যিয়াদ বিন সাঈদ
সাব্বির জাদিদ। এখন তিনি আর সদ্য প্রস্ফুটিত কোনো গোলাপের নামই নন। বহুকাল ধরে বহু মনে জ্বলতে থাকা একটি নক্ষত্রই যেন হয়ে গেছেন। লোকমুখে, জনারণ্যে তিনি ক্রমাগত দিয়ে যেতে পারছেন ছায়া। শেখাচ্ছেন পদে পদে লেখালেখির ষোলকলা। ছোটো ছোটো কাগজগুলোয় ছোটগল্প লিখে তিনি হঠাৎ করেই আমাদের এ রাজ্যে দখল করে নিতে পেরেছেন মুকুটহীন এক সাম্রাজ্য।
এর মাঝে কখনো চেয়েছেন ভিন্নতা। আবার কখনোবা তিনি আদিমতা দিয়ে চমকে দিতে চেয়েছেন সবাইকেই। অনন্য প্রতিভার এক ধারক এ সাব্বির জাদিদ। ‘একটি শোক সংবাদ’ অথবা ‘পাপ’— এগুলো তার শ্রেষ্ঠ কাজগুলোর অন্যতমই বলা যায়।
অনুমেয়, ছোটগল্পে যেমন তিনি পারদর্শী, তেমনই ধাঁর আছে তার উপন্যাসগুলোয়।
উপন্যাস নির্মাণে তার আরও একটি উল্লেখযোগ্য কাজ হচ্ছে ‘জীবনঘড়ি’। ২০১৪ সালে জনপ্রিয় সাপ্তাহিকী ‘লিখনী’র ঈদ সংখ্যায় প্রকাশিত এ উপন্যাসটির মাধ্যমেই লেখক সাব্বির জাদিদ ঔপন্যাসিক হিসেবে পরিচিত হন। পাঠক তাকে গল্পকার পরিচয়ের পাশাপাশি উপন্যাস নির্মাতা হিসেবেও চিনতে থাকে।
‘জীবনঘড়ি’ প্রকাশিত হবার পর পরই পাঠকমহলে অভাবনীয় সাড়া ফেলতে সক্ষম হয়েছিলো। সাপ্তাহিক লিখনীর ঈদ সংখ্যার কপি ফুরিয়ে গেলেও উপন্যাসের চাহিদা মোটেও কমছিলোনা। ক্রমবর্ধমান এ উৎসুক পাঠকের আবদার ছিলো— লেখক যেন তাদের কাছে উপন্যাসের ফটোকপি হলেও পৌঁছানোর ব্যবস্থা করেন।
পাঠকমহলে সমাদৃত এ উপন্যাস সম্পর্কে ঔপন্যাসিক আফিফা মারজানা বলেছিলে— ‘জীবনঘড়ি’ পাঠকের মনে অভূতপূর্ব এক বেদনার ঢেউ তুলতে সক্ষম হয়েছিলো। কাঁদাতে বাধ্য করেছিলো প্রতিটি পাঠককে।
পাশাপাশি কবি ও গল্পকার সালাহউদ্দীন জাহাঙ্গীর বই সম্পর্কে মন্তব্য করতে গিয়ে এক ফেসবুক স্ট্যাটাসে লেখককে স্যালুট জানিয়েছিলেন এবং বলেছিলেন, এ বই আমাকে ক্রমাগত কান্নার দিকে ঠেলে দিচ্ছে। আমি কান্না থামাতে পারছিনা।
আর কবি ও গল্পকার সাইফ সিরাজের মতে ‘জীবনঘড়ি’ উপন্যাসের মাধ্যমে সাব্বির জাদিদ জনপ্রিয় হবে। আলোড়ন তুলবে তার এ উপন্যাস।
‘জীবনঘড়ি’ নতুন করে আবারও প্রকাশ হচ্ছে। বই আকারে উপন্যাসটি প্রকাশ করছে বইকেন্দ্র। সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহ থেকেই ইসলামী টাওয়ার, আজিজ সুপার মার্কেট ও পাঠক সমাবেশ সহ বেশকিছু বুকশপ থেকে সংগ্রহ করা যাবে। সংগ্রহ করা যাবে রকমারি ও অনলাইন শপ খিদমাহ ডটকম থেকে৷
উপন্যাসটিক যেভাবে পাঠকের জন্যে উপভোগ্য করা হয়েছে তার আংশিক আমরা বইয়ের ফ্ল্যাপ থেকে জেনে নিতে পারি—
প্রতিটি পরিবার একেকটি স্বপ্নের বাড়ি। সন্তান হলো সেই স্বপ্নবাড়ির একেকটি জানলা। যে জানলা দিয়ে বাবা-মা পৃথিবী দেখেন। সোবহান সাহেব আর সালেহা বেগমের অমন চারটি জানলার নাম কাজল, টুলু, ঝুম্পা আর ছোটকু। সোবহান সাহেব এই চার জানলা দিয়ে চার রকম পৃথিবী দেখার স্বপ্ন বোনেন।
কিন্তু জীবনের ব্যর্থতায় মা-বাবার স্বপ্নের কক্ষপথ থেকে একে একে ছিটকে পড়ে কাজলরা। টুলু হয় ঘর পলায়নকারী। সমাজের চাপে নিরুদ্দেশ যাত্রা করে ঝুম্পা। প্রিয় বুবুকে হারিয়ে ছোটকুর জীবনে নামে অন্য সন্ধ্যা। অবশেষে, চার সন্তানের জনক সোবহান সাহেবের অবস্থা হয় সেই বালকের মতো, যে দুচোখ ভরা স্বপ্ন নিয়ে আকাশে ঘুড়ি তুলেছিল। কিন্তু প্রবল বাতাসের ঝাপটায় সুতো ছিঁড়ে গেছে। বালকের হাতে আছে কেবল নাটাই।
জীবনঘড়ি নাটাই হাতে শূন্যে তাকিয়ে থাকা অমনই এক দুঃখী বাবার গল্প। যে নাটাইয়ের নিয়ন্ত্রণে কোনো ঘুড়ি নেই। নেই কোনো সুতোর টান।
এখন ব্যবসার হিসাব হবে সফটওয়ারে – বিস্তারিত জানুন
-আরআর