আওয়ার ইসলাম: প্রযুক্তি বিশ্বের তাক লাগানো এক আবিষ্কার, জিপিএস বা গ্লোবাল পজিশনিং সিস্টেম এর নাম হয়তবা আপনি এরমধ্যেই শুনেছেন। অনুসন্ধানী মানুষ কবুতরের মস্তিষ্কের গঠন থেকে এই আশ্চর্য জিনিস আবিস্কার করেছে।
আমেরিকার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় ১৯৭৭ সালে জিপিএস প্রযুক্তি আবিষ্কার করে। শুরুতে এর ব্যবহার একেবারেই সামরিক ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধ ছিল। পরে সাধারন মানুষের ব্যবহারের জন্য এই প্রযুক্তি উন্মুক্ত করে দেয়া হয়।
জিপিএস (GPS) কি?
জিপিএস (GPS) একটি কৃত্রিম উপগ্রহভিত্তিক যোগাযোগ ব্যবস্থা। যেকোনো আবহাওয়াতে সময়ের সাথে পৃথিবীর যেকোনো স্থির বা চলমান বস্তুর অবস্থান নির্ণয় করা এর প্রধান কাজ।
জিপিএস এক ধরনের একমুখী যোগাযোগ ব্যবস্থা, এর ব্যবহারকারীরা উপগ্রহ থেকে পাঠানো সঙ্কেত শুধুমাত্র গ্রহণ করতে পারে কিন্তু নিজেরা উপগ্রহে সঙ্কেত পাঠাতে পারে না।
আবিষ্কারের পরে মার্কিন সামরিক বাহিনী ও সামরিক পরিদপ্তর ধাপেধাপে এর উন্নয়ন ও ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। মার্কিনীরা ১৯৯৫ সালে ২৪টি স্যাটেলাইটের সমন্বয়ে সৃষ্ট নেটওয়ার্ককে পৃথিবীর সব জায়গা থেকে ব্যবহারযোগ্য একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ সিস্টেম হিসেবে ঘোষণা করে।
বিশ্বসেরা ১০০ আবিষ্কার ও আবিষ্কারক
অ্যামেরিকার হাওয়াইতে স্থাপিত স্যাটেলাইট ট্রেকিং ষ্টেশন থেকে মার্কিন সামরিক বাহিনী এই স্যাটেলাইটগুলোর নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। ভূপৃষ্ঠ থেকে প্রায় বিশ হাজার উচ্চতায় এইসব স্যাটেলাইট ৬টি অরবিটে দিনে দুবার করে পৃথিবীকে প্রদক্ষিণ করছে।
জিপিএস (GPS) কিভাবে কাজ করে?
পৃথিবীর উপর অনেকগুলো স্যাটালাইট স্থাপন করা আছে এবং এরা পৃথিবীর চারিদিকে অবিরাম চক্কর কাটিয়ে চলছে। এখন এই প্রত্যেকটি স্যাটালাইটে একটি অ্যাটমিক ক্লোক লাগানো থাকে।
এখন এই অ্যাটমিক ক্লোক কী? দেখুন অ্যাটমিক ক্লোক এমন একটি ঘড়ি যা ১ কোটি বছর পরও ঠিক সময় ধরে রাখতে সক্ষম, ১ সেকেন্ড বা ১ মিলিসেকেন্ড এরও সময় এদিক ওদিক হয়না কখনো।
এই অবস্থায় এই স্যাটালাইট গুলো অবিরাম পৃথিবীতে সিগন্যাল পাঠাতে থাকে। এবং কোন সিগন্যাল কখন পাঠানো হয় তার সাথে একটি টাইমও সেট করে পাঠিয়ে দেয়া হয় স্যাটালাইট থেকে। এবং যে সিগন্যাল ছাড়া হয় এর গতি হয় প্রতি মিনিটে ৫০ বাইটস। অর্থাৎ এটি অনেক ছোট এবং অনেক দুর্বল একটি সিগন্যাল হয়।
এখন আপনার মোবাইল ফোনে লাগানো থাকে একটি জিপিএস রিসিভার, GPS ট্রান্সমিটার কিন্তু থাকে না। এখন এই রিসিভার চেষ্টা করে বেশি বেশি করে স্যাটালাইট এর সাথে সম্পর্ক স্থাপন করতে এবং বেশি বেশি সিগন্যাল রিসিভ করতে।
যদি আপনার মোবাইলফোন কিংবা GPS ইউনিট ৩ টি স্যাটালাইট এর সাথে সম্পর্ক স্থাপনে সফল হয়ে যায় তবে এটি অনেক সহজেই আপনার সঠিক অবস্থান নির্ণয় করতে সক্ষম হয়ে যায়।
যখন আপনার ফোন স্যাটালাইট সিগন্যাল রিসিভ করে তখন সে জানে যে কখন সেই সিগন্যালটি পাঠানো হয়েছিলো, কোন স্যাটালাইট থেকে সিগন্যালটি এসেছিলো এবং স্যাটালাইট টির অবস্থান কোথায়।
এসব তথ্য থেকে নিজের অবস্থান এবং সময় বিয়োগ করে আপনার ফোনটি আপনাকে সঠিক অবস্থান জানিয়ে দেয়। যদি ৪ টি স্যাটালাইট সম্পর্ক কোনো GPS ইউনিট স্থাপন করতে সক্ষম হয় তবে এটি সমুদ্রতল থেকে আপনার অবস্থানের উচ্চতাও মাপতে সক্ষম হবে।
তো বন্ধুরা, এতো ছিল জিপিএস কীভাবে কাজ করে তার ব্যাখ্যা। কিন্তু আপনার ফোনের GPS তো আরো বেশি কাজ করে। আপনি যখন কোনো গাড়িতে বসে ফোনের GPS চালু করেন তখন সেখানে আপনার অবস্থানতো দেখাই বরং আপনার অবস্থানের পরিবর্তন এর সাথে সাথে GPS সেই পরিবর্তন লাইভ সো করে।
এখন এটি কীভাবে করে? দেখুন এই অবস্থায় আপনার মোবাইলফোন এর ব্যাটারি অনেক বেশি পরিমানে খরচ হতে থাকে। কেনোনা আপনার ফোনটি বারবার নতুন সিগন্যাল রিসিভ করতে থাকে। এবং অনেক সময় নতুন নতুন স্যাটালাইট এর সাথে সম্পর্ক স্থাপনের প্রয়োজন হয়।
ফলে আপনার ফোনটির এর প্রাপ্ত তথ্যগুলো বারবার রি-ফ্রেস করে। ফলে বেশি ব্যাটারি শেষ হতে পারে। আপনি যতো গতিতে গাড়ি চালাবেন আপনার ফোনের চার্জও ততো তাড়াতাড়ি শেষ হবে। কেনোনা আপনার ফোনটি ততো তাড়াতাড়ি নতুন সিগন্যাল ধরার চেষ্টা করবে।
ইউএস এয়ারফোর্স এই প্রযুক্তির উপর কাজ করে চলছে, একে আরো বেশি শক্তিশালী করার জন্য, এবং যাতে অনেক কম ব্যাটারি খরচে GPS ব্যবহার করা যায় তার জন্য।
এর সাথে ইউরোপিয়ান ইউনিয়নও একটি প্রযুক্তির জন্য কাজ করছে যেটি GPS এর সাথে কাজ করে আরো দ্রুত অবস্থান নির্ণয় করতে সাহায্য করবে।
সার্কিট হাউজ কী? কারা থাকে সার্কিট হাউজে?
-আরআর