আবু তাহের
হুপার বেশ কয়েকদিন অস্বস্তিতে আছে। হল রুমের মাঝখানে বসে আছে ও। উপরে লিড লাইটের নীল আলো। টেবিলের ওপর মাথা রেখে ঝিমাতে লাগল হুপার। বেশিক্ষণ পারল না। উঠে রুমের বাহিরে এসে দাঁড়াল। এদিকটায় ঝলমলে আলো।
কিহে জন, চোখ এমন লাল কেন?
জন হুপার ভ্রু কুচকাল। ইদানিং চুলের ফাঁক দিয়ে তাহলে চোখ দেখা যায়। আবার তা লাল তাও বুঝে ফেলছে লোকজন।
ঝিমাচ্ছিলাম। তুমিও ঝিমাও এমন লাল হবে। মেকি একটা হাসি দিল হুপার।
বা দিকের সরু গলি দিয়ে এগিয়ে টয়লেটে উঁকি দিল সে। কয়েকজন আছে ভিতরে।
ধাৎ নিজের অজান্তে বলে উঠে সে।
শান্তিতে একটু প্রসাব করবো সে জো নেই।
কথাটা কেন জানি একটু জোড়েই বের হয়ে গেল। একজন ঘাড় ঘুরিয়ে পিছন ফিরল। আস্তে সটকে পড়ল জন। একটু পরে আসতে হবে।
কি ব্যাপার জন, ইদানিং তোমাকে টয়লেটের আশে পাশে দেখি।
চমকে উঠল জন। লিনিয়ার মুখোমুখি দাঁড়াতেই ফ্যাকাশে হয়ে গেল তার চেহারা।
অদ্ভুদ কথা বলো তো তোমরা! মানুষ কি টয়লেটে আসতে পারে না।
হ্যা অবশ্যই পারে। কেন পারবে না?
তাহলে এভাবে বলছ কেন?
না মানে, তোমার কি শরীর খারাপ?
কেন?
ঘন ঘন টয়লেটে আসছ তাই।
না ঠিক আছে, আমি ঠিক আছি।
লিনিয়াকে পাশ কাটিয়ে বেরিয়ে গেল জন। লিনিয়ার তার দিকে তাকিয়ে নিরবে মাথা ঝুকাল। কিছু সমস্যা অবশ্যই হয়ে তার। একটু পরে মিটিং। মিটিংয়ের মাঝে যদি বার বার টয়লেটে আসে ও তাহলেই সেরেছে।
মিনিট পাঁচেক বাদে আবার জন টয়লেটে ঢুকে পড়ল। দরজা ঢেলে হাই কমোডে বসে পড়ল। যে যাই বলুক। শরীরের ওপর প্রেসার দিয়ে লাভ নেই। বরং ক্ষতি।
হঠাৎ একটা সাইরেন বেজে উঠল। খানিক চমকে উঠল ও। মিটিং শুরু হবে। এটা তার পূর্ব সংকেত। এখনি হল রুমে গিয়ে জড়ো হতে হবে। ভাগ্যিস এখনি কাজটা সারা গেছে। তা না হলে কি বিপদে না পড়তো।
যে যার মত বসে পড়ছে। লিনিয়ার ডান দিকের একটা চেয়ার বাদে গিয়ে বসল জন। মাথা নিচু করে বসে আছে। চুলগুলো আবারও তার চেহারে ঢেকে দিয়েছে।
কেমন আছ তোমরা?
ডিকির সম্ভাষণে মাথা তুলল জন। চোখের সামনে থকে চুলগুলো সরিয়ে দিল।
আজকের মিটিংটা বেশি গুরুত্বপূর্ণ নয়। পূর্বের গবেষণায় তা দেয়া আরকি। তোমাদের মতামত নেয়া। নতুন পুরাতন কম্বিনেসন করা। এই আরকি।
হুপার কেমন আছ তুমি?
জন জানে ডিকি তাকে ভিন্ন চোখে দেখে। তাই একটু বাড়তি.....।
ভাল, আপনি কেমন আছেন স্যার?
বেশি ভালো না। তোমাকে নিয়ে চিন্তায় আছি। শুনলাম তুমি নাকি ইদানিং ঘন ঘন টয়লেটে যাচ্ছ? শরীর খারাপ হয়নি তো?
জনের মেজাজটা চড়ে গেল। কারা যে এই খবরগুলো রটায়? একবার পেলে চৌদ্দগুষ্টি উদ্ধার করতাম।
না স্যার, শরীর ভালো।
তাহলে এমন কেন হচ্ছে?
স্যার বিষয়টি আসলে ভিন্ন।
অনেকে এবার নড়েচড়ে বসল। ভিন্ন বিষয় কি জানার কৌতূহল অনেকেই দমন করতে পারছে না। একটু দম নিয়ে আবার বলা শুরু করল জন।
স্যার আমি স্বাভাবিকভাবেই টয়লেটে যাই। আর অতিরিক্ত যাবার কারণ হলো আমি হাই কমোডে বসতে চাই। লোকজন দেখলে ঠাট্টা করতে পারে তাই তাদের অলক্ষ্যে যাবার চেষ্টা করি। এজন্য একবারের জায়গায় বারবার যেতে হচ্ছে।
হাই কমোডে যাওয়ায় সমস্যা কী শুনি।
স্যার আমি বসে সিসিত করতে চাই। মানে প্রসাব।
হো হো করে হেসে উঠল অনেকে। লিনিয়া কিছুটা তীক্ষ্ণ চোখে তাকাল তার দিকে।
তুমি বসে প্রসাব কর! অবাক হলেন ডিকি।
জ্বি স্যার।
কিন্তু কেন! রাজ্যের বিষ্ময় চোখে মুখে ডিকির।
স্যার শাস্ত্রে আছে।
ভ্রু কুচকে তাকালো ডিকি। খুব মজা পেল জন। ডিকির ভ্রু নেই। কুচকালে কেমন যেন লাগে। তার ওপর ডিকিকে আবারও চমকে দেয়া গেল। লোকটাকে এখন গোল আলুর মত লাগছে।
কোন শাস্ত্রে আছে, শুনি? চিকিৎসা শাস্ত্রে না বিজ্ঞান শাস্ত্রে? আর শাস্ত্রে কি আছে?
স্যার বসে প্রসার করার কথা আছে মুসলিম শাস্ত্রে।
ধ্যাৎ, কি সব বাজে প্রলাপ বক তুমি? তোমাকে নিয়ে কিন্তু বিরাট সমস্যা হয়ে দাঁড়াচ্ছে জন। তুমি প্রায়ই নিয়মের বাইরে চলে যাও। কোথায় কোন শাস্ত্রে কি বলেছে তা নিয়ে তুমি এমন বিশ্রী কাণ্ড করছ যার কারণে তুমি হাসির পাত্র হচ্ছো। তাও আবার মুসলিম শাস্ত্র। নাক সিটকায় ডিকি।
স্যার চিকিৎসা শাস্ত্রেও আছে।
নড়ে বসলেন ডিকি। অনেকেই হাসির বন্ধ করে ফেলেছে এ কথা শুনে।
কী আছে তাতে?
স্যার দাঁড়িয়ে প্রস্রাব করলে প্রস্রাবের দূষিত পদার্থগুলি মূত্রথলির নিচে গিয়ে জমা হয়। অথচ বসে প্রস্রাব করলে মূত্রথলিতে চাপ লাগে, ফলে সহজেই ওসব দূষিত পদার্থ শরীর থেকে বেরিয়ে যায়। দীর্ঘদিন দাঁড়িয়ে প্রস্রাব করলে প্রস্রাবের বেগ ধীরে ধীরে কমতে থাকে। দাঁড়িয়ে প্রস্রাব করলে পেটের উপরের অংশে কোনো চাপ পড়ে না। ফলে দূষিত বায়ু স্বাভাবিকভাবে বের হতে পারে না। উল্টে তা শরীরের উপর দিকে উঠে যায়। এর ফলে শরীরের অস্থিরতা, রক্তচাপ, হৃদস্পন্দনের গতি বৃদ্ধি পায়।
দাঁড়িয়ে প্রস্রাব করলে প্রস্রাবের দূষিত পদার্থগুলি শরীর থেকে ঠিক মতো বেরিয়ে যেতে পারে না। সেগুলি মূত্রথলির নিচে গিয়ে জমা হয়। দীর্ঘদিন দাঁড়িয়ে প্রস্রাব করলে এই দূষিত পদার্থগুলি জমতে জমতে কিডনিতে পাথর সৃষ্টি করে।
ডিকির মুখ কিছুটা হা হয়ে গেছে। খপ করে মুখ বন্ধ করে ডিকি।
তুমার কথার পক্ষে প্রমাণ আছে? কোন গবেষণা কিংবা কোন রিপোর্ট?
আমার এক বন্ধু বলেছে। ও মেডিকেলে পড়ে।
মেডিকেলে পড়ে। ওর মাথাই এখন পর্যন্ত পাকেনি। ও কিভাবে বলবে? তুমি এমন বাজে বিষয় আর উপস্থাপন করবে না। আমার চাই গবেষণা রিপোর্ট। যাই হোক আমরা মিটিংয়ের মূল পর্বে যেতে চাই।
ডিকি কাগজপত্র মেলে ধরল টেবিলের ওপর। নানা বিষয়ে কথাবার্তা চলল। জন চুপ করে বসে রইল। ডিকির ওপর কোন রাগ হচ্ছে না। কারণ সে একটা গোল আলু। জন জানে লোকেরা খুব শিগগির এই উপকারগুলো জানবে আর তাতে সাড়া দেবে। আফসোস শুধু ডিকির জন্য। এই গোলআলু মার্কা লোকেরা গোয়ার থেকে যাবে আজীবন।
খুব দ্রুত মিটিং শেষ করে ডিকি রুম থেকে বেরিয়ে যায়। তার মাথায় জনের কথাগুলো ঘুরপাক খাচ্ছে। ছেলেটা কি সব শাস্ত্রের পেছনে পড়ছে। মাথা শেষ করে দিচ্ছে। অফিস থেকে বেড়িয়ে গাড়িতে গিয়ে উঠল ডিকি।
আইএমএস ভবনের দিকে যাও। প্রসেফসর টমাস হ্যাংকের সাথে দেখা করব।
ড্রাইভার কথা মতো গাড়ি ঘুরাল। ডিকি ভাবতে লাগল। প্রফেসরের সাথে আলাপ করা দরকার। নতুন কোন গবেষণায় জনের এই তথ্য আবিস্কৃত হলো কিনা?
আইএমএসের সাথে গাড়ি থামতেই ডিকি সোজা লিফটের পথ ধরল। তের তলায় লিফট যখন থামল ডিকির কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমতে শুরু করেছে। উত্তেজনায় কাপছে সে।
কিহে প্রফেসর কেমন আছো?
আরে ডিকি বস। হঠাৎ আমার এখানে। শরীর খারাপ হয়নি তো।
না। একটা বিষয় জানার জন্য আসলাম।
বসো। কী বিষয়?
তোমরা কি ইদানিং লোকজনদের বসে প্রসাব করার উপদেশ দাও।
হ্যাঁ, দেই তো। কেন?
হঠাৎ ডিকির চোয়াল নিচের দিকে ঝুলে যায়। হা করে থাকে সে। প্রফেসর কী বলছে এসব।
হা করে আছ কেন? সমস্যা কী এতে?
না সমস্যা নেই, কেন দাও।
নানা উপকার এতে। দাঁড়িয়ে প্রসাব করলে শরীরে বেশ কিছু সমস্যা হয়। আমাদের নতুন গবেষণায় এই বিষয়গুলো উঠে এসেছে।
ডিকি আর কিছু শোনার আগ্রহ হারিয়ে ফেলল। উঠে দাঁড়াল সে।
কোথায় যাচ্ছ? উপকারিতাগুলো শুনে যাও।
আরেকদিন শুনব। আমার একটা জরুরি কাজের কথা মনে পড়েছে।
দ্রুত পা চালায় ডিকি। সোজা এসে গাড়িতে উঠে সে। মাথাটা ঝিম ঝিম করছে। একবার টাক মাথায় হাত বুলায়।
স্যার শাস্ত্রে আছে, বুঝলেন।
কে কথা বলে? চমকে ওঠে ডিকি।
ড্রাইভার ঘার ঘুরিয়ে তাকায়। স্যার কিছু বললেন।
তুমি কি কিছু বলেছ?
না স্যার।
ডিকির গাড়ির পিছন দিকে একবার উঁকি দেয়। কেউ নেই। তবে কে বলল?
-আরআর