হামিম আরিফ: মন্ত্রিসভায় কওমি মাদরাসার সনদের স্বীকৃতির আইন অনুমোদন হওয়ায় এর বিরোধিতায় নেমেছে কথিত সুন্নী আন্দোলন নামের মাজারপন্থী একটি গোষ্ঠী। নিজেদের স্বার্থ হাসিলের উদ্দেশ্যে এরা দেশের লাখ লাখ শিক্ষার্থীর স্বার্থ পরিপন্থী কাজে যুক্ত হয়েছেন।
গত ১৩ আগস্ট মন্ত্রিসভায় কওমি সনদ আইন পাস হওয়ার পর ১৭ আগস্ট রাজধানীর প্রেসক্লাব ও চট্টগ্রামের আন্দরকিল্লায় মানববন্ধন করেছে এ গোষ্ঠী। যেখানে যৌক্তিকর কোনো কারণ উত্থাপন না করেই তারা স্বীকৃতি বাতিলের দাবি তুলেছে।
সুন্নী আন্দোলন নামের এ দলটি নিজেদের হকপন্থী ও প্রকৃত ইসলামপন্থী দাবি করলেও মানববন্ধনে পর্দাহীন নারীদের ব্যবহার করতে দেখা গেছে।
গত ১৩ আগস্ট প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার বৈঠকে কওমি মাদরাসার সর্বোচ্চ স্তর দাওরায়ে হাদিসকে মাস্টার্সের সমমানের আইন পাস হয়।
এর আগে ২০১৭ সালের এপ্রিলে গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তিনশতাধিক আলেমের উপস্থিতিতে দাওরায়ে হাদিসকে মাস্টার্সের সমমান ঘোষণা করেন।
সে ঘোষণার পরও মাজারপন্থী গুটি কতক লোক রাজধানীতে মিছিল করেছিল স্বীকৃতির বিরুদ্ধে। যদিও তাদের সে দাবি ভ্রুক্ষেপ করেনি কেউ।
মজার ব্যাপার হলো, দেশে হাজারও অপরাধ কর্ম হয়, কিন্তু সুন্নী আন্দোলনের ব্যানারে সেসব নিয়ে সারা বছর কোনো প্রতিবাদ চোখে না পড়লেও, কওমি স্বীকৃতির বিরুদ্ধে তারা মাঠে নেমেছেন।
তবে কওমি মাদরাসা ভিত্তিক দেশে ২০ লাখ শিক্ষার্থীর বিপরীতে গুটি কয়েক কর্মীর এ দলটি কেন স্বীকৃতির বিপক্ষে তা সরকারকে খতিয়ে দেখার অনুরোধ করেছেন আলেমগণ।
জামিয়া কুরআনিয়া আরাবিয়া লালবাগের মুহাদ্দিস ও টিভি আলোচক মুফতি সাখাওয়াত হোসাইন রাজী বলেন, সুন্নী মানে তো সুন্নতের অনুসারী। ওরা তো আসলে সুন্নতের অনুসারী নয়। ওদের চেহারায় দাড়ি নেই। ওরা নামাজ ঠিক মত আদায় করে না। ওরা মাদক সেবন করে। পর্দার বিধান মানে না, নারী পুরুষ একসঙ্গে মাখামাখি করে।
তিনি বলেন, গান বাজনা করা হচ্ছে ওদের বিনোদন। কুরআন পড়তে পারে না কুরআন অনুযায়ী আমল করে না। ওদেরকে ওদের গুরুরা মাঠে নামিয়েছে। যারা ধর্মের নামে সুন্নীর নামে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খুলে বসেছে।
তিনি বলেন, এই তথাকথিত সুন্নীদের দিকে একটু ভালো করে দেখুন! ওদের চেহারায় রাসুলুল্লাহর সুন্নাহ নাই, আবার ওরা আলেমদের গালি দেয়। ওদের দেখতে বাংলা ভাই জেএমবির কর্মীর মত লাগে, আবার ওরা জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে শ্লোগান দেয়।
তিনি বলেন, ওরা ভাড়ায় খাটতে এসেছে নিশ্চয়ই। কারণ ওদের কাজ তো এটা না। ওদের কাজ হচ্ছে সারাদিন মাযারে বসে গাঁজা টানা। সুন্নী নামের আড়ালে মাদকের ব্যবসা করা।
তিনি প্রত্যেক অঞ্চলে সুধী সমাজকে নিয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে ওদেরকে প্রতিহত করার আহ্বান জানিয়ে বলেন, ওদেরকে শুধু আলেমদের বিরুদ্ধেই মাঠে নামানো হয়, দ্বীন ও ইসলামের কোন বিষয় নিয়ে আজ পর্যন্ত ওরা মাঠে নামেনি।
এদিকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এদের ব্যাপারে মুখ খুলছেন আলেম উলামা। সাধারণ মানুষও নারীদের ব্যবহার করে মিছিল করানোকে ভালোভাবে দেখছেন না।
বিশিষ্ট আলেমে দীন মাওলানা আবদুল ওয়াহহাব বলেন, তথাকথিত কিছু সুন্নি নামধারী ভন্ডরা কওমি সনদের স্বীকৃতির বিরোধিতা করতে মানুষ না পেয়ে স্ত্রী ও কন্যাদের নিয়ে রাস্তায় নেমেছে। এদের বুদ্ধির দৈন্যদশা দেখে হাসি পায়।
ব্যবসার হিসাব নিকাশ এখন হাতের মুঠোয়- ক্লিক
জামিয়া ইসলামিয়া রওজাতুল উলুম বাউনিয়াবাদ, ঢাকার প্রিন্সিপাল মুফতি শামসুদ্দোহা আশরাফী বলেন, কওমি সনদের স্বীকৃতিতে তাদের এত জ্বালাতন কেন? এটা কোন ধরনের সুন্নিয়্যতের বহিঃপ্রকাশ?
ধিক্কার তোমাদের, যারা সুন্নী নামের অন্তরালে যুগের পর যুগ এ জাতির সাথে গাদ্দারি করেছো। মনে রেখ তোমাদের এ প্রতিহিংসা উলামায়ে কওমিয়াকে কিছুই করতে পারবে না। বরং নিজেরাই জ্বলে পুরে ছারখার হবে।
বিশিষ্ট আলেম ও লেখক মাওলানা জাহিদ মেহজাদ বলেন, যেসব হুজুর স্বীকৃতির বিপক্ষে ছিলেন তারা দেখুক এটা কতোটা দরকারি ছিল! দেখুন, ভণ্ডরা ক্ষেপে উঠেছে কওমি সনদের সরকারি স্বীকৃতির বিরুদ্ধে! কারণ, তারা বুঝে গেছে, কওমির সনদ কার্যকর হলে তারা যে ভণ্ডামির রমরমা ব্যবসা ফেঁদেছিল এতোদিন, তার দিন ফুরিয়ে যাবে।
তিনি বলেন, এটা না হলে, আর কী কারণ থাকতে পারে তাদের বিরোধিতার! কওমি শিক্ষার্থীরা কি এদেশের নাগরিক নয়?
এই ইসলাম বিরোধী মাজার পূজারিরা কওমির আলেম ওলামাদের বলছে ইসলাম বিনাশী শক্তি, অথচ কওমি স্বীকৃতি বিরোধী আন্দোলনে তারা দেখুন যুব মহিলাদেরও নিয়ে এসেছে!
ব্যানার ধরার লোক নেই কওমি স্বীকৃতি বিরোধী ছাত্রসেনার মানববন্ধনে
-আরআর