আবদুল আজিজ ভারতের একজন কলামিস্ট ও গবেষক। ভারতের ইসলামপন্থীদের রাজনীতি, পিছিয়ে পড়ার কারণসহ বিস্তারিত ব্যাখ্যা করে একটি কলাম লিখেছেন কিনদিল পত্রিকায়। কলামটি আওয়ার ইসলামের পাঠকদের জন্য ভাষান্তর করেছেন আবদুল্লাহ তামিম।
ভারতের বর্তমান রাজনৈতিক অবস্থা বিশ্বের অন্যান্য দেশের মত নয়। ভারত অনেক বড় দেশ, অনেক রকমের রাজনৈতিক পরিস্থিতি রাজ্য জুড়ে বিরাজ করছে।
ব্যতিক্রমী পরিস্থিতিতে ইসলামি রাজনীতির জন্য প্রয়োজন অসাধারণ প্রদক্ষেপ গ্রহণ করা।
মূলত রাজনীতির জন্য পরিস্থিতি বুঝা দরকার হয়। ভারতের অবস্থা পর্যবেক্ষণ করে অবস্থার পরিপেক্ষিতে মুসলমান রাজনীতিবিদরা যদি পদক্ষেপ গ্রহণ করে তাহলে রাজনৈতিক অঙ্গনে তাদের অবস্থান দৃঢ় হবে বলে আসা করা যায়।
মুসলমানরা কী চায়? এটাই চায় যে দেশের প্রতিটি মানুষ যেনো নিরাপদ থাকে। তাদের জান মাল ও শিক্ষা-দীক্ষার ক্ষেত্রে কোনো ধরনের বাধা-বিপত্তি না ঘটে।
বর্তমানে ভারতের রাজনৈতিক অবস্থা অত্যন্ত নাযুক। আর এমন পরিস্থিতির মধ্যে নাযুক/কঠিন সিদ্ধান্ত নিলেই টিকে থাকা যাবে। না হয় ভারতে ইসলামি রাজনীতির অবস্থা আস্তে আস্তে ক্ষীণ হয়ে আসবে।
ইসলামি রাজনীতিবিদদের একথা বুঝা দরকার, পলিটিক্স ইজ পলিটিক্স। পলিটিক্স করেই ক্ষমতা দখল করতে হয়।
দ্বিতীয়ত, ভারতের মত দেশে ইসলামি রাজনীতি টিকিয়ে রাখতে বিরোধী দল ও মূল্যবান বড় বড় সংগঠনগুলোর মধ্যে ঐক্য গড়ে তোলার জন্য একত্রে চেষ্টা করা উচিত।
এই প্রচেষ্টায় যেমন আন্তরিকতা থাকা চাই সেই সাথে অন্য ধর্মের লোকদেরও সঙ্গে নিয়ে কাজ করা চাই।
তারপর জনমানুষের মন জয় করে নারী হোক পুরুষ হোক সবাইকে ভোট দিতে উদ্বুদ্ধ করা চাই। ও গণসচেতনতা তৈরি করা। মনে রাখতে হবে কাজ দিয়ে মানুষের মন জয় করতে হবে। মানুষ চায় উন্নয়ন অার তাদের অধিকার নিশ্চিত করা।
তাই রাজনীতির মাঠে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে হবে উন্নয়ন আর মানুষের সেবা নিশ্চিত করে। কারণ আগেই বলা হয়েছে বর্তমান ভারতের রাজনীতি আগের মত নেই। অনেক পাল্টে গেছে রাজিনীতির মাঠ।
তৃতীয় বিষয় হল, যারা বা যে গোষ্ঠী কোনো দল বা রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত নেই তাদের ভোট পেতে তাদের সব ধরনের সহায়তা করতে হবে।
এদিকে অাবার লক্ষ্য রাখতে হবে ভারত মূলত হিন্দুরাষ্ট্র। সেখানকার রাজনীতির অবস্থা অন্য কোনো মুসলিম দেশের মত নয়।
এদিকে লক্ষ্য করলেই বুঝা যায়, একজন মাওলানা টিভি চ্যানেলে মহিলার উপর হাত তুলেছে তাকে জেলে যেতে হয়েছে। অথচ বেপারটা কী ঘটেছিলো সবাই দেখেছে।
এ পরিস্থিতিতে আগামী নির্বাচনে নিজেদের বিষয়ে একে অপরের ঐক্য রাখা দরকার। বিজেপির বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে ধর্মনিরপেক্ষ প্রার্থীকে ভোট দিতে হবে।
বিজেপিকে পরাজিত করতে চার বছরের মোদি সরকারের ব্যর্থতার কথা উল্লেখ করে বিবৃতির আকারে পরিসংখ্যান বা বিবৃতিতে চিত্রটি তুলে ধরতে হবে।
কোন দল সমর্থনে নিজের দলের সুদূর পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হবে সেটা খেয়াল করে রাজনীতির মাঠে চলতে হবে।
ভারতের জনগণের মনে একটা বিষয় ইসলামি দলগুলোর ব্যাপারে আছে, তারা শুধু ইসলাম আর মুসলমানদের সমর্থন করে, তাদের উন্নতির দিকে লক্ষ্য রাখে। বাকিদের কেয়ার করে না।
মাদরাসার হিসাব নিয়ে দুশ্চিন্তায় ভুগছেন, এসে গেল ম্যানেজমেন্ট সফটওয়্যার
এ ভুল ধারণা মানুষের মন থেকে দূর করতে পারলে ইসলামি রাজনীতির জয় হবে। ভারত যেহেতু ইসলামি দেশ না, তাই সেবা আর মানব কল্যাণকে মূল বিষয় হিসেবে রাখতে হবে।
তাহলে ইসলামি রাজনীতি এগিয়ে যেতে পারবে বলে আশা করা যায়। মনে রাখতে হবে ধর্মের ভিন্নতার জন্য মানুষকে ঘৃণা করা যাবে না।
আল্লাহর রাসুল সা. দিনের খাতিরে বিধর্মীদের সঙ্গে লেনদেন সিয়াসাতি ব্যাপারে আলোচনা করেছেন। সম্পর্ক রেখেছেন।
মুসলিম লীগ স্বাধীনতার আগে ছিল, ১৯৩৭ সালের নির্বাচনে বাংলায় মুসলিম লীগ বিস্ময়কর সাফল্য অর্জন করে।
মোট নয়টি প্রদেশে মুসলমানদের জন্য সংরক্ষিত ৪৮২টি আসনের মধ্যে লীগ ১০৪টি আসন লাভ করে। মোট প্রাপ্ত আসনের এক তৃতীয়াংশেরও অধিক (৩৬টি) শুধু বাংলাতেই অর্জিত হয়েছিল।
মুসলিম লীগ আইন সভায় কংগ্রেসের পর দ্বিতীয় বৃহত্তম দল হিসেবে আবির্ভূত হয়।
১৯৩৭ সালে বাংলার মুখ্যমন্ত্রী এ.কে ফজলুল হক মুসলিম লীগে যোগদান করেন এবং এর ফলে তার মন্ত্রিসভা কার্যত মুসলিম লীগ মন্ত্রিসভায় পরিণত হয়।
বাংলার মুসলমানদের নেতা হিসেবে ফজলুল হক মুসলিম লীগের মঞ্চ থেকে উপমহাদেশের মুসলমানদের জন্য স্বাধীন আবাসভূমি দাবি করে লাহোর প্রস্তাব উত্থাপন করেন।
বাংলার মুসলিম জনমতের ওপর ১৯৪০ সালের লাহোর প্রস্তাবের প্রচন্ড প্রভাব ছিল।
১৯৭০ সালের পর আস্তে আস্তে ভারতে মুসলিম লীগের আধিপত্য কমে আসে। বাঙলায় অস্তিত্ব থাকলেও ক্রমে অস্তিত্ব হারায় ভারত থেকে।
বর্তমান সময়ে ভারতের জাতীয় দলে কোনো ইসলামি দল নেই। জাতীয় দলগুলো হচ্ছে, ০১.বহুজন সমাজ পার্টি ০২. সর্বভারতীয় তৃণমূল কংগ্রেস ০৩. ভারতীয় জনতা পার্টি ০৪. ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি ০৫. ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি ০৬. ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস। ০৭. জাতীয়তাবাদী কংগ্রেস পার্টি।
তাই বলা যায়, হিন্দুত্ব এখন যেভাবে ভারতের রাজনীতিতে শুধু প্ৰবল প্রভাব নয়, আধিপত্য বিস্তার করেছে, এটা এক ভয়াবহ ব্যাপার।
ভারতের প্রতিবেশী দেশগুলির জন্যও বিপজ্জনক। এই প্রতিক্রিয়াশীলতা পরাজিত করার জন্য শুধু রাষ্ট্রীয় স্বয়ং সেবক সঙ্ঘ (আরএসএস), বিজেপি বা নরেন্দ্ৰ মোদির সমালোচনা ও বিরোধিতাই যথেষ্ট নয়।
বাস্তবত এর কোন কাৰ্যকারিতাও নেই। ভারতের রাজনীতি আজ এ পর্যায়ে এসে দাঁড়ানো কোন অলৌকিক বা হঠাৎ ঘটে যাওয়া ব্যাপার নয়।
এটা মনে করাও বড় রকমের এক মূর্খতা। অকারণে কিছুই ঘটে না। কাজেই এর কারণ অনুসন্ধান ও সঠিক ব্যাখ্যা ছাড়া এর সমালোচনা ও বিরোধিতা তীব্র হলেও এর পরিবর্তন সম্ভব নয়।
বলাই বাহুল্য, ভারতীয় সমাজের মধ্যেই এর মূল প্রোথিত। ভারতের ইতিহাসের মধ্যেই এর কারণ অনুসন্ধান করতে হবে।
প্রাচীন ভারতে হিন্দুদের ইতিহাস চেতনা ছিল না বললেই চলে। এ কারণে ভারতে বেদ, উপনিষদ ইত্যাদি ধর্মগ্রন্থ ও রামায়ণ মহাভারতের মত মহাকাব্য থেকে নিয়ে অনেক উত্তম সাহিত্য রচিত হলেও ইতিহাস চর্চা ভারতীয়দের মধ্যে ছিল না।
এর জের হিসেবে পরবর্তীকালেও তাদের নানা বক্তব্য এবং আলোচনায় ইতিহাস বিষয়ে অজ্ঞতারই পরিচয় পাওয়া যায়।
ইতিহাস সম্পর্কে অজ্ঞতা এবং ইতিহাসের চেতনা না থাকার কারণেই হিন্দুদের মধ্যে ইসলাম ও মুসলমানদের বিরুদ্ধে অনেক বিভ্রান্তি ও মিথ্যা ধারণার জন্ম হয়েছে।
সেই থেকে ভারতের জনগণও ইসলাম ও মুসলমানদের শত্রু হয়ে আছে। তাই ভারতের রাজনীতিতে ইসলাম আনতে হলে বা রাজনৈতিকভাবে ইসলামি রাজনীতির প্রভাব ফেলতে হলে অবশ্যই কৈাশলে ইসলামি দলগুলোকে এগিয়ে যেতে হবে।
সম্পূর্ণ ফিতে নিন অ্যাকাউন্টিং ও ইনভেস্টরি সফটওয়ার