সৈয়দ মাসরুর রহমান
ফিচার রাইটার
প্রযুক্তি আমাদের জীবনকে যেমন সহজ করেছে, তেমনি করেছে যান্ত্রিক। প্রযুক্তির উৎকর্ষতার কারণে বন্ধু কিংবা প্রিয়জনদের সঙ্গে যোগাযোগের বিষয়টি হয়েছে আরো সহজ। যোগাযোগের কাজটি আরো সহজ এবং নিয়মিত করার জন্য এসেছে বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম। এর মধ্যে আছে ফেসবুক, টুইটার, ইনস্টাগ্রাম, গুগল প্লাসসহ আরো নানা প্ল্যাটফর্ম।
তবে পারস্পরিক যোগাযোগকে ছাপিয়ে বর্তমানে এসব প্ল্যাটফর্মে বিশেষ করে ফেসবুকে জনপ্রিয় হওয়ার একটি প্রবণতা বেশ লক্ষণীয়। শুধু অন্যদের আলোচনার কেন্দ্রে থাকার জন্য মানুষ ফেসবুকে কত কিছুই না করছে।
তবে এই জনপ্রিয়তা অর্জন করতে গিয়ে নিজের ব্যক্তিগত গোপনীয়তা যেমন নষ্ট হচ্ছে, তেমনি নিজের অজান্তেই তৈরি হচ্ছে নিরাপত্তা ঝুঁকিও।
ব্যবহারকারীরা বিভিন্ন সময়ই এসব প্ল্যাটফর্মে জানান দিচ্ছে এমন কিছু তথ্য যার কারণে বিপদেও পড়তে হতে পারে।
অ্যান্টি ভাইরাস ব্র্যান্ড নরটন সম্প্রতি তুলে ধরেছে এমন কিছু ভুলের কথা যার কারণে অনলাইনে নানা হয়রানিতে পড়তে পারেন একজন ব্যবহারকারী।
ব্যক্তিগত গোপনীয়তাকে গুরুত্ব না দেওয়া
সব সময় সব ধরনের ব্যক্তিগত তথ্য অন্যের সঙ্গে শেয়ার করা বড় ধরনের একটি ভুল। প্রায় সব সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেই আছে নির্ধারিত কিছু সেটিংস, যার মাধ্যমে ঠিক করে দেওয়া যায় কোন তথ্যটি ঠিক কারা দেখতে পারবে।
যেমন ফেসবুকে চাইলেই বন্ধুদের আলাদা আলাদা তালিকা তৈরি করে নেওয়া যায়। এর মাধ্যমে কোনো পোস্ট সবাইকে না দেখিয়ে কেবলমাত্র নির্দিষ্ট বন্ধুদের জন্য প্রকাশ করা সম্ভব।
এ ছাড়া যেসব ব্যক্তিগত তথ্য শেয়ার না করলেই নয়, কেবলমাত্র সেগুলোই শেয়ার করা উচিত। এ ছাড়া সম্ভব হলে নিজের অবস্থান, আর্থিক বিষয়সংক্রান্ত তথ্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শেয়ার করা থেকে বিরত থাকাই ভালো।
সবাইকে বন্ধু তালিকায় যুক্ত করা
কার বন্ধু তালিকায় কত বেশি বন্ধু রয়েছে, এটি নিয়ে অনেকেই প্রতিযোগিতা করে থাকেন। এর ফলে পরিচিতদের পাশাপাশি অনেক অপরিচিত ব্যক্তিও তালিকায় যুক্ত হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এক্ষেত্রে নিজের বিভিন্ন তথ্য যেমন অযাচিত ব্যক্তিদের সামনে উন্মোচিত হয়ে পড়ে তেমনি কাজের সময় প্রয়োজনীয় ব্যক্তিকে খুঁজে পেতেও বেগ পেতে হতে পারে।
ব্যক্তিগত তথ্যভান্ডার বানিয়ে ফেলা
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনেকেই নিজের ব্যক্তিগত বিভিন্ন তথ্য যেমন- জন্ম তারিখ, ফোন নম্বর, পছন্দ-অপছন্দ, শিক্ষাগত তথ্য এগুলো শেয়ার করে থাকেন। তবে ক্ষেত্রবিশেষে এ সুযোগ গ্রহণ করতে পারে সাইবার অপরাধীরা। এসব তথ্য ব্যবহার করে খুব সহজেই কাউকে খুঁজে বের করা সম্ভব।
এ ছাড়া বিভিন্ন অনলাইন অ্যাকাউন্টে বাড়তি নিরাপত্তার জন্য অনেক সময় ‘নিরাপত্তা প্রশ্ন’ ব্যবহার করা হয়। পছন্দের রঙ, পছন্দের কবি-সাহিত্যিক, খেলোয়াড়, বই কিংবা পছন্দের পোষা প্রাণীর নাম, জন্মস্থানের নাম এসব প্রশ্নই করা হয় নিরাপত্তা প্রশ্ন হিসেবে।
তবে এসব প্রশ্নের উত্তর যদি নিজের অজান্তেই ফেসবুকে শেয়ার করা হয়, সেক্ষেত্রে সাইবার অপরাধীরা খুব সহজেই এ তথ্যগুলো সংগ্রহ করে সেগুলোর মাধ্যমে বিভিন্ন অনলাইন অ্যাকাউন্ট বেদখল করে নিতে পারে। তাই এসব তথ্য ফেসবুক কিংবা অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেওয়ার আগে ভালোভাবে নিজের নিরাপত্তার বিষয়টি ভাবতে হবে।
ব্যবহার শেষে লগআউট না করা
ব্যক্তিগত স্মার্টফোন কিংবা কম্পিউটারে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারে অনেকের মাঝেই লগআউট না করার প্রবণতা দেখা যায়। তবে প্রয়োজন শেষে লগআউট করে ফেলাই ভালো। না হয় কোনো কারণে ডিভাইস অন্যের দখলে চলে গেলে বড় ধরনের ঝামেলার আশঙ্কা থেকে যায়। স্মার্টফোন চুরি হয়ে যাওয়া কিংবা হারিয়ে যাওয়াও এর মধ্যে অন্যতম।
সেক্ষেত্রে অন্য কেউ চাইলেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের প্রোফাইলে ঢুকে বিভিন্ন তথ্য যেমন বদলে দিতে পারে, তেমনি বন্ধু তালিকায় থাকা অন্য ব্যক্তিদেরও হয়রানির মধ্যে ফেলতে পারে।
এ ছাড়া নিজের ডিভাইস ব্যতীত অন্য কোনো পাবলিক কম্পিউটারে লগইন করলেও প্রয়োজন শেষে অবশ্যই লগআউট করতে হবে। এক্ষেত্রে ব্রাউজারের প্রাইভেট উইন্ডো বা ইনকগনিটো উইন্ডো ব্যবহার করা ভালো।
সব প্ল্যাটফর্মে একই পাসওয়ার্ড ব্যবহার
পাসওয়ার্ড মনে রাখতে না পারার কারণে অনেকেই সব অনলাইন অ্যাকাউন্টে একই পাসওয়ার্ড কিংবা কাছাকাছি পাসওয়ার্ড ব্যবহার করে থাকেন।
তবে নিজের নিরাপত্তার কথা চিন্তা করেই এ অভ্যাস পরিহার করা উচিত। কোনো কারণে একটি অ্যাকাউন্ট হ্যাকারদের দখলে চলে গেলে অন্য অ্যাকাউন্টগুলোও বেদখল হওয়ার ঝুঁকি তৈরি হয়। এর পাশাপাশি কিছুদিন পরপর পাসওয়ার্ড পরিবর্তন করা উচিত।
আরও পড়ুন : স্মার্টফোনে চার্জ ধরে রাখার ৭ উপায়