রকিব মুহাম্মদ
আওয়ার ইসলাম
তুরস্কে ২০১৬ সালের ১৫ জুলাই প্রেসিডেন্ট এরদোগানকে উৎখাতে হঠাৎ শুরু হয় সেনা অভ্যুত্থান। ন্যাটোর দ্বিতীয় বৃহত্তম সামরিক বাহিনীর অধিকারী দেশটির মোট ৮,৬৫১ সৈনিক অভ্যুত্থানের চেষ্টা করে। তাদের সঙ্গে ছিল ২৪টি জঙ্গিবিমান, ৩৫টি বিমান,১৭২টি সাজোয়া যান, ৭৪টি ট্যাংক, ৮টি অ্যাটাক হেলিকপ্টারসহ ৩৭টি হেলিকপ্টার।
সেনাবাহিনী প্রথমে বসফরাস ব্রিজ বন্ধ করে দিয়ে সেটির নিয়ন্ত্রণ নেয় বিদ্রোহী সেনারা। এ দৃশ্য সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। গণমাধ্যমে ব্রেকিং নিউজ প্রচারিত হতে থাকে। সাধারণ জনগণ বিচলিত হয়ে পড়েন। তারা কী করবে কিছুই বুঝতে পারছিলেন না।
এরই মধ্যেই ছড়িয়ে পড়ে প্রেসিডেন্ট এরদোগানের আহ্বান। সাধারণ মানুষকে রাস্তায় নেমে আসার আহ্বান জানান তিনি। নিজের মোবাইল ফোন থেকে একটি টিভি কেন্দ্রের সাথে সংযোগ স্থাপন করে তিনি জনগণের উদ্দেশ্যে সামরিক অভ্যুত্থানের প্রতিবাদ জানাতে রাস্তায় নেমে আসার আহ্বান জানান।
তিনি বলেন, ‘আপনারা যে যেভাবে আছেন রাস্তায় বেরিয়ে আসুন। ষড়যন্ত্রকারীরা ব্যর্থ হবে। দেশের জনগণ যাকে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত করেছিল, তিনিই দায়িত্বে আছেন। আমরা যতক্ষণ সবকিছু বিসর্জন দিয়ে তাদের বিরুদ্ধে একতাবদ্ধ হয়ে দাঁড়াব, ততক্ষণ তারা সফল হতে পারবে না।’
এ আহ্বানের অল্প সময়ের মধ্যে রাস্তায় বেরিয়ে পড়ে লাখ লাখ মানুষ। ট্যাংকের নিচে জীবন দিতে প্রস্তত হয় তুর্কিরা। বিদ্রোহী সেনা সদস্যরা গুলি চালায়। নিহত হয় ১৫১জন। আহত হয় ২ হাজার ২০০।
কিন্তু সাধারণ মানুষের ঢলে বিদ্রোহীদের সব চেষ্টা ব্যর্থ হয়। জীবন বাঁচাতে তারা পালাতে থাকে। এক পর্যায়ে বিদ্রোহী সেনাসদস্যরা নিজেদের পোষাক খুলে সাধারণ মানুষের সঙ্গে মিশে গিয়ে জীবন বাঁচাতে চেষ্টা করে। শনিবার সকালেই স্পষ্ট হয়ে যায় যে সামরিক অভ্যুত্থান ব্যর্থ হয়েছে।
সেদিন আঙ্কারায়, তুরস্কের পার্লামেন্ট ও রাষ্ট্রপতির প্রাসাদে বোমা হামলা চালানো হয়েছিল।গুলির শব্দ আংকারা এবং ইস্তানবুলের প্রধান বিমানবন্দর থেকেও কাছাকাছি শোনা যায়।
এদিকে প্রেসিডেন্ট এরদোগানকে হত্যার জন্য তিনটি হেলিকপ্টার ছুটে যায়। তবে তারা এরদোগানের অবস্থান শনাক্ত করতে ব্যর্থ হয়।
হেলিকপ্টার তিনটি যখন অভিযানের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করে তখন এরদোগান দেশটির দক্ষিণ-পশ্চিম তুরস্কের মারমারায় অবকাশ যাপন করছিলেন। সেখানেই তাকে হত্যা কিংবা বন্দি করার জন্য হেলিকপ্টারগুলো পাঠানো হয়েছিল।
খবরে বলা হয়েছে, অভ্যুত্থান চেষ্টার প্রক্রিয়া শুরু হবার এক ঘন্টা আগে দেশটির ফার্স্ট আর্মির কমান্ডার উমিত দান্দার এরদোগানকে অভ্যুত্থান শুরু হওয়ার বিষয়টি জানাতে পেরেছিলেন।
ওই খবর পেয়ে এরদোগান নিজের নিরাপত্তার জন্য হোটেল ত্যাগ করেছিলেন। হোটেল থেকে বেরিয়ে তিনি ইস্তাম্বুলের উদ্দেশে যাত্রা শুরু করেন। অল্প সময়ের মধ্যেই পৌঁছে যান ইস্তাম্বুল।
ফলে বিদ্রোহী সৈন্যরা ওই হোটেলে পৌঁছে এরদোগানকে পাননি। এরদোগান হোটেল ত্যাগ করার কিছুক্ষণের মধ্যেই ৪০ জন বিদ্রোহী সৈন্য দ্রুত ওই হোটেলে প্রবেশ করে। কিন্তু এরই মধ্যে এরদোগান ইস্তাম্বুলের পথে রওয়ানা হয়ে যান। আর হোটেলেই থেকে যান প্রেসিডেন্টের দেহরক্ষীরা।
আরও পড়ুন : তুর্কির কাসেম নানুতবি মাহমুদ আফেন্দির শিষ্য এরদোগান