নাজমুল হাসান সাদী
আওয়ার ইসলাম
পার্থিব জীবনে টিকে থাকতে হলে আমাদের বিভিন্ন প্রয়োজনের মুখোমুখি হতে হয়।
জীবিকা নির্বাহের তাগিদে বেছে নিতে হয় বিভিন্ন পথ। এজন্য আল্লাহ তায়ালাও আমাদের জন্য তার বৈধতা দিয়ে রেখেছেন। তিনি বলেছেন, তোমরা জমিনে ছড়িয়ে পড়ো এবং আল্লাহর দেওয়া রিজিক অনুসন্ধান করো। (সুরা জুমা, আয়াত: ১০)
কিন্তু, উপার্জনের যে কোনো পথেই আমরা চলতে পারি না, চলার পথটাও আল্লাহ তায়ালার মর্জি অনুযায়ী হতে হয়। তিনি বলেছেন, আল্লাহ বেচাকেনা বৈধ করেছেন, আর সুদকে করেছেন অবৈধ। (সুরা বাকারা, আয়াত: ২৭৫)
তিনি আরও বলেছেন, তোমরা একে অপরের সম্পদ অন্যায়ভাবে গ্রাস করো না। তবে পরস্পরের সম্মতিতে ব্যবসা হলে ভিন্ন কথা। ( সুরা নিসা, আয়াত: ২৯)
অন্যদিকে ব্যবসায়ীদের সম্পর্কে আমাদের নবি করিম স. বলেছেন, সত্যবাদী বিশ্বস্ত ব্যবসায়ী নবী-সিদ্দিক-শহিদগণের সঙ্গে থাকবেন।
কাজেই ব্যবসার প্রতি মানুষের উৎসাহের শেষ নেই। তবে সবাই কোটি টাকার বিজনেস খুলে বসে না, সে সাধ্যও সবার নেই। ন্যাচারাল এটা হয়ও না।
কুরআনে কারিমে সুরা জুখরুফের ৩২ নং আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, আমি মর্যাদায় কতককে কতকের ওপর উন্নীত করেছি, যেনো একে অপরের থেকে উপকৃত হতে পারে।
সৃষ্টিসমাজের প্রায় সবটুকুই আল্লাহ তায়ালা ন্যাচারাল করে করে দিয়েছেন। এজন্য একটি বিষয় আরেকটি বিষয়ের সঙ্গে ওতপ্রোত জড়িত দেখতে পাই।
সবাই এক লেভেলের হলে সবকিছু এলোমেলো আউলা হয়ে যেত। অতএব, যুক্তিসংগত কারণেই একে অপরের চেয়ে মর্যাদায় উন্নীত।
এজন্য অনেকে কোটি টাকার বিজনেস খুলে বসলেও অনেককে সন্তুষ্ট থাকতে হয় ফুটপাতের ছোট্ট দোকানটি নিয়েই, শুধু টুপি বিক্রি করেই জীবিকা নির্বাহ করতে হয় অনেকেরই।
আজ এমনই একজন টুপি বিক্রেতার জীবনের কিছু কথা তুলে ধরবো।
তার নাম জাফর। চাঁদপুরের মানুষ তিনি। বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ গেটে ফুটপাতের ওপর ছোট্ট দোকানে বসে দীর্ঘ বার বছর ধরে টুপি বিক্রি করে আসছেন। এই ১২ বছর শুধু টুপি বিক্রি করেই জীবিকা নির্বাহ করছেন তিনি।
টুপি বিক্রি ছাড়া অন্যকোনো কাজের সঙ্গে জড়িয়ে আছেন কিনা জানতে চাইলে কিছুটা গর্বের সঙ্গেই বলেন, না, শুধু টুপি বিক্রি করাই আমার কাজ।
তার পরিবার সম্পর্কে জানতে চাইলে বলেন, এমনিতে মা-বাবা ভাইবোন সবাই আছেন বাড়িতে, তবে আমার নিজের সংসারে শুধু স্ত্রী ও আমার ছোট্ট এক ছেলে। তারা বাড়িতেই থাকে। কিছুদিন পরে পরে আমি গিয়ে দেখে আসি তাদের।
দেখুন ও সাবস্ক্রাইব করুন আওয়ার ইসলাম টিভি
তার মাসিক আয় সম্পর্কে জানতে চাইলে বলেন, সবসময় একরকম হয় না, রমযানের সময় একটু বেশি বিক্রি হয়, তখন ৩০ হাজার মতোও হয়ে যায়। রমযান ছাড়া অন্যসময় পাঁচ-ছয় হাজার, বেশি হলে সর্বোচ্চ ১০ হাজার মতো হয়।
তিনি বলেন, সকাল নয়টা থেকে রাত দশটা পর্যন্ত এখানেই থাকি, দিনের চার ওয়াক্ত নামাজ এখানেই পড়ি। দশটার পর মগবাজার বাসায় চলে যাই। সেখানে আমরা চারজন একটা বাসায় থাকি, মাসে আট হাজার টাকা দিতে হয় বাসা ভাড়া, একেকজনের দুই হাজার করে।
বিক্রি করার তো অনেক কিছুই আছে, কিন্তু, সে টুপির প্রতি মনোযোগ দেওয়ার কী কারণ? জানতে চাইলে বলেন, আমি যখন লালবাগ পড়তাম, তখন লালবাগ শাহী মসজিদের কাছে আমার বাবার টুপির দোকান ছিলো, আমি বাবার সঙ্গে টুপি বিক্রি করতাম, তখন থেকেই এই ব্যবসার সঙ্গে জড়িয়ে আছি।
ফুটপাতে দোকান পাতার কারণে কোনো চাপের মুখোমুখি হয় কিনা, কিংবা চাঁদাটাদার যন্ত্রণা সইতে হয় কিনা জানতে চাইলে বলেন, না, ওই ধরনের কোনো অবস্থার মুখোমুখি হতে হয় না।
আর পুলিশও কিছু বলেন না, তবে রাস্তায় সার্জেন্ট নামলে তখন একটু সেভে থাকতে হয়।
জাফর ভাই আলিয়া মাদরাসায় ক্লাস এইট পর্যন্ত পড়ার পর লালবাগ জামিয়া কুরআনিয়ায় ভর্তি হন, সেখান থেকে হাফেজি শেষ করে এই কাজে নেমে পড়েন।
তিনি হাজিটুপি-জালিটুপি ও মোটা কাপড়ের টুপিসহ বিভিন্ন আইটেমের টুপি বিক্রি করে থাকেন। এসব টুপির প্রাইজ দুই থেকে চারশ টাকার ভেতরে, তবে এরচেয়ে কম মূল্যের টুপিও তার কাছে পাওয়া যায়।
সর্বশেষ তার এই সামান্য উপার্জনে সংসার কীভাবে চলে, জানতে চাইলে অত্যন্ত আনন্দচিত্তে বলেন, ভালো মতোই চলে যায় ভাই ।
তিনি আমার দিকে প্রশ্ন ছুড়ে দিয়ে বলেন, আল্লাহ বরকত দিলে এই সামান্যও কি কম মনে করেন নাকি?
গাজীপুর সিটি নির্বাচন; দুই আলেমের নগরপরিকল্পনা
-আরআর