হাওলাদার জহিরুল ইসলাম
আওয়ার ইসলাম
গতকাল ২৯ এপ্রিল ভারতের ভবনাতপুরের কাশিফুল উলুম মাদরাসার খতমে বুখারিতে দারুল উলুম দেওবন্দের প্রধান মুফতি আল্লামা হাবিবুর রহমান খায়রাবাদি তাবলিগ জামাতে চলমান সংকট নিরসন বিষয়ে কথা বলেন।
তিনি বলেন, যদি আপনাদের মাঝে বিভক্তির মানসিকতা থাকে তাহলে চলমান এখতেলাফের সমাধান হবে না। দারুল উলুম দেওবন্দ তাবলিগ জামাতের কাজে কোন ধরনের হস্তক্ষেপ করতে চায় না। দেওবন্দ কোন এক গ্রুপের পক্ষাবলম্বনও করে না।
বরং দারুল উলুম দেওবন্দ তো সব সময় এটাই বলে আসছে, যেভাবে আগেও আল্লাহর জন্য দীনের কাজ করে আসছিলে এখনও সেভাবেই ঐক্যবদ্ধ হয়ে দীনের কাজ করতে থাকো। রাজনৈতিক পার্টির মতো দলে দলে বিভক্ত হয়ে যেয়ো না। পরস্পরকে গালমন্দ করো না। এক গ্রুপ অন্য গ্রুপের বদনাম করো না।
মাওলানা সাদ কান্ধলভির ব্যাপারে দারুল উলুুম দেওবন্দের ফতোয়ার বিষয়ে আল্লামা খায়রাবাদি বলেন, দেওবন্দের কাছে মাওলানা সাদ কান্ধলভির এক বয়ান পৌঁছেছে। যাতে হজরত মুসা আ. এর শানে গোস্তাখি প্রকাশ পায়।
ভারতের বিভিন্ন এলাকা থেকে দেওবন্দের মুহতামিম আল্লামা আবুল কাসেম নোমানির কাছে এ মর্মে অসংখ্য চিঠি আসতে থাকে যে, এটা (তাবলিগ জামাত) আমাদের আকাবির আসলাফের রেখে যাওয়া আমানত। এখানে এমন সব কথা বলা হচ্ছে! নবির শানের খেলাফ কথা হচ্ছে। আপনারা মাওলানা সাদ কান্ধলভিকে বুঝান, সতর্ক করুন।
তখন হজরত মুহতামিম দেওবন্দের শীর্ষ মুরুব্বীদের নিয়ে পরামর্শে বসেন। ওই পরামর্শে যা সিদ্ধান্ত হয় সেগুলো লিখে মাওলানা সাদ কান্ধলভির কাছে চিঠি আকারে প্রেরণ করেন। সেখানে তাকে বয়ানের বিষয়ে সতর্ক করে বলা হয়, আপনি এমন কথা বলা থেকে বিরত থকুন যা নবিদের শানের খেলাফ হয়। তাদের সম্মানহানি হয়। তখন সাদ কান্ধলভি রুজুও করেন। কিন্তু পরবর্তীতে আবার তিনি একই কথা বলতে থাকেন।
তখন দেওবন্দ থেকে যে সিদ্ধান্ত প্রকাশ করা হয়েছিল তা শীর্ষ মুরুব্বিদের সম্মিলিত পরামর্শে করা হয়েছিল। অবশ্য আমি সে মজলিসে উপস্থি থাকতে না পারায় মুহতামিম সাহেব পরবর্তীতে তা আমাকে দেখিয়ে বলেন, আপনি দেখুন আমরা যে সিদ্ধান্ত জানিয়েছি তাতে কোন ত্রুটি আছে কিনা? তখন আমি ভালো করে দেখালাম, যে তাতে যা বলা হয়েছে তা সম্পূর্ণ সঠিক। ফলে অন্য মুরুব্বিদের মতো আমিও সেখানে স্বাক্ষর করি এবং তার সমর্থন জানাই।
সেটা কোন ফতোয়ার আকারে ছিলো না। বরং তা ছিল ব্যক্তি সাদ কান্ধলভির বিষয়ে সতর্কতামূলক একটি সিদ্ধান্ত। এটা তাবলিগ জামাতের ব্যাপারে কোন ফতোয়া ছিলো না। সাধারণ মানুষকে ভুল বুঝানো হয়েছে যে, তা নাকি তাবলিগ জামাতের ব্যাপারে ফতোয়া!
দেওবন্দ যা চেয়েছে তাহলো, বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে থাকা তাবলিগ জামাতের মধ্যে যেন কোন ভুল কথার প্রচলন না হয়ে যায়। সাধারণ তাবলিগি সাথীরা যেন ভুল থেকে বাঁচতে পারেন। তা না হলে দেখা যাবে, মারকাজের কোনো কথা হুবহু অন্য কেউ তা বয়ান করা শুরু করে দিবে! তখন তো তাদের ঈমান আমলই ঝুঁকিতে পড়ে যাবে।
কিন্ত বর্তমানে তাবলিগের সাথীদের মাঝে যে মতানৈক্য চরম আকার ধারণ করেছে তা তো অনেক পুরনো। ৩/৪ বছর আগ থেকেই ওই এখতেলাফ চলছিল। দেওবন্দের সম্মিলিত সিদ্ধান্তের কারণে কোনো এখতেলাফ তৈরি হয় নি। দেওবন্দ তো কেবল একটি গুরুত্বপূর্ণ শরঈ বিষয়ে সম্মিলিতভাবে সতর্কতা জারি করেছে।
আল্লামা খায়রাবাদি উপস্থিত তৌহিদি জনতার প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানিয়ে বলেন, আপানাদের কাছে আমার বিনীতে অনুরোধ করবো, আপনারা দলাদলি, গ্রুপিং ছাড়ুন, দীনের মেহনতে আরো বেশি করে জোড়ার চেষ্টা করুন। তাবলিগের কাজ পরস্পরের মাঝে বিভিক্তি তৈরি করার জন্য নয় বরং এ কাজ তো সব ধরণের মুসলমানের মাঝে সৌহার্দ্য, সম্প্রীতি, ঐক্য সৃষ্টি করার জন্য।
আপনারা আগেও যেভাবে এখলাসের সঙ্গে দীনের কাজ করছিলেন এখনো সেভাবেই কাজ করুন। এক পক্ষ অন্য পক্ষের দোষ বর্ণনা থেকে বিরত থাকুন। যারাই যেভাবে তাবলিগের কাজ করছেন প্রত্যেকে কাজ করার সুযোগ দিন। একে অপরের বিরোধী না হই।
দেওবন্দের মুহতামিম আল্লামা আবুল কাসেম নোমানি দুই গ্রুপের ব্যাপারে এতাটাই সতর্ক যে, তিনি দারুল উলুম দেওবন্দের ছাত্রদের (মাদরাসায় থাকাকালীন) তাবলিগে যাওয়া নিষেধ করে দিয়েছেন। কেননা, এক গ্রুপের সাথে গেলে অন্য গ্রুপ মনে করবে দেওবন্দ বুঝি তাদের সমর্থন দিচ্ছে। এবং তিনি এটাও বলে দিয়েছেন যে, যতো দিন পর্যন্ত তাবলিগ জামাতের দুই গ্রুপের মতপার্থক্যের ইতি না হবে ততো দিন দেওবন্দের ছাত্ররা জামাতে বের হবে না।
আওয়ার ইসলাম টিভি- এখনই সাবস্ক্রাইব করুন
আমাদের কাছে, মুহাতামিম সাহেবের কাছে সাধারণ মুসলমানদের শত শত চিঠি আসে যে আপনারা কোন পক্ষের সঙ্গে আছেন? আমাদের উত্তর একটাই আমাদের আকাবির আসলাফের হাতে গড়া দীনি জামাতের সাথে আমাদের সম্পর্ক আগেও ছিলো এখনো আছে। তবে আমরা কোন গ্রুপের পক্ষে নই।
আমরা তাবলিগের কাজের সমর্থন করি। আমরা বিভক্তি চাই না। যখন কোনো জামাত বা দল শরিয়তের দৃষ্টিতে কোনো ভুল কাজ করে দেওবন্দ কেবল সে ভুলের ওপর সতর্ক করে থাকে।
তিনি বলেন, ভাই আমরা কেন বিভক্ত হবো? আমরা কেন কারো পক্ষের হয়ে কাজ করবো? মাওলানা সাদ কান্ধলভি তো সব সময় থাকবেন ন, মাওলানা আহমদ লাট তো সর্বদা থাকবেন না। তখন আমরা কার পক্ষের হয়ে কাজ করবো?
আমরা না মাওলানা সাদ কান্ধলভির জন্য কাজ করি আর না-ই মাওলানা আহমদ লাট এর জন্য কাজ করি। আমরা তো কেবল আল্লাহর জন্যই কাজ করি। বাস্তবে যদি তাই হয় তাহলে একে অন্যের প্রতি কাদা ছোঁড়াছুড়ি কী অর্থ হতে পারে?
তাই আমাদের সর্বদা হুঁশের সঙ্গে কাজ করতে হবে, জোশের সঙ্গে কাজ করা উচিত হবে না। সর্বদা মধ্যপন্থা অবলম্বন করে চলা উচিত।পূর্বেও যেমন জোড় মিল মুহাব্বতের সাথে কাজ করা হত এখনো সেভাবেই কাজের ধারা অব্যাহত রাখতে হবে এবং এ মহান মেহনতকে সামনে এগিয়ে নিতে হবে। আল্লাহ পাক আমাদের সবাইকে মুহাব্বত ও ঐক্যের ভিত্তিতে কাজ করার তাওফিক দিন। আমিন।
আরও পড়ুন: ‘তাবলিগের সমস্যার না মিটলে উম্মতের অপূরণীয় ক্ষতি হয়ে যাবে’
‘আলেমদের পরামর্শেই তাবলিগের মেহনত চালিয়ে যাওয়ার অঙ্গীকার’
বাসায় যেভাবে সময় কাটছে মাওলানা যুবায়ের ও সৈয়দ ওয়াসিফের
কাকরাইল মারকাজকে মাওলানা সাদের চিঠি
-আরআর