শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪ ।। ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ ।। ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬


রোহিঙ্গাদের ভারতে প্রবেশে বাধা দিতে সীমান্তে নজরদারির নির্দেশ

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

আওয়ার ইসলাম: বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গা শরণার্থীরা যাতে ভারতে প্রবেশ করতে না পারে সেজন্য সীমান্তে কঠোর নজরদারির নির্দেশ দিয়েছে দেশটির সেনাবাহিনী।

এ ব্যাপারে ভারতের সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের সেদেশে প্রবেশের অনুমতি দেয়া হবে না কারণ গোয়েন্দা বাহিনীর হাতে তথ্য রয়েছে শরণার্থীদের অনেকের সাথে পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থার সম্পর্ক রয়েছে। সম্প্রতি ভারত সরকার জানিয়েছে, সেদেশে আশ্রয় নেয়া শরণার্থীদেরকেও বের করে দেয়া হবে।

পর্যবেক্ষকরা বলছেন, ভারত সরকারের রোহিঙ্গা বিরোধী নীতি থেকে বোঝা যায়, তারা দুটি লক্ষ্য অর্জনের চেষ্টা করছে। প্রথমত, বাংলাদেশের সঙ্গে সীমান্ত বন্ধ করে দিয়ে এবং এরই মধ্যে ভারতে আশ্রয় দেয়া রোহিঙ্গা শরণার্থীদেরকে বের করে দেয়ার সিদ্ধান্তের মাধ্যমে মূলত তারা বাংলাদেশ সরকারের ওপর আরো বেশি চাপ সৃষ্টির চেষ্টা করছে যাতে ঢাকা কর্তৃপক্ষ রোহিঙ্গাদেরকে নিজ দেশের নাগরিক হিসেবে গ্রহণ করতে বাধ্য হয়।

যেমনটি মিয়ানমার সরকার দাবি করে থাকে রোহিঙ্গা মুসলমানরা সেদেশের নাগরিক নয় বরং তারা বাঙালি এবং অভিবাসী হিসেবে প্রতিবেশী বিভিন্ন দেশে অবস্থান করছে। এখন মিয়ানমার সরকারের সঙ্গে সুর মিলিয়ে ভারত সরকারও একই কথা বলছে।

দ্বিতীয়ত, রোহিঙ্গা শরণার্থীদের সঙ্গে পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থার সম্পর্ক থাকার অভিযোগ তুলে ভারত সরকার আসলে এমন এক পরিস্থিতি সৃষ্টির চেষ্টা চালাচ্ছে যাতে শরণার্থীরা ভারতে আশ্রয় চাওয়ার কোনো সুযোগ না পায়।

এমনকি ভারত সরকার এর আগে রোহিঙ্গাদেরকে সন্ত্রাসী অভিহিত করে আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তাদের বিরুদ্ধে নেতিবাচক প্রচার চালিয়ে এমনভাবে তাদের সম্পর্কে খারাপ ধারণা সৃষ্টির চেষ্টা চালিয়েছে যাতে তাদেরকে আশ্রয় না দেয়ার পক্ষে যুক্তি দেখানো যায়।

বাংলাদেশের রাজনৈতিক মহল মনে করেন, মিয়ানমারের সঙ্গে ভারতের সুসম্পর্ককে কাজে লাগিয়ে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গা শরণার্থীদের নিজ দেশে ফেরত পাঠানোর সুযোগ রয়েছে। বাংলাদেশের রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞ সৈয়দ মোয়াজ্জেম আলী বলেছেন, মিয়ানমারের সঙ্গে ভারতের অর্থনৈতিক ও প্রযুক্তিগত সহযোগিতা থাকায় ভারত ইচ্ছে করলে রোহিঙ্গা মুসলমানদের ওপর গণহত্যা বন্ধে ভূমিকা রাখতে পারে।

এর অন্যথায় এ অঞ্চলে নিরাপত্তাহীনতা সৃষ্টির জন্য উগ্রপন্থীদের বিস্তার ঘটতে পারে। পর্যবেক্ষকরা বলছেন, বাংলাদেশে বর্ষার মৌসুম ঘনিয়ে আসায় এবং বন্যা ও পাহাড় ধ্বসের আশঙ্কা থাকায় দুর্যোগ পীড়িত শরণার্থীরা ভারতে পাড়ি জমা দিতে পারে বলে দিল্লি আশঙ্কা করছে।

এ অবস্থায় অন্তত মানবতার খাতিরে ভারত শরণার্থীদের আশ্রয় দেবে বলে আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক মহল আশা করছে যাতে বিভিন্ন ধরণের রোগ ছড়িয়ে পড়তে না পারে। আমেরিকার মিনেসোটা বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাপক উইলিয়াম ওরম্যান বিম্যান বলেছেন, "একটি বড় সমস্যা হচ্ছে রোহিঙ্গা মুসলমানরা বাঙালি হিসেবে পরিচিত এবং তারা বংশ পরম্পরায় মিয়ানমারে শত শত বছর ধরে জীবন যাপন করে আসছে। সুতরাং এ বিষয়টির একটি চূড়ান্ত সমাধান হওয়া দরকার।"

যাইহোক, মিয়ানমারে রোহিঙ্গা মুসলমানদের ওপর নির্যাতনের নিন্দা জানিয়ে ভারতের জনগণ বিক্ষোভ করেছেন।

এ অবস্থায় রোহিঙ্গাদেরকে ভারতে প্রবেশ করতে না দেয়া কিংবা ভারতে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদেরকে বের করে দেয়ার যে পদক্ষেপ সরকার নিয়েছে তাতে বর্তমান ক্ষমতাসীন বিজেপি সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হতে পারে বলে অনেকে মনে করছেন। সূত্র: পার্সটুডে

আরো পড়ুন- ‘কাকরাইলে যা ঘটছে তা খুবই দুঃখজনক ও বেদনাদায়ক’


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ