রোকন রাইয়ান
আওয়ার ইসলাম
গতবছর কওমি মাদরাসা শিক্ষাবোর্ড বেফাকের কেন্দ্রীয় কাউন্সিল বৈঠকে বেশ কিছু নতুন সিদ্ধান্ত আসে। এসবের মধ্যে কওমি মাদরাসার কিতাব বিভাগের পঞ্চমস্তর কাফিয়া জামাত ও উচ্চতর ইফতা বিভাগের পরীক্ষাও বেফাকের তত্ত্বাবধানে হবে।
তবে নতুন এ সিদ্ধান্ত কোন শিক্ষাবর্ষ থেকে কার্যকর হবে এ নিয়ে বিভ্রান্তি আছে। অনেকে মনে করছেন চলতি বছর থেকেই কার্যকর হবে নতুন সিদ্ধান্ত। আবার অনেকে বলছেন এ নিয়ে আনুষ্ঠানিক সিদ্ধান্ত এখনো জানানো হয়নি।
অনেকের মন্তব্য এটি বেফাকের কাউন্সিল সভায় তাৎক্ষণিক উত্থাপন করা প্রস্তাব যা অনেকের সমর্থনের কারণে পাশ হয়েছে। কিন্তু এ নিয়ে বিস্তর পরিকল্পনা বেফাকের সামনে নেই।
অনেকেই আবার আলোচনা করছেন, ইফতা একটি স্বতন্ত্র বিভাগ যার তদারকি পুরোটা নিজস্ব প্রতিষ্ঠানের অধীনে হলেই ভালো।
তবে চলতি বছর থেকেই যে বেফাকের অধীনে এ দুটি বিভাগের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হচ্ছে না বিষয়টি চূড়ান্ত। এমনটিই বললেন বেফাকের মহাপরিচালক মাওলানা যোবায়ের আহমদ চৌধুরী।
আওয়ার ইসলামের সঙ্গে কথপোকথনে তিনি বলেন, আগামী শিক্ষাবছর থেকে এটি আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হতে পারে। আর শুরু হলে সেটা মাদরাসাগুলোকে নোটিশের মাধ্যমে জানানো হবে।
এ নিয়ে বেফাক আলোচনা করছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ বিষয়ে আলাদা কমিটি আছে। কুরবানির পর থেকে তরা নিয়মিত বিষয়টি নিয়ে বসবেন এবং এর প্রক্রিয়া শুরু করবেন।
একই বিষয়ে বেফাকের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক মুফতি আবু ইউসুফ আওয়ার ইসলামকে বলেন, কাউন্সিলে এ প্রস্তাবের পর আনুষ্ঠানিকভাবে বসার সুযোগ হয়নি। তবে বিভাগ দুটির কেন্দ্রীয় পরীক্ষা আগামী বছর থেকেই শুরু করার খেয়াল রয়েছে।
কাফিয়া জামাত বেফাকের অধীনে এলে শিক্ষার্থীদের জন্য চাপ মনে হতে পারে এমন অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, বেফাকের অধীনে কাফিয়া জামাতের পরীক্ষার পরিকল্পনা বেশ পুরনো। কিন্তু বাস্তবায়ন হয়নি।
সানভী আওয়াল (কাফিয়া) ও সানভী সানী (শরহেবেকায়া) নামে দুটি পরীক্ষার প্ল্যান শুরু থেকেই রয়েছে বেফাকের।
ইফতা বিভাগের পরীক্ষা নিয়ে অনেকের মধ্যেই নানা প্রশ্ন রয়েছে। সে বিষয়টি উল্লেখ করে শাইখ যাকারিয়া ইসলামিক রিসার্চ সেন্টারের উচ্চতর ইসলামী আইন গবেষণা বিভাগের প্রধান মুশরিফ মুফতি মুহাম্মদ শরিফ মালিক একটি গবেষণা প্রবন্ধে লিখেন, বাংলাদেশের ফতোয়া বিভাগগুলো অনেকটাই মুফতিকেন্দ্রিক। প্রত্যেক মুফতি নিজ নিজ অভিরুচি, মতাদর্শ ও সুদূরপ্রসারী চিন্তাধারার আলোকে তা পরিচালনা করে থাকেন।
শিক্ষার্থীরাও নিজেদের রুচি ও পছন্দসই মুফতি থেকে বিশেষ পি.এইচ.ডি অর্জন করার ইখতিয়ার লাভ করে থাকে। আর পি.এইচ. ডি যেহেতু সাধারণত নির্দিষ্ট ব্যক্তির অধীনেই করতে হয় তাহলে বোর্ডের অধীনে হওয়ার ক্ষেত্রে অপেক্ষাকৃত দক্ষ ও খ্যতিমান মুফতি বাদ দিয়ে বোর্ড থেকে উক্ত ডিগ্রি অর্জন বাধ্যমূলক হয়ে যাচ্ছে।
এতে ছাত্ররা যোগ্যতা ও দক্ষতা অর্জন বাদ দিয়ে ডিগ্রির পেছনে ছুটতে থাকবে। তাছাড়াও বিশেষ কিছু মনীষীর হৃদয়গ্রাহী, চেতনাশীল ও বিপ্লবী তরয-তরিকা থেকে এদেশের ছাত্ররা বঞ্চিত হবে।
এ ব্যাপারে মুফতি আবু ইউসুফের দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তিনি বলেন, বোর্ডের অধীনে পরীক্ষা হলে প্রতিষ্ঠিত ইফতা বিভাগগুলো একটু সমস্যায় পড়তে পারে। কিন্তু এতে ভিন্ন ফায়দাও আছে।
তিনি উদাহরণ দিয়ে বলেন, আজকাল অহরহই ইফতা বিভাগ খোলা হচ্ছে, এতে নির্দিষ্ট মান বজায় থাকছে না। প্রতিষ্ঠিত কিছু মাদরাসায় ইফতার মানের দিকে খেয়াল করা হলেও অধিকাংশেই তা মানা হচ্ছে না। বোর্ড পরীক্ষার আওতায় এলে এসব নিয়ন্ত্রণে আসবে।
তিনি আরও বলেন, ইফতা বিভাগে একক সিলেবাস চালু নেই। বোর্ড পরীক্ষা নিলে সিলেবাস প্রণোয়ন করে সে ভিত্তিতেই পাঠদান করতে হবে।
বেফাকের ৪১ তম পরীক্ষায় মেধা তালিকার শীর্ষে যারা
তাবলিগের দুই সঙ্কট: সমাধান কোন পথে?
-এআর