মুহিব খান
কবি ও শিল্পী
পবিত্র রমজান মাসে সারাদেশে মাদকবিরোধী অভিযান চলছে, বিষয়টি অত্যন্ত স্বস্তি এবং প্রসংশার। এ অভিযানে ভুল তথ্যের কারণে, এমনকি উদ্দেশ্যমূলকভাবেও কিছু নিরপরাধ নিরীহ মানুষ চরম মানহানি, হয়রানি ও নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন বলে জানা যাচ্ছে, এ বিষয়টি তীব্র নিন্দা ও বেদনার।
নিরপরাধ একটি মানুষেরও সম্মান সম্ভ্রম ও জীবন কেড়ে নেয়ার চুলপরিমান অধিকার কোনো ব্যক্তি সংঘ বা রাষ্ট্রের নেই। ধর্মীয় বিধানেও নেই, রাষ্ট্রীয় আইনেও নেই। এর ভয়াবহ পরিণতি আজ না হোক কাল ঘটবেই।
একটি স্বাধীন দেশের একজনমাত্র সাধারণ নিরপরাধ মানুষও যদি রাষ্ট্রীয় আইন শৃংখলা বাহিনীকে নিজের জান মাল ইজ্জতের জন্য হুমকি মনে করেন, তাহলে স্বাধীনতা অর্থবহ থাকে না।
কাজেই জনমনে আতঙ্ক বিস্তার এবং বিনাবিচারে হত্যাকাণ্ড নয়, মাদকের বিরুদ্ধে দেশের আইন অনুযায়ী নির্ভুল স্বচ্ছ ন্যায়সংগত অভিযান নিশ্চিত করা হোক।
রমজানে খাদ্যদ্রব্যে বিষ ও ভেজাল প্রয়োগকারী এবং কৃত্রিম উপায়ে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধিকারী অপরাধীদের বিরুদ্ধেও এ ধরণের কঠোর অভিযান আরও বেশি প্রয়োজন ছিলো। নির্ভুল স্বচ্ছ ন্যায়সংগতভাবে যদি কোন অভিযান চলে, জাতি স্বাগত জানাবে।
মাদকের বিরুদ্ধে প্রাণক্ষয়ী এ অভিযানের কারণ যদি এই হয়ে থাকে যে, মাদক আমাদের যুবসমাজ তথা গোটা জাতিকেই নষ্ট ও ধ্বংস করে দিচ্ছে; তবে স্বীকার করতে হবে- আমাদের যুবসমাজ ও জাতিকে খুন ধর্ষণ পরকিয়া ও লাম্পট্যের বিষক্রিয়ায় তিলে তিলে আরও বেশি নিঃশেষ করে দিচ্ছে অবাধ নগ্নতা ও অশ্লীলতা।
যা কিনা অশ্লীলতা ও উলঙ্গপনায় ভরপুর অসংখ্য ফ্যাশন বিজ্ঞাপন নাটক চলচ্চিত্র ও ইন্টারনেটের মাধ্যমে জাতির শিরায় শিরায় রগরেষায় ক্যান্সারের মতোই ছড়িয়ে পড়ছে। সমাজ ও পরিবারের যাবতীয় ভাঙ্গন স্খলন ও অস্থিরতার জন্য এ অশ্লীলতাই দায়ী।
আমার দাবী, চলমান মাদকবিরোধী অভিযান শেষ হওয়ার পর বা এর পাশাপাশি দেশের সকল অশ্লীল বিজ্ঞাপন ফ্যাশন নাটক চলচ্চিত্র আইডি পেইজ ও ওয়েবসাইটের সাথে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে ব্যাপক দমন ও নির্মূল অভিযান চালানো হোক। সকল নগ্ন-অশ্লীল নায়ক নায়িকা গায়ক গায়িকা লেখক রচয়িতা নির্মাতা পরিচালক প্রযোজক ফ্যাশনমেকার ও কলাকুশলীদের গ্রেপ্তার জেল জরিমানা প্রদান করা হোক।
আর হ্যাঁ, কোন অপরাধীকেই বিনা প্রমাণে ও বিনা বিচারে হত্যা করা বৈধ নয়। এরপরও যদি সন্ত্রাস দমন, জঙ্গি দমন, মাদক দমনে তা চলে, তবে দেশের কোমলমতি শিশু কিশোরদের হাতে হাতে ঘৃণ্যতম পর্ণো পৌছে দেয়া, সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে নগ্নতা ও অশ্লীলতা ছড়িয়ে দেয়ার সঙ্গে জড়িত এসব ভদ্রবেশী কুলাঙ্গার ও সমাজের কীটদের ক্রসফায়ারে নির্মূল করতে দেরি কেন? বিনাবিচারে ক্রসফায়ার যদি চলেই; তবে মাদকের মতো অশ্লীলতা নির্মূলেও ক্রসফায়ার চলুক!
আরও পড়ুন : রিলিজ হলো মুহিব খানের ‘তারানায়ে মাদারিসে কওমিয়া’