনে অযোগ্য ঘোষণা করতে হবে।

৭. নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার বন্ধ রাখতে হবে।

৮. রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, জাতীয় সংহতি ও কার্যকর সংসদ প্রতিষ্ঠায় জাতীয় নির্বাচনে সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব পদ্ধতির (চ.জ) নির্বাচন ব্যবস্থা প্রবর্তন করতে হবে।

৯. কোটা সংস্কার আন্দোলন এবং নিরাপদ সড়ক আন্দোলনে গ্রেপ্তারকৃত সকল ছাত্রদের মুক্তি এবং তাদের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত সকল মামলা প্রত্যাহার করতে হবে।

১০. গণমাধ্যম নিয়ন্ত্রণের উদ্দেশ্যে প্রণীত বিতর্কিত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিল করতে হবে।

উল্লেখ্য, আজ ঢাকাসহ সারাদেশের জেলা প্রশাসক বরাবর এ স্মারকলিপি প্রদান করে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ।

৯ নভেম্বর সোহরাওয়ার্দীতে মহাসমাবেশ করবে জমিয়ত

-আরআর


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ