শেখ ফজলুল করীম মারুফ
সভাপতি, ইশা ছাত্র আন্দোলন
ইসলামী সংগঠনগুলোর পারস্পরিক সম্পর্ক কি? আমরা কি পরস্পর প্রতিদ্বন্দ্বী? নাকি আমরা পরস্পর প্রতিযোগী?
প্রতিদ্বন্দ্বী হলো, যাকে আমি পরাস্ত করতে চাই। আর প্রতিযোগী হলো, যার সাথে প্রতিযোগিতা করে আমি এগিয়ে যেতে চাই। প্রতিদ্বন্দ্বীতায় এক পক্ষ হেরে যায় আর প্রতিযোগিতায় উভয় পক্ষই বিজয়ী হয়। কেউ একটু বেশী বিজয়ী হয় আর কেউ একটু কম।
সাহাবায়ে কেরামের মাঝে আমল নিয়ে পরস্পরের প্রতিযোগিতা ছিলো। কিন্তু মুসলমানের সাথে মুসলমানের প্রতিদ্বন্দ্বীতা বৈধ না।
সম্পর্ক যখন প্রতিযোগিতার তখন আমি আমার এগিয়ে যাওয়ার জন্য কাজ করতে পারি কিন্তু অপর প্রতিযোগির কোন ক্ষতি করতে পারি না। সকল প্রতিযোগিতায় অপর পক্ষের ক্ষতি করা বা অপর পক্ষের সাথে অনৈতিক কাজ করা নিষিদ্ধ।
মনে করেন আপনার এক বন্ধু নিয়মিত তাহাজ্জুদের নামাজ পড়েন। এটা যেনে আপনি উজ্জিবিত হয়ে আপনিও তাহাজ্জুদের নামাজ পড়া শুরু করলেন। এটা প্রশংসনীয়।
কিন্তু তার নামাজ পড়া দেখে আপনি তার জায়নামাজে নাপাক লাগিয়ে দিলেন যাতে তার নামাজ না হয় এর পরে আপনি এসে ধুমায়া তাহাজ্জুদ পড়া শুরু করলেন।
আপনিই বলুন! এই কাজটা কত জঘন্য হবে?
তাহাজ্জুদ তো নফল ইবাদত। পক্ষান্তরে ইসলামী আন্দোলন করা তো ফরজ। সেই ইসলামী আন্দোলন করতে গিয়ে যদি আপনি আপনার প্রতিযোগি ইসলামী সংগঠনের সাথে এমন আচরন করেন তাহলে সেটা কতটা জঘন্য হয়?
সুরা মায়েদা নাজিলের প্রেক্ষাপট চিন্তা করুন। কাফেররা হুদায়বিয়ার সময় রাসুল সঃ এর সাথে যে আচরন করেছেন তার প্রেক্ষিতে আল্লাহ তায়ালা নির্দেশনা জারি করেছেন,
কাফের শত্রু দল সাহাবায়ে কেরামকে উমরাহ করতে না দিয়ে যে বাড়াবাড়ি করেছে তার জবাবে সাহাবারা নিজেরা অগ্রবর্তী হয়ে যেন আবার কাফেরদের ওপর কোন অন্যায় বাড়াবাড়ি ও জুলুম না করে বসে।
কারণ অনেক কাফের গোত্রকে হজ্জ সফরের জন্য মুসলিম অধিকারভুক্ত এলাকার মধ্য দিয়ে যাওয়া আসা করতে হতো। মুসলমানদেরকে যেভাবে কাবা যিয়ারত করতে দেয়া হয়নি সেভাবে তারাও এ ক্ষেত্রে জোর পূর্বক এসব কাফের গোত্রের কাবা যিয়ারতের পথ বন্ধ করে দিতে পারতো।
কাফেরদের সাথেই এই হলো ইসলামের আচারবিধি। সেখানে ইসলামী সংগঠনগুলোর পারস্পরিক আচারবিধি কেমন হওয়া উচিৎ?
কিন্তু তারমানে এই না যে, সবাই সবার দল বিলুপ্ত করে দিয়ে এক ব্যানারে, এক মঞ্চে, এক পতাকার তলে এসে দাড়াতে হবে, বা সবাইকে একই রকম কর্মসুচি নিয়ে কাজ করতে হবে। আমরা অনেকেই ঐক্য বলতে এটাকেই বোঝাই। এবং এই অদ্ভুত ধরনের ঐক্য নাই বলে কান্না করি।
আওয়ার ইসলাম ঈদ সংখ্যা ঘরে বসে কিনতে অর্ডার করুন
আদতে ঐক্য বলতে কেবল এটাই বোঝায় না। বরং এই ধরনের ঐক্য উম্মাহর বড় ধরনের ক্ষতি ডেকে আনতে পারে। কারন ‘সব ডিম এক ঝুড়িতে রাখলে’ এক সাথে সব খোয়ানোর আশঙ্কা থেকে যায়।
তাই ভিন্ন ভিন্ন সংগঠন, ভিন্ন ব্যানার, ভিন্ন মঞ্চ, ভিন্ন উপস্থাপনা কৌশল থাকা ভালো। তবে সবার লক্ষ্য হবে এক এবং পরস্পর পরস্পরের প্রতিদন্দ্বী না হয়ে প্রতিযোগি হবে।
এটাই হবে ঐক্য। আবারো বলি, ইসলামী সংগঠনগুলোর সম্পর্ক হবে প্রতিযোগিতার, প্রতিদ্বন্দ্বীতার নয়।
ফেসবুক ওয়াল থেকে