মুসা আল হাফিজ। কবি, সাহিত্যসমালোচক, গবেষক। ২০১৮ এর ত্রিশে জুন, কবি ফররুখ আহমদের এক শততম জন্মদিবসে লাভ করেছেন ‘ফররুখ আহমদ জন্মশতবার্ষিকী সাহিত্য পদক।’
যে অাদর্শবাদিতা, চেতনাবোধ ও শিল্পবোধকে কবিতা ও জীবনে চারিয়ে নিয়েছিলেন ফররুখ আহমদ, মুসা আল হাফিজ সে অাদর্শ ও জীবনবাদিতার ব্রাজক। কবিতার শৈলী, মেজাজ ও প্রকরণে স্বাতন্ত্র্য থাকলেও কাব্যাদর্শে তিনি একই গন্তব্যের যাত্রী।
ফররুখ চর্চায় মুসা আল হাফিজের রয়েছে নিষ্ঠা ও সক্রিয়তা। ফররুখের কাব্যনাট্য নিয়ে রচিত তার ‘দৃশ্যকাব্যে ফররুখ আহমদ’ বিদগ্ধ মহলে সমাদৃত একটি বই।
আওয়ার ইসলাম এর পক্ষ থেকে ফররুখের কবিতার বিভিন্ন দিক নিয়ে তার সাক্ষাৎকার নিয়েছেন রোকন রাইয়ান।
রোকন রাইয়ান : ফররুখ আহমদ জন্মশতবার্ষিকী সাহিত্য পদক পেলেন। আপনার অনুভুতি কী?
মুসা আল হাফিজ: ফররুখের কাছে আমরা ঋণী। আমাদের সে ঋণ অপরিশোধ্য। তিনি আমাদের সাংস্কৃতিক আত্মপরিচয়ের বুনিয়াদকে মজবুত করেছেন। কিন্তু তার প্রতি আমরা কেউই দায়িত্ব পালন করিনি। না তার জীবৎকালে, না মরণোত্তর।
তার প্রতি অবিচারের প্রশ্নে কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া ডান-বাম প্রায় সমান্তরাল। কেউ তাকে উপেক্ষা করেছি, কেউ তার অনবদ্য, অবিনাশী কৃতীত্বকে কৃত্রিমভাবে চিত্রিত করেছি। এ থেকে বেরিয়ে আসতে হবে।
রোকন রাইয়ান: বাংলাসাহিত্যে ফররুখের অবস্থানকে আপনি কীভাবে দেখেন?
মুসা আল হাফিজ: ফররুখের কাব্যনাট্য নিয়ে আমার বইটির শুরুতেই লিখেছি, ‘বাংলাসাহিত্যে যুগনির্মাতা কবি হিসেবে মাইকেল মধুসূধন দত্ত, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কাজী নজরুল ইসলাম ও জীবনানন্দ দাশের পরেই ফররুখ আহমদের অবস্থান।’
এখানে এখন কিছু নোক্তা যোগ করবো। প্রথমত, মাইকেল মধুসূদন এর পরে তার মতো নিজস্বতাচিহ্নিত কবি বাংলা সাহিত্যে আরেকজন নেই। দ্বিতীয়ত, কবিতার এতো বিচিত্র প্রকরণে আর কেউ বিচরণ করেনি তার মতো। কেউই না।
তৃতীয়ত, বাংলাসনেটের জনক যদিও মাইকেল মধুসুধন, কিন্তু সর্বাধিক সনেট রচয়িতা ফররুখ আহমদ। তার সনেটগুলো পরিমাণে যেমন বিপুল, মানেও তেমনি অনন্য। চতুর্থত, ফররুখ বাংলাকবিতায় সমুদ্রপুরাণ ও মরুপুরাণকে যোজিত করেন প্রবল শক্তিতে। তার আগে সমুদ্রকে কেউ বাংলাকবিতায় সামুদ্রিক জীবন দিতে পারেনি।
রোকন রাইয়ান : আর ইসলামি রেঁনেসার দিকটি...
মুসা আল হাফিজ : ওটা একটা আরোপ। হিন্দুত্ববাদকে জীবন দিয়েছেন বঙ্কিম। কিন্তু তাকে কেউ হিন্দু রেঁনেসার সাহিত্যিক বলেছে? রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কবিতার প্রধান উপাদান ব্রাহ্মধর্মীয় বিশ্বাস ও হিন্দুঐতিহ্য। তাকে কেউ ব্রাহ্মকবি বা হিন্দুঐতিহ্যের কবি বলেছে?
উইলিয়াম ব্লেকের কবিতায় খ্রিস্টধর্ম এসেছে, তার সং অব ইনোসেন্স, ‘সং অব এক্সপেরিয়েন্স’,
‘দ্য টাইগার’ ইত্যাদি তো খ্রিস্টীয় বিশ্বাসের বর্ণনা, উইলিয়াম ওয়ার্ডসওয়ার্থ এর ‘টিন্টার্ন এবি’, কিংবা কোলরিজ, লর্ড বায়রন, জন কিটস... প্রত্যেকের কবিতায় খ্রিস্টীয় বিশ্বাস ও ঐতিহ্য প্রবলভাবে হাজির। তাদের কেউ খ্রিস্টীয় বিশ্বাসের বা জাগরণের কবি বলে না।
ফররুখ আহমদের কবিতায় ইসলামের ঐতিহ্য প্রাণশক্তি যোগিয়েছে। জাতীয় জাগরণের বাণী উচ্চকিত হয়েছে। অতএব তাকে মুসলিম কবি, ইসলামের কবি, মুসলিম রেঁনেসার কবি ইত্যাদি পোশাকে ঢাকা কাব্যিক বিচারে ক্ষতিকর। এ আড়াল তার আবেদনকে, পরিসরকে এবং কাব্যিক ঐশ্বর্যকে দৃষ্টি থেকে লুকিয়ে নেয়।
তার প্রথম এবং প্রধান পরিচয় তিনি কবি। তার কবিতা কেবল কবিতাই। যেমনটি কোলরিজের কবিতা, পার্সি বি শেলির কবিতা। সে কবিতার অন্তর্দেশে ইসলামি ভাবাদর্শ আছে, ঐতিহ্য আছে, জাগরণের স্বনন আছে।
তার কবিতার পর্যালোচনায় সেটা উল্লেখ হতে পারে, বিশ্লেষণ হতে পারে, অবশ্যই। কিন্তু মুসলিম জাগরণের কবি ইত্যাদি অভিধায় ফররুখকে একঘরে করার চেষ্টাকে আমি সাহিত্যিক সততার মধ্যে ধরি না।
রোকন রাইয়ান : কিন্তু, এটা তো ইসলামপন্থীরা বা ডান ধারার লেখক, চিন্তকরা ভালোবেসে বলে থাকেন...
মুসা আল হাফিজ : ফররুখপ্রশ্নে বামঘরাণা থেকে তাকে খারিজ করার জন্য বলা হয়, ওহ! উনি তো ইসলামি কবি, সাম্প্রদায়িক। যেন তার কবিতায় কবিতা বলতে কিছু নেই, আছে শুধু ইসলামের ওয়াজ।
যারা ইসলামপন্থী, তারাও সর্বশক্তি দিয়ে বুঝাতে চান, ফররুখ ইসলামের কবি। যেন তার কবিতার ওটাই সার কথা। সেখানে কবিতা হিসেবে তার কবিতার সম্পন্নতা থাকে উপেক্ষিত, দেখানো হয়, তিনি ইসলামের ওয়াজ করেছেন।
এই এক জায়গায় এ দেশের ডানপন্থী ও বামপন্থীদের মধ্যে আশ্চর্য মিল। অথচ ফররুখ কবিতা লিখতে গিয়ে ওয়াজ লিখেননি, ভাষণ লিখেননি, প্রচারপত্র লিখেন নি; কবিতাই লিখেছেন, মহিম কবিতাই লিখেছেন।
কবিতা হিসেবে তার কবিতার সম্পন্নতা কত বিশাল, কত বর্নিল, সেটাই বরং কাব্যালোচনার দাবি। সে দাবি পূরণ হলে ফররুখকাব্য; সাতসাগরের মাঝি, লাশ, ডাহুক, দরিয়ার শেষ রাত্রি ইত্যাদি ইত্যাদি শুধু বাংলার নয়, বিশ্বের মহৎ ও সেরা কবিতাদের কাতারে দাঁড়াতে পারতো।
ফররুখের প্রশ্নে সে বিচার হয় না। হতে দেয় না, তার শত্রু ও বন্ধুদের জোট।
রোকন রাইয়ান: আপনি যে বললেন, প্রকরণের বিচারে ফররুখ বাংলার কবিদের শীর্ষে, সেটা কীভাবে?
মুসা আল হাফিজ: ফররুখ বহুবিধ অাঙ্গিক ও প্রকরণে কাজ করেছেন। তিনি মহাকাব্য লিখেছেন, কাব্যনাট্য লিখেছেন, কাহিনীকাব্য লিখেছেন, সনেট লিখেছেন, গান লিখেছেন, সনেট সিকোয়েন্স লিখেছেন, ব্যঙ্গকবিতার ভাণ্ডার গড়েছেন, ছড়ায় অসাধারণত্ব প্রমাণ করেছেন, কবিতার অনুবাদে কব্জির জোর দেখিয়েছেন... ছন্দ নিয়ে বহুবিদ পরীক্ষা- নীরিক্ষা করেছেন, গদ্য কবিতাও লিখেছেন... না, আর কোনো কবিই এতো বিচিত্র জমিতে নিজস্বতার এতো ফলন ফলাননি।
রোকন রাইয়ান : তার উপর অভিযোগ, তিনি পুথির পথে পশ্চাৎগামী ছিলেন, স্বদেশকে বাদ দিয়ে বিদেশের চিত্র এঁকেছেন, দেও-দানব ইত্যাদিই তার চরিত্র আর তিনি পাকিস্তান আন্দোলনে নিবেদিত ছিলেন...
মুসা আল হাফিজ : দেখো, আধুনিকতা ও কবিতার প্রয়োজনেই ফররুখ অতীত সন্ধান করেছেন। বিষয়টি বুঝাতে স্পেন্ডার বর্ণিত মডার্ন ও কন্টেম্পিরারি সম্পর্কিত ধারণাটি সামনে আনা যায়।
তিনি বলেছেন, ‘লেখক সম্প্রদায় যখন নিজেদের সামাজিক ভূমিকা পালন করতে গিয়ে বিভিন্ন সমকালীন দ্বন্দ্বের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট হয়ে পড়েন, তখন তারা হন ‘কন্টেম্পোরারি’ বা সাম্প্রতিক।
অন্যদিকে একজন সত্যিকারের মডার্ন বা আধুনিক লেখক হলেন তিনি, যিনি সমকালীন জীবন ও সমস্যাকে অতীতকালীন প্রেক্ষাপটে দাঁড় করিয়েও তাকে একটি সর্বকালীন ও সর্বজনীন রূপ দিতে সক্ষম হন।’
সত্যিকারের আধুনিক লেখকের এই যে কাজ, এই কাজটি বিশেষত, মিথ, পৌরাণিক কাহিনী, উপকথা, লোকজ ঐতিহ্য ও লৌকিক উপাদানকে কাজে লাগিয়েই সম্পন্ন হয়। পুথি বাঙ্গালির একান্ত নিজস্ব লৌকিক উপাদান। একে কাজে লাগিয়ে তিনি নতুন পথ খুলে দিয়েছেন।
অন্য কবিরা যেখানে গ্রীক পুরানকে কাজে লাগায়- এই যে শামসুর রাহমানের ইকারুসের আকাশ- ইকারুস কোন দেশের? সে তো সুদূর গ্রীকের লোককথার চরিত্র- আধুনিক কবি মাত্রই গ্রীক মিথ ব্যবহার করেছেন; সেখানে ফররুখ এই মাটির ভেতর থেকে উঠে আসা পুথিকে যদি কাজে লাগান, সে তো অভিনন্দিত হবার যোগ্য।
স্বদেশকে বাদ দিয়ে বিদেশের চিত্র এনেছেন, এ অভিযোগের জন্ম হয়তো ফররুখকে পরিপূর্ণ পাঠ না করার মধ্যে, নতুবা কোনো উদ্দেশ্যের মধ্যে। তিনি যেমন ‘আখরোট বন, বাদাম, খুবানি বন’ ইত্যাদির চিত্র এঁকেছেন, তেমনি একেছেন ‘সূর্যাস্তের নলবনের’ চিত্র, ‘দুই পাশে ধানখেত রেখে অবিশ্রাম বয়ে চলা নদী’র চিত্র,’ ‘ঝিঙ্গে মাচায় ফিঙে নাচা’র চিত্র।
তিনি দেখিয়েছেন, ‘বেতসলতার তারে থেকে থেকে বাজে আজ বাতাসের বীণা’ ‘শ্রাবন মেঘের মাঝে ডুবে যায় চাঁদ’ ‘চৈত্রের বিশীর্ণ পাতা রেখে গেছে শেষ চিহ্ন সালতামামীর’, সূর্যাস্তের তোরণে জ্বলে সন্ধ্যাতারকার টীপ’।
ফররুখকে কোনোভাবেই বিদেশের চিত্রকর বলার সুযোগ নেই। এ ভুল। তার দেশ ‘আউষ ধানের দেশ’ এখানে তিনি ‘মদীনার রক্তগোলাপ’ ফোটাতে চেয়েছেন। তার স্বপ্ন ছিলো ‘আউষ ধানের দেশে মদীনার রক্তগোলাপ / সকল আশার পূর্ণতা শেষে মেলবে কলাপ’।
দেও-দানব ইত্যাদি তার কবিতায়, বিশেষত তার মহাকাব্যে এসেছে, তা কাব্যিক প্রয়োজনে এসেছে। কাহিনীর নির্দেশে এসেছে। রামায়ন, মহাভারত, ইলিয়ড, ওডিসি; কোন মহাকাব্যে নেই দেও-দানব?
ইউলিসিস একচোখা দৈত্যের সাথে লড়াই করছেন, গন্ধমাদন পাহাড় মাথায় নিয়ে চলছে হনুমান, এগুলো তো মহাকাব্যেরই কাহিনী। ফররুখের মহাকাব্যে অতিলৌকিক কিছু হাজির হলে দোষ কোথায়?
আর পাকিস্তানপন্থী হওয়া? ৪৭ এর আগে- পরে কে ছিলেন না পাকিস্তানপন্থী? স্বয়ং বঙ্গবন্ধুও তো পাকিস্তান আন্দোলনে জড়িত ছিলেন। তার অসমাপ্ত আত্মজীবনী এর প্রমাণ। তখনকার কবিরা, লেখকরা তো পাকিস্তানের জন্যই কলকাতা ত্যাগী হন।
আবুল হোসেন, শওকত ওসমান, সিকান্দার আবু জাফর, আহসান হাবীব, আবদুল গণী হাজারী, আবু রুশদ, সৈয়দ আলী আহসান, সৈয়দ ওয়ালিউল্লাহ, সানাউল হক, আহমদ শরীফ সকলেই তো ছিলেন পাকিস্তানপন্থী। সুফিয়া কামাল, শামসুর রাহমান, হাসান হাফিজুর রহমান... কে না লিখেছেন পাকিস্তানের পক্ষে? দোষ কেবল ফররুখের হবে কেন?
ভাষা আন্দোলনে তিনি সোচ্চার হন ১৯৪৭ সালেই। পাকিস্তানি অনাচারের বিরুদ্ধে বরাবরই ছিলেন প্রতিবাদী। পাকিস্তান সরকারের দেয়া প্রাইড অব পারফরমেন্স পুরষ্কার তিনি প্রত্যাখান করেছিলেন, পাকিস্তানিদের থেকে কোনো সুবিধাই গ্রহণ করেননি তিনি।
মুক্তিযুদ্ধকালে তিনি পাকিস্তানের পক্ষে ছিলেন না। কিন্তু বিস্ময়করভাবে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে অবস্থান নিতে ব্যর্থ হন।
এ তার বড় ধরনের ভুল। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে বহু কবি-লেখক মুক্তিযোদ্ধাদের বিষোধাগার করেছেন, ছদ্মনামে কলাম লিখেছেন পাকিস্তানের পক্ষে। তারাই দেশ স্বাধীন হবার পরে বোল পালটিয়ে বনে গেলেন মহামুক্তিযোদ্ধা, মহাচেতনাওলা।
ফররুখ বোল পাল্টাতে পারেন নি। ফলত তাকে শাস্তি ভোগ করতে হয়েছে। রেডিও থেকে তার চাকরি কেড়ে নেয় তারাই। বঙ্গবন্ধু জানতেন, ফররুখ মুক্তিযুদ্ধের সময় কী মতামত পেশ করতেন। ফররুখের চাকরি কেড়ে নেয়ার বিষয়টি তিনি জানতেন না। তাকে জানানো হয়নি। যখন গণকণ্ঠে প্রকাশিত আহমদ ছফার প্রবন্ধ মারফত জানলেন, তখন দুঃখ প্রকাশ করলেন, উষ্মা প্রকাশ করলেন, এর হোতাদের ধমকালেন এবং কবির চাকরি ফিরিয়ে দেয়ার আদেশ দিলেন।
রোকন রাইয়ান : ফররুখ আহমদের দুর্বলতা আপনার চোখে ধরা পড়ে?
মুসা আল হাফিজ : হ্যাঁ, দুর্বলতা তার আছে। তিনি মূলত রোমান্টিক কবি। শেষের দিকে তার কবিতায় ধ্রুপদ অভিমুখ আসে। কিন্তু রোমান্টিক কবিতায় তিনি যতটা সফল, ধ্রুপদ ধারায় তা নন। রোমান্টিক কবিতায়ও তার যে বর্ণিল পালক ছিলো শুরুতে, পরে তা ধীরে ধীরে বর্ণ হারিয়েছে।
সাতসাগরের মাঝির সেই উদাত্তস্বর, সেই অনবদ্যতা, সেই সৌকর্য আর কথা বলেনি। অতীতকে তিনি বর্তমানের পটে স্থাপন করেছেন। কিন্তু যে অর্থে টেনিসনের ইউলিসিস জীবন্ত, সে অর্থে তার হাতেমতায়ী জীবন্ত নয়। আইরিশ পুণরোজ্জীবনবাদী কবিরা পুরাণকে নবরূপ দিয়েছেন। পুরাণের চরিত্রসমূহকে ভেঙ্গেচুরে নবসৃষ্টির মহিমা দিয়েছেন।
ফররুখের মহাকাব্য, কাব্যনাট্য বা কাহিনীকাব্যের চরিত্রগুলো সেই তাৎপর্যে জ্বলে উঠেনি। ইসলামের আদর্শবাদ তার কবিতায় আছে। কিন্তু আল্লামা ইকবালের কবিতা তার যে দার্শনিক বিশ্লেষণ ও নবঅর্থ উন্মোচন করে, ফররুখে তা নেই।
তার পুথিবাহিত আরবি-ফারসি শব্দ ব্যবহার প্রথম দিকে অনন্য ও সুস্বাদু হলেও কবিজীবনের শেষের দিকে স্বাদ ও উচ্ছলতা হারাতে থাকে। সম্ভবত প্রথম দিকে যতটা পরীক্ষা-নীরিক্ষা এবং রুচি ও বিবেচনার বিশিষ্টতা তাতে প্রয়োগ করেছেন, শেষের দিকে তা করেননি। ফলত তার হাবেদা মরুর কাহিনীতে নিরেট গদ্যও হাজির হয়েছে আর ‘হাতেমতায়’'র প্রকরণ প্রসঙ্গে তার সহযাত্রী- বন্ধু, সমালোচক সৈয়দ আলী আহসানকে লিখতে হয়েছে ‘এখানে পোয়েটিক ডিকশন হয়ে উঠেছে শব্দের বন্ধনদশায় কবির অার্তনাদের মতো।’
এই যে দুর্বলতা, তা বিশ্বসাহিত্যের পরিসরকে সামনে রেখে। এমন দুর্বলতা দুনিয়ার যে কোন কবিতেই নানাভাবে বর্তমান। রবীন্দ্রনাথ-নজরুল-জীবনানন্দ; কেউই নানাবিদ দুর্বলতা ও সীমাবদ্ধতা থেকে মুক্ত নয়।
রোকন রাইয়ান : অনেকেই আপনার মধ্যে ফররুখ আহমদকে দেখেন। আপনার কী মনে হয়?
মুসা আল হাফিজ : আমার মধ্যে ফররুখকে দেখার দরকার নেই। ফররুখ হওয়ার মধ্যে আমার স্বার্থকতা নেই। পৃথিবীতে কোনো প্রতিভাই কেউ কারো ঠিক অনুরূপ নয়। ঠিক অনুরূপ হলে সে আর মৌলিক প্রতিভা থাকে না।
আমার পরিচয়, আমি মুসা আল হাফিজ। ফরুখের জগত ফররুখময়। আমি যদি মুসা আল হাফিজময় জগত নির্মাণ করি, কবি হিসেবে সম্পন্নতা সেখানেই।
আরও পড়ুন: কবি ফররুখ আহমদের কী অপরাধ?
ফররুখ আহমদ সাহিত্যপদকে ভূষিত হলেন মুসা আল হাফিজ
-আরআর