আওয়ার ইসলাম: সম্প্রতি শহিদুল্লাহ নামের একজন হাফেজকে গ্রেফতার করা হয়েছে যিনি ইয়াবা বিক্রি করতেন। সময় টিভির ধারণ করা ওই ফুটেজ নিয়ে তীব্র সমালোচনা চলছে গণমাধ্যম ও যোগাযোগ মাধ্যমে।
ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, একটি মসজিদে এক ব্যক্তি নামাজ পড়ছেন। নামাজ শেষ হতেই তার কাছে আরেক ব্যক্তি আসেন। তার কাছে নামাজি ব্যক্তিটি একটি ব্যাগ হস্তান্তর করেন। তিনি ব্যাগ নিয়ে বাইরে এলে গোয়েন্দা পুলিশ তাকে সার্চ করে ব্যাগটিতে ইয়াবার দুটি প্যাকেট পায়।
রিপোর্টে জানানো হয় শহিদুল্লাহ টেকনাফের বাসিন্দা। সেখানকার একটি মাদরাসায় হিফজ পড়ে পটিয়া মাদরাসার পড়ার পর দেওবন্দেও পড়েন। তিনি ঢাকার বিভিন্ন জায়গায় ইয়াবা সাপ্লাই দেন।
মে মাসের শেষ দিকে দেশব্যাপী মাদকের বিরুদ্ধে অভিযানে নামে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এ অভিযানে এখন পর্যন্ত প্রায় দেড়শ জন মাদকের কারবারি বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে টেকনাফের পৌর কাউন্সিলর একরামুল হকও রয়েছেন। যার মৃত্যু নিয়ে সর্বত্র তীব্র সমালোচনা চলছিল। কারণ নিহত একরাম মাদক কারবারি ছিলেন না।
মাদকের সঙ্গে যুক্ত ও অভিযুক্তদের যাদের গ্রেফতার করা হয়েছে এবং যারা নিহত হয়েছেন তাদের নিয়ে ফলাও করে কোনো নিউজ প্রতিবেদন হয়নি। কিন্তু শহিদুল্লাহর ক্ষেত্রে এমন ব্যতিক্রম কেন? প্রশ্ন উঠেছে বোদ্ধা মহলে।
শহিদুল্লাহ একজন হুজুর, তার মুখে দাড়ি আছে তাই কি তাকে ফলাও করা? নিরীহ কওমি মাদরাসাকে প্রশ্নবিদ্ধ করা?
এমনই অভিযোগ তুলেছেন লেখক ও সম্পাদক মাওলানা দেলোয়ার হোসাইন সাকী। তিনি ফেসবুকে এক স্ট্যাটাসে লিখেছেন, অনেক ইয়াবা ব্যবসায়ীকে বিনা বিচারে হত্যা করা হয়েছে। গ্রেফতার হয়েছে হাজার হাজার। তবে কেন শুধু শহীদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের গল্প উঠে আসল। যাদের হত্যা করা হয়েছে তারা সবাই কী মূর্খ। কোন প্রতিষ্ঠানে ক্লাস ওয়ানও পড়েনি।
তিনি সময় টিভির কর্তৃপক্ষকে ইঙ্গিত করে বলেন, শহীদ নিয়ে আপনাদের রিপোর্ট গভীর চক্রান্তের অংশবিশেষ। দেশের কওমি মাদরাসাকে বিতর্কিত করার নীল নকশা। জাতি সজাগ ও সচেতন। আপনাদের গাঁজাখুরি গল্প জনগণ ইতোমধ্যে প্রত্যাখ্যান করেছে।
অনলাই এক্টিভিস্ট মাওলানা সাইমুম সাদীও একই অভিযোগ করে ফেসবুকে লিখেছেন, পুরো ঘটনাটাই সিনেমাটিক হয়ে গেল! এগুলো আমরা সিনেমায়, নাটকে দেখি, বাস্তবে কঠিন। হুজুর ইয়াবাবা নিয়ে বের হলেন ওৎ পেতে থাকা গোয়েন্দা ঝট করে ইয়াহু বলে ধরে ফেললেন এবং সময়মত সময় টিভিও হাজির!
তিনি লিখেন, আজ হজুরের মাদক সংক্রান্ত ঘটনার কোন বিশ্লেষণ করছিনা। আমার দৃষ্টি আকৃষ্ট হয়েছে ছোট্ট একটা ব্যাপার নিয়ে। মিডিয়া বলতে ভুলেনি যে এই হুজুর পটিয়া ও দেওবন্দ মাদরাসা থেকে মাওলানা হয়ে এসেছেন এবং জানতে পারলাম এটা সঠিক নয়। অন্তত পটিয়া মাদরাসায় উনি কখনো পড়েননি।
এ পর্যন্ত শতাধিক লোক কতল হয়েছেন ক্রসফায়ার নামক কথিত যুদ্ধে এই অভিযান চলাকালে। গ্রেফতার হয়েছেন কয়েক হাজার। কে কোথায় পড়েছেন মিডিয়া কখনো বলেছে? বলেনি। কিন্তু এইক্ষেত্রে বলার উদ্দেশ্য কি?
একই প্রশ্ন ছাপিয়ে উঠেছে বিভিন্ন গণমাধ্যমের রিপোর্ট ও টকশোতে। একাত্তার টিভির টকশোতে বিষয়টি আলোচনায় এলে বাংলাভিশনের হেড অব নিউজ মোস্তফা ফিরোজ বিষয়টির তীব্র সমালোচনা করেন।
তিনি বলেন, আমি একজন মুসলিম হিসেবে বিষয়টা কষ্ট পাচ্ছি। শহিদুল্লাহকে কেন টিভিতে এভাবে প্রচার করা হলো? তারা কি এটা বুঝাতে চাইল মসজিদ মাদরাসায়ও ইয়াবা ব্যবসায় জরিয়ে যাচ্ছে? লোকটিকে দিয়ে আবার কুরআন তেলাওয়াতও করানো হলো রিপোর্টে। এটা অত্যন্ত দুঃখজনক।
[video width="396" height="222" mp4="http://ourislam24.com/wp-content/uploads/2018/06/71.mp4"][/video]
এদিকে ঘটনাটি নিয়ে গণমাধ্যমে একটি বিবৃতি দিয়েছে ‘নাফ বৃহত্তর কাওমী ছাত্র সংগঠন’ নামের একটি সংগঠন।
বিবৃতিতে সংগঠনের সভাপতি মাওলানা আরিফুল ইসলাম রাফি ও সাধারণ সম্পাদক মাওলানা সাইদুল ইসলাম সায়েম বলেন, শহীদুল্লাহ শাহপরীরদ্বীপের একটি মাদরাসা থেকে শিশুকালে হিফজ শেষ করার পর কোন মাদরাসার নিয়মিত ছাত্র ছিল না। তার আদর্শ খারাপ হওয়ায় কোনো মাদরাসায় তাকে ছাত্রত্বের সুযোগ দিত না।
চুরির অপরাধে শহীদকে মাদরাসা থেকে শাস্তি দিয়ে বহিস্কারও করা হয়েছিল। সে ভারতের দেওবন্দ ও ঐতিহ্যবাহী চট্টগ্রামের পটিয়া মাদরাসায় কোনো সময় পড়ালেখা করেনি। আটক শহীদ আলেম নয়, কোন মাদরাসা থেকে সে দাওরা হাদিস পাশ করেনি, তার কোন সনদপত্র নেই।
বিবৃতিতে তারা আরও জানান, পরিবারের দাবি- শহীদকে ১ সপ্তাহ আগেই ঢাকায় আটক করে প্রশাসন। গ্রেপতারের সময় তার পরনে শর্ট পাঞ্জাবি থাকলেও মিডিয়ায় রিপোর্টের সময় দেখা হয় জুব্বা। বিষয়টি পুরোই নাটকীয়।
যশোরে নয় হাজার ইয়াবাসহ ৪ মাদক ব্যবসায়ী অাটক
-আরআর