রকিব মুহাম্মদ
আওয়ার ইসলাম
প্রায়ই হজে গমনের পর হাজীদের মৃত্যু সংবাদ শোনা যায়। হজে যেতে ইচ্ছুক বা তাদের আত্বীয়স্বজন অনেকেই জানেন না সৌদি আরবে পৌঁছে হাজির মৃত্যু হলে পরবর্তী করণীয় কী। এ সমস্ত ক্ষেত্রে হজে যাওয়ার পর কোন হাজির মৃত্যু হলে মৃতদেহ দেশে পাঠানো হবে নাকি তা পবিত্র ভূমিতেই দাফন করা হবে -এ জিজ্ঞাসা অনেকের।
এই সম্পর্কে সঠিক তথ্যটি হলো, সকল হজ যাত্রী হজে যাবার আগে এই সংক্রান্ত একটি আবেদনপত্রে অঙ্গীকার করেন যে, যদি সৌদি আরবের ভূমি বা আকাশে তার মৃত্যু হয় তবে সেখানেই তাকে দাফন করা হবে। মৃতদেহ দেশে পাঠানো বা এই সংক্রান্ত কোন সুপারিশ তার পরিবার সৌদি সরকারকে করতে পারবেন না। আর করলেও তা সৌদি সরকারের নিকট গ্রহনযোগ্য হবে না।
সর্বশেষ খবর অনুযায়ী, এ বছর বাংলাদেশ থেকে ১ লাখ ২৭ হাজার ১৯৮ জন হজ পালন করার জন্য সৌদি আরব গিয়েছেন। এদের মধ্যে সরকারিভাবে ৭ হাজার ১৯৮ জন এবং বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় সৌদি আরব গমন করেছেন ১ লাখ ২০ হাজার হজযাত্রী।
হজ বুলেটিন অনুসারে, বিভিন্ন কারণে মৃত্যু হওয়া ৫২ জনের মধ্যে ৪৩ জন পুরুষ ও ৯ জন নারী। এদের মধ্যে মক্কায় মারা গেছেন ৪৩ জন, মদিনায় ৬ জন, জেদ্দাতে ২ জন এবং মিনায় একজন।
আরও পড়ুন: ঈদের সুন্নাতসমূহ ও জরুরি মাসআলা-মাসাইল
হজের সময়ে হাজীদের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত হওয়া মাত্রই স্থানীয় চিকিৎসালয় বা বাংলাদেশ হজ কার্যালয়ের চিকিৎসা কেন্দ্র থেকে সার্টিফাইড চিকিৎসকের সনদপত্র নিতে হয়। বাড়ি, রাস্তা, হোটেল বা হাজীদের নির্ধারিত যেকোন জায়গায় মৃত্যুবরণ করলে এই কাজটি সবার আগেই করা হয়।
তারপর মৃতদেহটি শনাক্তকরণের কাজটি করেন মৃতের আত্মীয়, পরিবার, প্রতিবেশী বা এমন কেউ যে ওই হাজীকে চেনেন। আর তা সত্যায়িত করতে মোয়াল্লেম অফিস থেকে ছাড়পত্র সংগ্রহ করতে হয়। এরপর বাংলাদেশ হজ কার্যালয় থেকে সনদপত্র নিতে হয়। তারপর আসে গোসল ও জানাজার বিষয়টি।
মক্কার রুশাইফায় রযেছে লাশের গোসল ও কাফন পরানোর ব্যবস্থা। হজপালনকারীদের লাশ বহন করার জন্য সরকারি গাড়ির ব্যবস্থা রয়েছে। মৃত ব্যক্তির ওয়ারিশের এখানে কোনো কিছু করতে হয় না।
মসজিদে হারামে জানাজার জন্য লাশ গাড়িতে করে কাবা শরিফের দক্ষিণে নবী করিম সা.-এর জন্মস্থানের পাশে বাবে ইসমাইলের কাছে রাখা হয়। ফরজ নামাজের পর ইমাম সাহেব লাশ রাখার স্থানে এসে জানাজার নামাজ পড়ান।
মক্কার মসজিদে হারাম ও মদিনার মসজিদে নববীতে প্রায় প্রতি ওয়াক্ত ফরজ নামাজের পর এক বা একাধিক জানাজার নামাজ হয়ে থাকে। জানাজার নামাজ ফরজে কেফায়া। ফরজ নামাজ শেষে ‘আস সালাতু আলাল আমওয়াতি ইয়ারহামু কুমুল্লাহ’ বা এই জাতীয় শব্দ বলে জানাজার নামাজের ঘোষণা দেওয়া হয়।
হজযাত্রী এবং আশপাশের এলাকার স্থানীয় সৌদি নাগরিক মারা গেলে তাদের জানাজা এই দুই মসজিদে হয়ে থাকে। কোনো কোনো ওয়াক্তে একাধিক জানাজাও হয়ে থাকে। হজযাত্রীরা ফরজ নামাজের পর সঙ্গে সঙ্গে সুন্নত নামাজ শুরু না করে কিছুক্ষণ অপেক্ষা করেন জানাজার জন্য। এটাই রীতি।
ব্যবসার হিসাব নিকাশ এখন হাতের মুঠোয়- ক্লিক
কোন হজযাত্রী যদি মক্কায় অবস্থানকালে ইন্তেকাল করেন তবে তার জানাজা হয় মসজিদুল হারামে। আর যদি হাজী মদিনায় ইন্তেকাল করেন সেক্ষেত্রে মসজিদে নববীতে তার জানাজার ব্যবস্থা নেয়া হয়। এছাড়া জেদ্দা বা অন্য কোন স্থানে হাজীর মৃত্যু হলে সেখানকার স্থানীয় মসজিদে তার জানাজা হয়ে থাকে। মক্কায় জানাজা হলে মক্কার শারায়ে কবরস্থানে আর মদিনায় জানাজা হলে জান্নাতুল বাকি বা জেদ্দা কবরস্থানে হাজীদের দাফন করা হয়ে থাকে।
সৌদি আরবে বসবাসকারী বাংলাদেশি ও সেখানকার স্থানীয় বাসিন্দাদের থেকে জানা যায় যে, হজযাত্রীদের কেউ মারা গেলে মৃতের লাশ গোসল থেকে শুরু করে দাফন পর্যন্ত প্রতিটি কাজ সম্পন্ন করার দায়িত্ব সৌদি সরকার গ্রহণ করে। এর জন্য আলাদা আলাদা বিভাগ রয়েছে।
বাংলাদেশি হজ কার্যালয়ের বরাতে জানা গেছে যে, প্রতিদিনই বাংলাদেশ থেকে আগত হজযাত্রীদের ছবি, পরিচয়, তথ্য, অসুস্থ ও মৃত হাজীর নাম আপডেট করা হচ্ছে www.hajj.gov.bd এই সাইটে। যে কেউ চাইলেই এই ওয়েবসাইটে গিয়ে মৃত হাজিদের ব্যাপারে খোঁজখবর নিতে পারবেন।
তথ্যসূত্র: ইন্টারনেট
আরও পড়ুন: ইন্দোনেশিয়া থেকে সাইকেল চালিয়ে হজে পুরো পরিবার