আওয়ার ইসলাম: গত দুই দিন ধরে বাংলাদেশের তাবলিগের মারকাজ কাকরাইল মসজিদে থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে।
কওমি মাদরাসার শিক্ষবর্ষ শেষে ছাত্র শিক্ষকদের তাবলিগে যাওয়ার উপলক্ষ্যে কাকরাইল মারকাজে ছাত্রদের ব্যাপক উপস্থিতি, তাবলিগের আম সাথীদের আসা এবং মোবাইল নেটওয়ার্ক বন্ধ করাসহ নানা ঘটনা ঘটে শুক্রবার দিনভর।
এ সময় দুই পক্ষের মধ্যে বিরোধ এবং হাতাহাতিও হয়। পরে দায়িত্বরত পুলিশ এসে অবস্থা নিয়ন্ত্রণে আনে।
জানা যায়, দেশের কওমি মাদরাসাগুলো ছুটির কারণে কয়েক হাজার মাদরাসা ছাত্র কাকরাইলে জড়ো হয় তাবলিগে সময় দেয়ার জন্য। বৃহস্পতিবার থেকে তারা আসতে থাকে কাকরাইল মসজিদে।
এদিকে দিল্লির নিজামুদ্দীন মারকাজে অনুষ্ঠিত ১৬-১৯ এপ্রিল বাংলাদেশিদের জোড়ে যে সিদ্ধান্ত হয়েছিল তা গতকাল সবার উপস্থিতিতে শোনানোর কথা ছিল। এ কারণে মাওলানা সাদপন্থীরাও জড়ো হন কাকরাইল মারকাজে।
গতকাল মারকাজে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা এড়াতে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা ছিল। দুপুরে মারকাজের ভেতরে মোবাইল নেটওয়ার্ক কাজ না করায় পুলিশ দুটি জ্যামার যন্ত্র উদ্ধার করেন।
লিল্লির নেজামুদ্দিন মারকাজের অনুসারীদের অভিযোগ, নেজামুদ্দিনের ফয়সালা যাতে কার্যকর করা না হয় এ কারণে ছাত্রদের আনা হয়েছে বিভিন্ন মাদরাসা থেকে। আর বাইরের কারো সঙ্গে যেন যোগাযোগ করা না যায় এ কারণে জ্যামার বসানো হয়েছিল।
তবে কাকরাইল মারকাজ শুরা সদস্য মাওলানা জুবায়ের আহমদের ছেলে মাওলানা হানজালা অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, দেশের মাদরাসাগুলো রমজানের আগে বন্ধ হয়ে যায়। ছাত্র শিক্ষক এবং আলেম উলামা এ সময় তাবলিগে সময় দেয়ার জন্য আসেন। তাদের আনার অভিযোগ ভিত্তিহীন।
জ্যামার বসানো বিষয়ে তিনি বলেন, নেজামুদ্দিনের অনুসারীরা পরামর্শে বসে কিছু না হতেই পুলিশ ডাকে। এ জন্য জ্যামার বসানো হয়েছিল।
জানা যায়, গতকাল কাকরাইলে জড়ো হওয়া আলেম উলামা ও শিক্ষার্থীরা কয়েকটি সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের জন্য সুপারিশ করেন।
এগুলো হলো, ১. মাওলানা সাদের কোনো ফয়সালা বাংলাদেশে মানা হবে না। ২. নিজামুদ্দিনের জোড়ে যে ২ জনকে বাংলাদেশের ফয়সাল নিযুক্ত করা হয়েছে তা কার্যকর করা যাবে না। ৩. কাকরাইলের কোনো সিদ্ধান্ত দুই তৃতীয়াংশ ফয়সারের সিদ্ধান্তেই কার্যকর হবে। ৪. কাকরাইলের কোনো চিঠি উলামা ফয়সালদের দস্তখত ছাড়া গ্রহণ হবে না।
কাকরাইল মারকাজের চলতি সপ্তাহের ফয়সাল মাওলানা রবিউল হক। তবে গতকাল তিনি এ সিদ্ধান্ত প্রাথমিকভাবে গ্রহণ করেন বলে জানা যায়।
মাওলানা হানজালা বলেন, আলেমরা এসব সিদ্ধান্ত নেয়ার জন্য প্রস্তাব করেছেন তবে শুরা সদস্যরা আলেম উপদেষ্টাদের সঙ্গে কথা বলা ছাড়া এসব চূড়ান্ত করবেন না বলেই মত দিয়েছেন।
এদিকে আজ শনিবার সকালে মশওয়ারা চলাকালীন নেজামুদ্দীনের অনুসারীরা বিভিন্ন হালকা থেকে মশওয়ারার কামড়ায় জড়ো হয়। এবং নেজামুদ্দীনের এতায়াতের বাইরের লোকদের উচ্চবাচ্চ করেন। এক পর্যায়ে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে।
বিষয়টি সম্পর্কে সৈয়দ ওয়াসিফুল ইসলাম আওয়ার ইসলামকে বলেন, গতকাল মাওলানা রবিউল হক সাহেবের ফয়সালাকৃত সিদ্ধান্ত ছিলো, নেজামুদ্দীন বা মাওলানা সাদের কোনো সিদ্ধান্ত বাংলাদেশে চলবে না। বিষয়টি ঢাকার হালকার সাথীদের কাছে জানাজানি হলে তারা এর প্রতিক্রিয়া জানাতে মারকাজে আসেন এবং মশওয়ারায় অংশ নেন।
এদিকে মাওলানা সাদপন্থীরা বলে যায়, তারা যদি নেজামুদ্দীনের ফয়সালা না মানেন তবে কাকরাইলের ফয়সালাও নেজামুদ্দীনের অনুসারীরা মানবেন না।
বিষয়গুলো নিয়ে আজ প্রশাসনের সঙ্গে শুরা সদস্যের বৈঠক অনুষ্ঠিত হচ্ছে। সে বৈঠকে কী সিদ্ধান্ত হয় সেদিকেই তাকিয়ে আছেন হাজারও ধর্মপ্রাণ মানুষ।
আরবি ভাষার জ্ঞান প্রয়োগে ইংরেজি শেখার বিশেষ কোর্স
-আরআর