সুলাইমান সাদী : গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ইসলামী ঐক্যজোটের পক্ষ থেকে লড়ছেন গাজীপুর জেলার হেফাজতে ইসলামের আমির মাওলানা ফজলুর রহমান। মিনার প্রতীকে তিনি নির্বাচন করবেন। জোরেশোরে শুরু করেছেন প্রচারণাও।
নির্বাচনে সাংগঠনিকভাবে হেফাজতে ইসলামের কোনো কর্তৃত্ব না থাকলেও ইসলামী ঐক্যজোটের প্রার্থী মাওলানা ফজলুর রহমান হেফাজতের নেতা হওয়ায় হেফাজত সমর্থকদের ভোটগুলো তার ঝুলিতেই যাবে বলে মনে করছেন অনেকে।
এছাড়াও এখানে আরেক ইসলামি দল ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থী রয়েছে। সেই প্রার্থীর হাতপাখা মার্কাতেও ইসলামপন্থীদের ভোট যাবে। সুতরাং এ নিয়ে বেশ শঙ্কায় রয়েছে বিএনপি ও ২০ দলীয় জোট।
২০১৩ সালের নির্বাচনে মাওলানা ফজলুর রহমান বিএনপি প্রার্থী এম এ মান্নানের পক্ষ হয়ে ভোট কালেকশন করলেও এবার ইসলামী ঐক্যজোট ২০ দলীয় জোট থেকে সরে পড়ায় তিনি নিজের জন্যই ভোট চাইবেন। এক্ষেত্রে হেফাজতের পরিচয়টা তাকে অনেকটা সাহায্য করবে বৈ কি?
মাওলানা ফজলুর রহমানের বরাতে গতবার বিএনপির ব্যালেটবক্সে পড়া ভোটগুলো বিএনপি এবার হারাতে বসছে। তাছাড়া গতবার নির্বাচনের আগে হেফাজতের আন্দোলনের কারণে বিএনপি বেশ সহানুভূতি পেয়েছেল হেফাজত বা ইসলামপন্থীদের। কিন্তু এবার সে হিসেবে গড়মিল দেখা যাবে।
আগামী ১৫ মের ভোটকে সামনে রেখে গাজীপুরে প্রার্থী পাল্টেছে বড় দুই দলই। আওয়ামী লীগ এবার মনোনয়ন দিয়েছে গতবারের ‘বিদ্রোহী’ জাহাঙ্গীর আলমকে। আর বিএনপি তার দলীয় প্রতীক দিয়েছে সাবেক জাতীয় পার্টির নেতা হাসানউদ্দিন সরকারকে।
আগামী ডিসেম্বর বা জানুয়ারির জাতীয় নির্বাচনের আগে এ ভোটযুদ্ধে নজর থাকবে সারা দেশের। ১১ লাখেরও বেশি ভোটার অধ্যুষিত এলাকায় গতবার বিএনপির প্রার্থীর বিপুল জয়ে এটিকে আর আওয়ামী লীগের দূর্গ বলার সুযোগ নেই। ফলে এখানে জয় মানেই দেশবাসীর কাছে একটি বার্তা পৌঁছে যাবে, জানা যাবে জনগণের কাছে কোন দলের গ্রহণযোগ্যতা বেশি।
আর জনপ্রিয়তার এই পরীক্ষায় পাস করতে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি এখন মরিয়া। বিএনপির শরিক জামায়াতের প্রার্থী এস এম সানাউল্লাহ এবং আওয়ামী লীগের শরিক জাসদের প্রার্থী রাশেদুল হাসান রানাকে ভোটের ময়দান থেকে তুলে দিতে দুই দলই চেষ্টা করেছে আপ্রাণ। এই নির্বাচনী এলাকায় জাসদ বা জামায়াত, কারও বলার মতো ভোট নেই। তারপরও ঝুঁকি নিতে চায়নি আওয়ামী লীগ বা বিএনপি।
মাওলানা ফজলুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, ‘রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটের কারণে আমরা ২০ দলীয় জোট থেকে আলাদা হয়ে গিয়েছি। স্বতন্ত্রভাবে আমরা নিজেদের মতো করে আন্দোলন সংগ্রাম করছি। ইসলামী ঐক্যজোট এবার নিবন্ধিত দল হিসেবে মেয়র পদে নির্বাচনে প্রার্থী দিয়েছে।’
এ বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জেলা বিএনপির একজন নেতা জানান, ‘হেফাজত নেতার আলাদা ভোট করা আমাদের জন্য সুখকর নয়। ২০১৩ সালে তারা আমাদের অনেক ভোট এনে দিয়েছিলেন। কিন্তু এবার আর তা হচ্ছে না, বরং ভোট ভাগ হয়ে যাবে। তবে এতে আমরা চিন্তিত নই। আমরা মনে করি তারপরও ধানের শীষের প্রার্থী এখানে জিতবে।’
এ বিষয়ে গাজীপুর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন সবুজ বলেন, ‘হেফাজতকে নিয়ে আমরা খুব একটা ভাবি না। বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা যেভাবে কওমি মাদরাসার সনদের স্বীকৃতি দিয়েছেন, তাতে আমি মনে করি এই ছাত্র-শিক্ষকরা প্রধানমন্ত্রীর প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তারা এবার আমাদেরই নৌকা মার্কায় ভোট দেবেন।’
এই নির্বাচনে আরও চার জন প্রার্থী আছেন। এরা হলেন, সিপিবির রুহুল আমিন, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশে মাওলানা নাসির উদ্দিন, ইসলামী ঐক্য ফ্রন্টের জালাল উদ্দিন এবং স্বতন্ত্র ফরিদ উদ্দিন।
৫৭টি সাধারণ ওয়ার্ড ও ১৯টি সংরক্ষিত নারী আসনে গাজীপুর সিটি করপোরেশনে মোট ভোটার সংখ্যা ১১ লাখ ৩৭ হাজার ৭৩৬ জন।
এসএস
আরো পড়ুন : গাজীপুর ও খুলনা সিটি নির্বাচনে বিএনপিও মাঠে থাকবে