আবদুল্লাহ তামিম: বিশ্বে টিকে থাকতে সামরিক শক্তির কোন বিকল্প নেই। ধনী কিবা গরিব সব দেশের জন্য এটা দ্রুব সত্য। সবল দেশগুলো সর্বদা ছোট দেশগুলোর ওপর কর্তৃত্ব দেখাতে চায়।
১ম বিশ্বযুদ্ধে অটোমান সাম্রাজ্য তথা তুরস্কের পতন হলে বিশ্বে মুসলিম শাসন দুর্বল হয়ে পড়ে। ১ম ও ২য় বিশ্বযুদ্ধের পর বিশ্বের মানচিত্রে ব্যাপক পরিবর্তন হয়। অনেক দেশের বিলুপ্তি ঘটে বা নতুন দেশের জন্ম হয়। সীমানা পরিধি পরিবর্তন হয় এমন দেশও প্রচুর।
গত শতকে যুদ্ধ-বিগ্রহে মুসলিম দেশগুলো সুবিধা করতে পারেনি। আফগানিস্তান রাশিয়া এবং আমেরিকার আক্রমনের শিকার হয়।ইরাকে হামলা করে আমেরিকা।
অটোমানদের পতনের পর থেকে ফিলিস্তিন মার খেয়েই যাচ্ছে। সুদান থেকে দক্ষিণ সুদান পৃথক হয়েগিয়েছে। পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশের জন্ম হয়েছে।
সাম্রাজ্যবাদিদের আক্রমণ এবং ভাতৃঘাতি অনেক যুদ্ধে জড়িয়েছে মুসলিম বিশ্ব। তন্মধ্যে ইরাক-ইরান উপসাগরীয় যুদ্ধ অন্যতম।
উপসাগরীয় যুদ্ধে কে ইন্ধন যুগিয়েছিল তা কারো অজানা নয়। অবশ্য সে যুদ্ধে সাদ্দাম হোসেনকে আমেরিকা প্রলুব্ধ করেছিল। অথচ শেষমেষ আমেরিকাই সাদ্দাম হোসেনকে ফাঁসির দড়িতে ঝুলিয়েছে।
সাদ্দাম হোসেনের পতনের পর সিরিজ আকারে বেশ কয়েকটি মুসলিম দেশ আগ্রাসনের শিকার হয়।
কয়েকটি মুসলিম দেশ অতীত অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে প্রতিরক্ষা খাতকে শক্তিশালী করে তুলছে। অত্যাধুনিক অস্ত্রশস্ত্র থাকাটাই এখন সামরিক শক্তি বোঝায় না। সামরিক শক্তির পাশাপাশি সৈন্যের শৃঙ্খলা, মনোবল এবং যুদ্ধ সক্ষমতা হচ্ছে অন্যতম শর্ত।
সৌদি আরব, ইরান, মালয়েশিয়া, তুরস্ক, মিশর, ইন্দোনেশিয়া, পাকিস্তান, নাইজেরিয়া, ইরাক ও সিরিয়া সামরিক ক্ষেত্রে বেশ শক্তিশালী।
তবে সিরিয়া, ইরাক ও নাইজেরিয়া অভ্যন্তরীণ সংঘাতের কারণে বর্তমানে দূর্বল রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে।
তুরস্ক : সামরিক শক্তিতে বিশ্বে তুরস্ককে ৮ম স্থানে রাখা হয়েছে। মুসলিম দেশগুলোর মধ্যে তুরস্ক শক্তিশালী বলে সমীহ করে পশ্চিমা বিশ্ব।
তুরস্ক নিজেরাই প্রয়োজনীয় অস্ত্র নির্মাণ করে থাকে। এর মধ্যে আছে সাজোঁয়া যান, কামান, হালকা ট্যাঙ্ক ও ড্রোনসহ কয়েক প্রকারের অস্ত্র।
দেশটির আছে শক্তিশালী নৌশক্তি। আকাশ যুদ্ধের সক্ষমতায় তারা স্বয়ংসম্পূর্ণ। সাম্প্রতি রাশিয়ার অত্যাধুনিক যুদ্ধবিমান দুইবার ভুপাতিত করে নিজেদের শক্তি জানান দিয়েছে।
পাকিস্তান : মুসলিম বিশ্বের একমাত্র পারমানবিক শক্তিধর দেশ পাকিস্তান। ক্ষেপনাস্ত্র প্রযুক্তিতে অগ্রগামী। যুদ্ধজাহাজ, সাবমেরিন ও অত্যাধুনিক যুদ্ধবিমান রয়েছে।
তবে সামরিক ড্রোন নির্মাণ এবং মহাকাশ প্রতিরক্ষায় ভারতের তুলনায় পাকিস্তান পিছিয়ে আছে।
পাকিস্তান শতকরা ৮০ ভাগ অস্ত্র চীন থেকে আমদানী করে থাকে। ইতিপূর্বে আমেরিকাসহ পশ্চিমাদেশ থেকে বিপুল অস্ত্র সংগ্রহ করেছে পাকিস্তান। এখন রাশিয়া থেকেও অস্ত্র আমদানি করতে তৎপর হয়েছে দেশটি।
ইরান : ইরান প্রায় ৩ দশক ধরে পাশ্চিমা বিশ্বের অবরোধ মোকাবেলা করছে। এছাড়া নব্বয়ের দশকে ইরাকের সাথে উপসাগরীয় যুদ্ধে লিপ্ত হয়েছিল।
অবরোধ ও যুদ্ধের ফলে ইরান সামরিক দিক দিয়ে দুর্বল হলেও এসব কারণেই তারা সামরিক দিক দিয়ে স্বয়ংসম্পূর্ণ হওয়ার চেষ্টা করেছে।
ইরান সামরিক শক্তি গোছাতে সাহায্য নিয়েছে আরেক পরাশক্তি সোভিয়েত ইউনিয়ন তথা বর্তমান রাশিয়ার।
বিপদের সময় কারো সাহায্য না চেয়ে বরং নিজ দেশের প্রতিরক্ষা শিল্পকে সমৃদ্ধ করতে চেষ্টা করেছে ইরান। ফলে গত ৩ দশকে ইরান সামরিক শিল্পে উল্লেখযোগ্য উন্নতি সাধন করেছে।
অত্যাধুনিক ট্যাঙ্ক, ভারী সাঁজোয়া যান, ক্ষেপনাস্ত্র, যুদ্ধবিমান, ড্রোন, হেলিকপ্টার গানশিপ, যুদ্ধজাহাজ, সাবমেরিন, গানবোর্ট, গোয়েন্দা উপকরণসহ নিজস্ব প্রযুক্তিতে প্রচুর যুদ্ধাস্ত্র নির্মাণ করছে ইরান।
বলা যায় ইরান এখন মধ্যপ্রাচ্যের একক বৃহৎ শক্তি। সম্প্রতি রাশিয়া থেকে এস-৩০০ ক্ষেপনাস্ত্র সংগ্রহ করেছে ইরান। এর মাধ্যমে তারা দেশের আকাশসীমা নিরাপদ রাখতে চায়।
মুসলিম দেশগুলোর মধ্যে একমাত্র ইরানই প্রতিরক্ষা শিল্পে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনের পথে রয়েছে।
ইরানের রয়েছে একটি সু-শৃঙ্খল প্রতিরক্ষা বাহিনী। প্রতিপক্ষের কয়েকটি সামরিক ড্রোন ভূপাতিত এবং ইলেকট্রনিক্স জ্যাম সৃষ্টির মাধ্যমে ভূমিতে নামিয়ে আনা একমাত্র ইরানের পক্ষেই সম্ভব হয়েছে।
এসে গেল যাদুকরী মাদরাসা ম্যানেজমেন্ট সফটওয়্যার
আগামী ৫ বছরে সামরিক শক্তিতে ইরান অনেক পশ্চিমা দেশকে পিছনে ফেলবে। এজন্য মুসলিম দেশগুলোর মধ্যে ইরানকেই সামরিক শক্তিতে শ্রেষ্ঠ বলে মনে করা হয়।
সৌদি আরব : বিশ্বে অস্ত্র আমদানিতে অর্থব্যায়কারী অন্যতম দেশ হচ্ছে সৌদি আরব। প্রতিবছর বিপুল পরিমাণ অর্থ তারা সামরিক অস্ত্র কিনতে ব্যয় করে।
দেশটিতে এমন কিছু অত্যাধুনিক সমরাস্ত্র রয়েছে যেগুলো আমেরিকার সেনাবাহিনীতেও ব্যবহার শুরু হয়নি। কিন্তু এসব অস্ত্র পরিচালনা ও দিক নির্দেশনার কাজে নিয়োজিত রয়েছে পশ্চিমা সামরিক বিশেষজ্ঞরা।
সৌদি সেনাদের দৃঢ় মনোবল এখনো গড়ে উঠেনি। ইরাক কর্তৃক কুয়েত দখলের সময় সৌদি আরবের খাবসি দখল এবং তৎপরবর্তী ঘটনা কিংবা ইয়েমেন যুদ্ধে সৌদি সেনাদের ব্যর্থতা এর সুস্পষ্ট প্রমান।
অত্যাধুনিক সমরাস্ত্র থাকলেও যুদ্ধ সক্ষমতার ঘাটতি রয়েছে সৌদি আরবের। সৌদি প্রতিরক্ষা বাহিনীতে বিভিন্ন দেশের সামরিক উপদেষ্টা রয়েছে।
মিশর : মিশরের সশস্ত্র বাহিনী শক্তিশালী ছিল। পশ্চিমা অস্ত্রের ওপর নির্ভরশীল এর প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা। এক সময়ের শক্তিশালী প্রতিপক্ষ ইসরাইলের সাথে ক্যাম্প ডেভিড চুক্তির সুবাদে পরিস্থিতির পরিবর্তন হয়েছে।
কওমি মাদরাসা ম্যানেজমেন্ট সফটওয়্যার – বিস্তারিত জানুন
ইসরাইল ও মিশর এখন বন্ধু রাষ্ট্র। মিশরের সাথে ইসরাইলের যুদ্ধের কোন সম্ভাবনা নেই। মিশরের প্রতিরক্ষা শিল্প ট্যাঙ্কসহ মাঝারি আকারের অস্ত্র নির্মাণ করে থাকে।
যুদ্ধের ঝুঁকি না থাকায় মিশরের প্রতিরক্ষা বাহিনী পরিচালিত হচ্ছে ঢিমেতালে।
মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়া : এশিয়ার শান্তিপূর্ণ দু’দেশ মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়া। প্রতিবেশীদের সাথে শান্তি ও সৌহাদ্যপূর্ণ অবস্থানে বিশ্বাসী।
তারপরও প্রতিরক্ষা শিল্পে দেশ দু’টি উল্লেখযোগ্য উন্নতি করেছে। সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনীও যথেষ্ট শক্তিশালী।
তারা হালকা অস্ত্র ও নৌযান তৈরি করে থাকে। তবে ভারী অস্ত্র বিশেষ করে যুদ্ধবিমান, ক্ষেপনাস্ত্র ও যুদ্ধজাহাজ বাইরের দেশ থেকে সংগ্রহ করে। সামরিক বিচারে উভয় দেশকে মাঝারি শক্তি হিসেবে বলা যায়।
আরও পড়ুন: প্রধানমন্ত্রীকে গণসংবর্ধনা দেবে কওমি আলেমরা
আপনার ব্যবসাকে সহজ করুন। – বিস্তারিত জানুন