কাউসার লাবীব: মাদরাসা নুরুল কুরআন নামে একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রমজানে তাদের মাদরাসা মিলনায়তনে ৭ দিনের তারাবির আয়োজনের পোস্টারিং করেছে রাজধানীর বিভিন্ন জায়গায়।
পোস্টারে লেখা হয়, ‘ব্যস্ত ও কর্মজীবি ভাইয়েরা অতি ব্যস্ততার কারণে রমজান মাস পেয়েও ২৭ দিনের খতমে তারাবিতে নিয়মিত অংশগ্রহণ করতে পারেন না তাদের জন্য সুখবর।’
মাদরাসা নুরুল কুরআন ঢাকার মুসলিমনগর আমান সিটি, মাতুয়াইল, যাত্রাবাড়ীর উদ্যোগে পবিত্র মাহে রমজান উপলক্ষে মাত্র ৭ তারাবিতেই পবিত্র কুরআন খতম করার উদ্যোগ নিয়েছে। জামাতের সময়, রাত সাড়ে ৮টা।’
৭ দিনে খতম তারাবি ইতোপূর্বেও বিভিন্ন জায়গায় পড়া হয়েছে এবং এটি স্বাভাবিক একটি বিষয় হিসেবেই দেখেছে মানুষ। তবে এর জন্য পোস্টারিং করা এবারই প্রথম। যে কারণে বিষয়টি নিয়ে ফেসবুকে চলছে আলোচনা।
পোস্টারটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হয়ে পড়ে এবং তাদের এ উদ্যোগকে মানুষ ইতিবাচক ও নেতিবাচক উভয় দৃষ্টিতেই দেখতে শুরু করেছে।
তারাবির জন্য পোস্টারিংয়ের বিষয়টি জানতে চাইলে আয়োজক কর্তৃপক্ষ আওয়ার ইসলামকে জানায়, অধিক লোক সমাগমের প্রত্যাশায় এ পোস্টারিং।
কী উদ্দেশ্য মাথায় রেখে এ উদ্যোগ? জানতে চাইলে উক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রিন্সিপাল মাওলানা তাওহিদুল ইসলাম পোস্টারে উল্লিখিত বিষয়গুলোই বলেন।
পোস্টারটি নিয়ে ফেসবুকে সমালোচনা হচ্ছে জানানো হলে তিনি বলেন, আমি ফেসবুক ব্যবহার করি না। তাই এ সম্পর্কে বলতে পারবো না। তবে আমাদের এ উদ্যোগ নিয়ে কেন সমালোচনা হচ্ছে তা বুঝতে পারছি না।
তিনি বলেন, আমাদের সাহাবায়ে কেরামও তো ৩দিন, ৭দিনে তারাবিতে কুরআন খতম করতেন। তাছাড়া এটাতো আমরা কোনো মোহ নিয়ে করিনি। আমাদের তারাবির জামাত যেন লোকে লোকারণ্য হয়ে ওঠে, সেজন্যই এমনটি করা।
যাদের ফেসবুকে পোস্টারটি নিয়ে সমালোচনা করে পোস্ট দিতে দেখা গেছে তাদের মধ্যে রয়েছেন যুবকণ্ঠ পত্রিকার সম্পাদক মুফতি নেয়ামতুল্লাহ আমিনও। কেন তিনি বিষয়টিকে নেতিবাচকভাবে দেখছেন? জানতে চাওয়া হলে বলেন, ৭দিনে তারাবি নিয়ে অবাধে এভাবে পোস্টারিং করার মাধ্যমে তারাবি বিরোধীদের উষ্কে দেওয়া হয়।
ঢাকার সব জায়গায় যথেষ্ট পরিমাণ মসজিদ আছে। এতোগুলো মসজিদ রেখে নিজের প্রতিষ্ঠানকে হাইলাইট করার জন্য এমন তারাবির আয়োজন কখনো ঠিক না বলে জানান তিনি। আর একান্ত কোনো প্রয়োজনে যদি ৭দিন, ১০দিনে তারাবি পড়তেই হয় তাহলে এটা নিয়ে পোস্টারিং করতে হবে কেন?
তিনি বলেন, আমার এলাকা উত্তরা, দক্ষিণখান, আজমপুর মুন্সি মার্কেট এলাকায় আমি দেখেছি, যেখানে ৭দিন, ১০ দিনে খতম হয় সেখানে মুসল্লিরা অনেক সময় খতম শেষ হওয়ার পর এশার নামাজ পড়তেও মসজিদে আসে না।
দেখুন ও সাবস্ক্রাইব করুন আওয়ার ইসলাম টিভি
এমনকি এলাকার মসজিদে তারাবি না পড়ার কারণে মসজিদে এলে যদি এলাকাবাসী বা ইমাম সাহেব কিছু জিজ্ঞেস করেন! তাই সে কোনো ওয়াক্তের নামাজেই মসজিদে আসে না।
আয়োজকরা তো বলছেন, সাহাবায়ে কেরামও এমন অল্প কয়েকদিনে তারাবিতে কুরআন খতম করেছেন। তাহলে আপনি কেন তাদের বিরোধিতা করছেন? যারা পরবর্তীতে নামাজ পড়ে না সেটা তো একান্তই তাদের ব্যপার।
এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সাহাবায়ে কেরাম তাদের মতো ৩দিনে খতম করে সারা মাস বসে থাকতেন না। তাঁরা প্রত্যেক ৩দিনে খতম করতেন। শায়খুল হাদিস যাকারিয়া রহ. এর কথা শুনেছি, তিনি রমজানে তারাবিতে দশ পনেরটা খতম করতেন। প্রথম তিন দিনে খতম করে সারা রমজান ফাঁকি দেননি।
তাছাড়া আকাবির, সালাফের কেউ কি তাদের তারাবি নিয়ে এভাবে পোস্টারিং করেছেন। এমনকি আমি এই সময়ে তো কাউকে এভাবে পোস্টারিং করতে দেখিনি। তারা এটা কেন করলো? হতে পারে তাদের উদ্দেশ্য ভালো।
তবে তাদের এ কাজ আমাদের সমাজে নতুন ফেতনার জন্ম দিবে। তাই নতুন কোনো কিছুকে বেশি হাইলাইট না করা ভালো।
জর্দানে রাষ্ট্রীয়ভাবে ২০ রাকাত তারাবি আদায়ের নির্দেশ
-আরআর