মুফতি মুহাম্মাদ শোয়াইব
সম্প্রতি ইসরাইলি কারাগার থেকে মুক্তি পেয়েছেন আলোচিত ফিলিস্তিনি তরুণী আহেদ তামিমি। তিনি মুক্তি পেলেও এখনও হাজার হাজার ফিলিস্তিনি নারী বন্দি আছেন ইসরাইলি কারাগারে। এক গবেষণায় দেখা গেছে ১৯৬৭ সাথে থেকে এ পর্যন্ত ইসরাইলিদের হাতে ১৫ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি নারী বন্দি হয়েছে। বর্তমানেও কয়েক হাজার নারী যায়নবাদীদের কারাগারে বন্দি রয়েছেন। যাদের মধ্যে ১৮ বছরের নিচের তরুণীও রয়েছেন অনেক। ফিলিস্তিনের বন্দি ও স্বাধীনতা সংস্থার এক প্রতিবেদনে এসেছে: ২০১৬ সালের অক্টোবর মাসের তৃতীয় ইন্তিফাদার পর থেকে ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত ইসরাইলি সেনারা ২৯৫ জন ফিলিস্তিনি নারীকে বন্দি করেছে।
এসকল বন্দিদের বিভিন্ন ধরণের শারীরিক নির্যাতন, নির্জন কারাবাস, পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাৎ থেকে বঞ্চিত রাখা, মেডিকেল সেবার অবহেলা এবং আপত্তিকর নিরীক্ষা ইত্যাদি লোমহর্ষক বিবরণ উঠে এসেছে সম্প্রতি মুক্তি পাওয়া আরেক বন্দি ইয়াসমিন আবু সুরুরের বর্ণনায়।
চলতি বছরের শুরুর দিকে ইসরাইলি সৈন্যের হাতে গ্রেফতার হয়েছেন ইয়াসমিন আবু সুরুর। আয়েদা শরণার্থী শিবির থেকে গ্রেফতার হওয়ার পর প্রথমে তাকে তিন মাসের জন্য প্রশাসনিকভাবে আটক দেখানো হয়। এরপর তিনি আরও পাঁচ মাস জেল খাটেন। পাঁচ মাসে তিনি ফিলিস্তিনি নারীদের বন্দি জীবনের দুঃখজনক অনেক ঘটনা নিজ চোখে প্রত্যক্ষ করেন।
তিনি বলেনঃ ফিলিস্তিনি নারী বন্দিরা ইসরাইলি বন্দিদশা থেকে মুক্তির জন্য যে কোনো বিনিময় চুক্তি করতেও রাজি আছেন তারা। তাই ফিলিস্তিনি বিভিন্ন সংগঠনের কাছে আমার আবেদন তারা যেন, ফিলিস্তিনি নারী বন্দিদেরকে মুক্ত করার জন্য কাজ করেন।
অধিকাংশ বন্দিদের "আল-দামুন" এবং "হিশারুন" কারাগারে বন্দি করে রাখা হয়েছে। সেখানে তারা প্রচন্ড গরম এবং ঠাণ্ডা সমস্যার সম্মুখীন রয়েছেন। বন্দিদের শীতকালের উপযুক্ত পোশাক ও জুতা দেয়া হচ্ছে না।
ফিলিস্তিনি নারীদেরকে ইসরাইলি নারী ফৌজদারি অপরাধীদের সেলের পাশে রাখা হয়। সেখানে তাদের উচ্চস্বরে চিৎকার, মারামারি, অপমান ও লাঞ্ছনা সহ্য করতে হয়। এছাড়াও তাদের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে দেয়া হয় না।
এসকল বন্দিদের মধ্যে অনেক বন্দি বিভিন্ন জটিল রোগে আক্রান্ত রয়েছেন। কিন্তু সেখানে তাদের কোন উপযুক্ত চিকিৎসা সেবা দেয়া হচ্ছে না। অনেকের শরীর আহত, গ্রেফতারের সময় গুলি করে কিংবা পিটিয়ে আহত করা হয়েছে, কিন্তু তাদেরকে কোনো চিকিৎসা দেয়া হয় না। তারা এসব ব্যাথা নিয়ে কারাগারের ভেতর কাতরাতে থাকেন।
ইসরা জাআবিজ নামে এক নারী গ্রেফতার হওয়ার সময় তার পায়ের অনেকাংশ আগুনে পুড়ে যায়। কিন্তু কারাগারে নেয়ার পর তার কোনো চিকিৎসা করা হয়নি। তিনি সেই অবস্থায়ই যন্ত্রনায় কাতরাচ্ছেন।
হুলওয়াহ হামামিরা নামক আরেক বন্দি প্রচন্ড ব্যথা অনুভব করছেন কলিজায় ও প্লীহায়। তাকেও কোনো চিকিৎসা করা হচ্ছে না। আলবা আদম নামে আরেক বন্দির গ্রেফতারের সময় চোখে গুলিবিদ্ধ হয়। পরে চিকিৎসা না করার কারণে শেষ পর্যন্ত তাকে চোখ হারাতে হয়।
এদের অনেকে বছরের পর বছর কারাগারে বিনা বিচারে পড়ে আছেন। ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ তাদের মামলাকে গুরুত্ব দিচ্ছে না। বরং তাদের অনেকের বেতন কেটে দেয়া হয়েছে। তারা আবেদন করেছে, যাতে তাদের বেতন কাটা না হয়। কারণ তারা জেলখানায় আবদ্ধ।
ইয়াসমিন সুরুর আরও বলেন, ফিলিস্তিনি ও আরব মিডিয়া শুধু আহেদ তামিমির ব্যাপারটাকেই প্রমোট করেছে। অন্যান্য বন্দিদের ব্যাপারটি তারা প্রধান্য দিচ্ছে না। বরং উচিত হলো, সব বন্দিদের ব্যাপারেই মিডিয়ার কথা বলা।
সূত্র: আল আরাবি আল জাদিদ