মুহিব খান: বিশ্বকাপ। ফুটবল খেলার আন্তর্জাতিক আসর। তবে যতো যাই হোক, খেলা তো খেলাই! এর সঙ্গে পৃথিবী ও মানবজাতির ইহ-পরকালের মৌলিক কোনো কল্যাণের সম্পর্ক নেই।
এরপরও খেলাপাগল বাঙালি বিশ্বকাপ নিয়ে এতোটাই উন্মাদনায় মেতে ওঠে; যা কোনোপ্রকার স্বাভাবিক সীমারেখাতেই পড়ে না। মাদকাসক্তির মতোই এর ছোবল জাতিকে ক্ষতিগ্রস্থ, বিভ্রান্ত ও অসম্মানিত করে।
মাসব্যাপী নিজের স্বাধীন দেশের আকাশে যার যার সমর্থিত বিদেশী পতাকা উড়িয়ে রাখা, ভিটামাটি বেচে রেকর্ড আকারের বিদেশি পতাকা তৈরি ও প্রদর্শন করা, বিদেশি পতাকার রঙে বাড়ি গাড়ি চুল চেহারা রঙিন করা, এসব মুর্খতা ও বাড়াবাড়িই নয় শুধু, নিজের দেশকে অসম্মান করাও বটে, যা রাষ্ট্র-অবমাননার শামিল।
জাতীয় বাজেটে ক্রীড়াখাতে কাড়ি কাড়ি অর্থ বরাদ্দ সত্ত্বেও, রাজধানীর সবচে গুরুত্বপুর্ণ বৃহৎ স্টেডিয়ামটি স্থায়ীভাবে দখলে রাখা সত্ত্বেও, ক্রীড়া কর্মকর্তা ও খেলোয়াড়দের বিলাসী জীবনযাপনের সকল সুযোগ সুবিধা সত্ত্বেও যে খেলার বিশ্ব-আসরে অংশগ্রহণ করার দূরবর্তী সম্ভাবনার আশেপাশেও নিজের দেশের ফুটবল এখনও পৌছুতে পারেনি; সে খেলায় বিদেশের জন্য এতো উতলা হওয়া জাতির জন্য একপ্রকারের নির্লজ্জতাও।
বিশ্বকাপ ক্রিকেটে বাংলাদেশের অংশগ্রহণের আগে দেশের আকাশজুড়ে যদি ভারত ও পাকিস্তানের পতাকা এভাবে বে-লাগাম উড়তো, তবে বিষয়টি কেমন লাগতো! এখনও কি তেমনই লাগা উচিত নয়?
আমি বলতে চাই, এই ফালতু খেলাধূলার রঙ ঢঙের চেয়ে আরাকান, কাশ্মীর, সিরিয়া ও ফিলিস্তিনের নির্যাতিত মুসলমানদের করুণ পরিস্থিতি বাংলাদেশের ৯০ ভাগ মুসলিম নাগরিকের কাছে হাজারগুণ গুরুত্বপূর্ণ ও মর্মস্পর্শী।
গর্ভনিরোধক ব্যবস্থা মুসলিম পরিবারের জন্য নয়: এরদোগান
দেশের সংবিধান বা আইন লঙ্ঘন করে বিদেশের সমর্থনে যদি বিদেশি পতাকা ওড়ানো বৈধই হয়, এতে যদি রাষ্ট্র বা আদালতের কোনো আপত্তি না-ই থাকে, তাহলে বিদেশের খেলার সমর্থনে নয়, বরং (সংবিধানের দ্বিতীয় ভাগের ২৫ অনুচ্ছেদের (গ) ধারার অনুকুলে) সারাবিশ্বের স্বজাতীয় মজলুম মুসলমানদের তথা নিপিড়ীত মানবতার মুক্তি ও স্বাধীনতার সমর্থনে তাদের পতাকা ওড়ানোটাই এখন মানবতার দাবী। সময়ের দাবী।
কারণ ব্রাজিল আর্জেন্টিনা জার্মানির বিশ্বকাপ জেতার চেয়ে আরাকানী ও ফিলিস্তিনিদের নিজের ভুখণ্ড ফিরে পাওয়া এখন বেশি জরুরি। বিশ্বজনসমর্থন আজ তাদেরই বেশি প্রয়োজন।
তাই এবারের বিশ্বকাপেও যদি অতীতের মতোই দেশের আকাশজুড়ে নির্বিঘ্নে বিদেশের পতাকা উড়তে দেয়া হয়, তবে আমি আমার নিজের বাড়ীর আকাশে অন্তত এই বিশ্বকাপের পুরো সময়টি জুড়ে ফিলিস্তিনের পতাকা ওড়াবো।
এদেশের কোটি কোটি মুসলিম তরুণ-যুবকদের প্রতিও আমার এ আহবান রইলো।
জাগ্রত কবি মুহিব খানের ফেসুবক টাইমলাইন থেকে