শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪ ।। ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ ।। ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিরোনাম :

সংসদে কওমি সনদের বিল; পাঁচ বিশিষ্ট আলেমের প্রতিক্রিয়া

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

রকিব মুহাম্মদ
আওয়ার ইসলাম

সোমবার ১০ সেপ্টেম্বর জাতীয় সংসদের ২২তম অধিবেশনে কওমি মাদরাসা সমূহের দাওরায়ে হাদিসের (তাকমিল) সনদ মাস্টার্স ডিগ্রির (ইসলামিক স্টাডিজ) সমমান প্রদান বিল সংসদে উত্থাপ করা হয়।

পরে বিলটি পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে পাঠানো হয় এবং আগামী সাত কার্যদিবসের মধ্যে এ বিষয়ে প্রতিবেদন পেশ করতে বলা হয়েছে।

বিলটি পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, আলেমদের দাবি ও সব শর্ত মেনে দারুল উলুম দেওবন্দের মূলনীতি অনুসারে এ স্বীকৃতির প্রস্তাব করা হয়েছে।

সংসদে কওমি সনদের বিল উত্থাপিত হওয়ায় কওমি মাদরাসার শিক্ষার্থী ও ওলামায়ে কেরাম শুকরিয়া জানিয়েছেন। তারই অংশ হিসেবে দেশের কয়েকজন বিশিষ্ট আলেমের মতামত ও অনুভূতি নিয়েছে আওয়ার ইসলাম।

আল্লামা আব্দুল হালীম বুখারী

[চট্টগ্রামের আল-জামিয়া আল-ইসলামিয়া পটিয়ার প্রধান পরিচালক ও শাইখুল হাদীস। এছাড়াও ইত্তেহাদুল মাদারিসিল কওমিয়ার মহাসচিব তিনি।]

কওমি মাদরাসা সনদের বিল মন্ত্রীপরিষদে পাশ হওয়ার পর আমি ব্যক্তিগতভাবে সরকারকে ধন্যবাদ জানিয়েছিলাম। আমি আশাবাদী ছিলাম, অতিদ্রুত সংসদ অধিবেশনেও বিলটি পাশ হবে।

আমি জানতে পেরেছি, গতকাল রাতে বিলটি সংসদে উত্থাপিত হয়েছে এবং সেখান থেকে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের স্থায়ী কমিটিতে পরীক্ষাপূর্বক ৭ দিনের জন্য প্রেরণ করা হয়েছে।

এজন্য সরকারকে আমার পক্ষ থেকে আবারো আন্তরিক ধন্যবাদ জানাচ্ছি। সাথে সাথে নিরিক্ষণ শেষে দ্রুত আইনটি পাশ করার জন্য অনুরোধ জানাচ্ছি।

মাওলানা নুরুল আমিন

[কওমি মাদরাসা শিক্ষাবোর্ড বেফাকের সহকারী মহাসচিব। জামিয়া আরাবিয়া ইমদাদুল উলুম ফরিদাবাদের মুহাদ্দিস]

দীর্ঘদিনের পরিশ্রমের ফল পেয়ে আমরা সবাই আনন্দিত। আল্লাহ তায়ালার অশেষ শুকরিয়া আদায় করছি। সেইসাথে কওমি মাদরাসার স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য ও স্বকীয়তা বজায় রেখে কওমি মাদরাসা সনদের বিল তৈরি করা এবং তা সংসদে উত্থাপন করায় পুরো কওমি অঙ্গনের পক্ষে থেকে প্রধানমন্ত্রীসহ সকলকে অনেক ধন্যবাদ জানাচ্ছি।

তিনি বলেন, আশা করছি, নতুন এ আইন পাশ হলে কওমি শিক্ষার্থীদের মেধার মূল্যায়ন হবে। তারা ইসলামের কাজে আরো বেশি অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে পারবে। দেশ ও জাতির কল্যাণে নিজেদের শ্রম ও মেধা বিলিয়ে বাংলাদেশকে আরো বেশি অগ্রসর করতে পারবে।

মাওলানা ইয়াহইয়াহ মাহমুদ

[কওমী শিক্ষাসনদ স্বীকৃতি বাস্তবায়ন পরিষদের সদস্য সচিব। জামিয়া ইসলামিয়া আযমিয়া দারুল উলুম রামপুরা’র মুহতামিম।]

দীর্ঘদিনের লালিত স্বপ্ন বাস্তবায়ন হচ্ছে; অবশ্যই আমরা অনেক খুশি। আলহামদুল্লিাহ! আল্লাহ তায়ালার অশেষ শুকরিয়া আদায় করছি। যে সমস্ত ওলামায়ে কেরাম এই কাজের সঙ্গে জড়িত ছিলেন, তাদের সকলকে অনেক শুকরিয়া।

সাথেসাথে আল্লাহ তায়ালা তাদের সাথে আমাকেও শ্রম দেওয়ার তাওফিক দিয়েছিলেন এজন্য আল্লাহর তায়ালার প্রতি বিশেষ শুকরিয়া।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, শিক্ষামন্ত্রীসহ সরকারের যে সমস্ত উর্ধ্বতন কর্মকর্তা কওমি মাদরাসা সনদের স্বীকৃতির পেছনে মেহনত করেছেন তাদের সবাইকে আন্তরিকভাবে ধন্যবাদ জানাচ্ছি।

তিনি বলেন, সংসদে যেহেতু বিল উঠেছে; অতিদ্রুত তা বাস্তবায়ন হবে এবং একটি সুশৃঙ্খল আইনের মাধ্যমে কওমি মাদরাসাসমূহ পরিচালিত হবে।

আমি আশাবাদী, বিল পাশ হওয়ার পর এই স্বীকৃতি প্রক্রিয়ার ইতিবাচক দিকগুলো আমাদের কওমি শিক্ষার্থীরা ধারণ করবে এবং দেশ ও জাতির কল্যাণে তাদের মেধা ও শ্রম ব্যয় করবে।

মাওলানা আব্দুস সামাদ

[কওমি শিক্ষক কল্যাণ সোসাইটির চেয়ারম্যান। মিরপুর দারুল হাবিব মাদরাসার শাইখুল হাদিস]

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সদিচ্ছা ও দেশের ওলামায়ে কেরােমের দীর্ঘ আন্দোলনের বিনিময়ে কওমি মাদরাসার সনদের স্বীকৃতি সংসদ পর্যন্ত উঠেছে, এটা অবশ্যই আমাদের জন্য খুশির সংবাদ।

ইতোপূর্বে অন্য সরকারের আমলে প্রজ্ঞাপন জারি হয়ে বাকি কাজ থেমে ছিল। কিন্তু মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী সরকারের প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী কওমি সনদের বিল সংসদে পাসের জন্য উত্থাপিত হয়েছে, আমরা এটাকে ইতিবাচক দৃষ্টিকোণ থেকেই দেখছি।

সাথেসাথে সরকারকে বিশেষভাবে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি।

তিনি বলেন, আমি আশাবাদী, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের স্থায়ী কমিটিতে পরীক্ষা নিরিক্ষার পর অতিদ্রুত এই বিল পাশ হয়ে আইনে পরিণত হবে। তবে সর্বশেষ সিদ্ধান্ত আসা না পর্যন্ত এখনো শঙ্কা রয়েছে বলেও জানান তিনি।

মাওলানা জমির মাহমুদ

[আল মাহমুদ ফাউন্ডেশনের অন্যতম ব্যবস্থাপক ও ইসলামী জনকল্যাণ সংস্থা কাতারের সহ সাধারণ সম্পাদক]

সরকার নিজ উদ্যোগে কওমি সনদের মান দিচ্ছে। কওমি মাদরাসা শিক্ষায় শিক্ষিত বিশাল জনগোষ্ঠির শিক্ষার একাডেমিক মান হওয়া দরকার।

এর মাধ্যমে রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ কাজের মৌলিক ধারায় আলেমদের অবদান রাখার পথটি সুগম হবে বলে মনে হয়। কওমি মাদরাসার চাওয়াও শতভাগ নিশ্চিত করা হয়েছে সংসদে উত্থাপিত বিলে।

স্বকীয়তা ও নিজস্বধারা বজায় রাখায় সরকারের স্বদিচ্ছার বহিপ্রকাশ দেখতে পেয়েছি। রাজনৈতিকভাবে সরকার এতে লাভবান হবে এবং বিশাল জনগোষ্ঠির ভোট নিজেদের পক্ষে রাখার সুদূর প্রসারী উদ্যোগও বলতে হবে এটিকে।

তবে ভয়ও আছে, তা সরকারের তরফ থেকে যতটুকু না- তারচেয়ে যাদের মান দেয়া হচ্ছে তাদের পক্ষ থেকেই বেশি।

তারপরও সচেতনভাবে ইখলাসের সঙ্গে স্বীকৃতিকে কাজে লাগাতে পারলে দেশ ও জাতির জন্য অবদান রেখে দুনিয়া ও আখেরাতে সফলতা অর্জন সম্ভব।

আরও পড়ুন: যা আছে সংসদে উত্থাপিত কওমি মাদরাসা বিলে

আপনার ব্যবসাকে সহজ করুন। – বিস্তারিত জানুন


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ