আতাউর রহমান খসরু
আওয়ার ইসলাম
কওমি মাদরাসার ছাত্রদের কারিগরি প্রশিক্ষণ প্রদান এবং তাদের জন্য বিকল্প কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে গত ২৩ জানুয়ারি ২০১৭ সরকারের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয় ইকরা বাংলাদেশ।
মার্চ ২০১৭ আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয় প্রশিক্ষণ। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এটুআই প্রোগ্রামের অংশ হিসেবে এ প্রশিক্ষণের উদ্যোগ নেয়া হয়।
নানা তর্ক ও বিতর্কের মধ্যে শুরু হওয়া কারিগরি প্রশিক্ষণ কার্যক্রমটি পূর্ণ করেছে এক বছর। কিন্তু এখন কেমন চলছে তা? আদৌ কি তা সরকারের লক্ষ্য পূরণ করতে সক্ষম হচ্ছে? নাকি অন্য ৫টি উদ্যোগের মতো ভেস্তে যাচ্ছে এটিও?
শুরু হওয়ার পর থেকে কোর্স যথা নিয়মে চলছে বলে জানিয়েছেন ইকরা-এটুআই কারিগরি প্রশিক্ষণ প্রকল্পের চিফ কো-অর্ডিনেটর মাওলানা হুসাইনুল বান্না।
তিনি বলেন, ‘শুরু হওয়ার পর থেকে কোর্সগুলো যথা নিয়মে চলছে। এ পর্যন্ত প্রায় ৩ হাজার কওমি শিক্ষার্থী এ প্রকল্পের মাধ্যমে প্রশিক্ষণ পেয়েছেন। এখনও কয়েকটি ব্যাচ চলছে বিভিন্ন জায়গায়। তাই বলা যায়, আল হামদুলিল্লাহ! এ পর্যন্ত আমরা সফল।’
প্রকল্প শুরুর পূর্বে কম্পিউটার ও ড্রাইভিং কোর্সে প্রশিক্ষণের কথা থাকলেও এখন তার সাথে যুক্ত হয়েছে আমিনশিপ, ইলেক্ট্রিক ওয়ারিং ও টেইলারিং।
ছাত্রদের আগ্রহেই এসব বিষয় যুক্ত হয়েছে বলে দাবি করেন মাওলানা হুসাইনুল বান্না।
তিনি আরও বলেন, শুধু কোর্সের সংখ্যা বাড়ে নি। বেড়েছে পরিধিও। সরকারের সাথে স্বাক্ষরিত সমঝোতা চুক্তি অনুযায়ী শুধু আমাদের বোর্ডভূক্ত মাদরাসার শিক্ষার্থীদের প্রশিক্ষণ পাওয়ার সুযোগ ছিলো।
কিন্তু এখন কওমি মাদরাসার যে কোনো শিক্ষার্থী এ সুযোগটি গ্রহণ করতে পারবে।
নিয়ম হলো, ৩০ জন ছাত্র যাদের বয়স ১৮ থেকে ৩৩ বছর তারা একটি ব্যাচ গঠন করে আমাদের সাথে যোগাযোগ করবে। আমরা স্থানীয় সরকারি কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের মাধ্যমে তাদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করবো। শিক্ষার্থীরা মোট ২৯টি বিষয়ে প্রশিক্ষণ নিতে পারবে।
যারা সারা বছর প্রশিক্ষণ গ্রহণের সুযোগ পান না তারা ইচ্ছে করলে আগামী রমজানেও কারিগরি প্রশিক্ষণ করতে পারবেন। তবে তাদের অবশ্যই ২৬ এপ্রিলের মধ্যে ইকরা বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে।
প্রশ্ন হলো, প্রশিক্ষণ কতোটা ফলপ্রসূ হচ্ছে? নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন প্রশিক্ষণ গ্রহণকারী আওয়ার ইসলামকে বলেন, ‘প্রশিক্ষণের আয়োজন ঠিক থাকলেও ব্যবস্থাপনা নিয়ে কিছু সমস্যা আছে।
দেখা যায়, সব শিক্ষার্থী ঠিক মতো প্রশিক্ষণের সুযোগ পাচ্ছে না। উপস্থিতির হারও সন্তোষজনক নয়। অথচ সবাইকে উত্তীর্ণ ধরে নেয়া হয়।’
৩০ জনের ব্যাচ করার ব্যাপারেও আপত্তি জানিয়েছে এ শিক্ষার্থী। তার মতে সংখ্যাটা অনেক বেশি। এতে প্রাক্টিক্যাল ক্লাসের সময় সুযোগ পাওয়া যায় না।
কারিগরি প্রশিক্ষণ শুরু করার উদ্দেশ্য ছিলো কওমি মাদরাসার শিক্ষার্থীদের বিকল্প কর্মসংস্থান তৈরি করা। কিন্তু এটুআইয়ের দাবি অধিকাংশ কওমি শিক্ষার্থী প্রশিক্ষণ নিলেও কর্মমুখী হচ্ছে না।
মাওলানা হুসাইনুল বান্না বিষয়টি স্বীকার করে নিয়ে বলেন, ‘এখন পর্যন্ত যারা প্রশিক্ষণ নিয়েছেন তাদের বড় একটি অংশ শরহে বেকায়া ও জালালাইন স্তরের ছাত্র। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা শেষ না হওয়ায় তারা কর্মজীবনে ঢুকতে পারছে না।’
এক ক্লিকে ইনস্টল করুন ইসলামী যিন্দেগী
তিনি আরও বলেন, ‘এ সমস্যার সমাধানের জন্য আগামীতে ফারেগিন ছাত্রদের অগ্রাধিকার দেয়া হবে। বিশেষত যারা কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে পারে নি এবং যারা তাদের কর্মসংস্থান নিয়ে সন্তুষ্ট নয়।’
তবে সাভার জামিয়া এছহাকিয়ার প্রিন্সিপাল মাওলানা হামিদুল্লাহ মনে করেন, ‘কওমি তরুণদের বিকল্প কর্মসংস্থান গ্রহণের ক্ষেত্রে প্রধান বাধা সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি। আমাদের সমাজের সাধারণ দৃষ্টিভঙ্গি হলো শিক্ষিত তরুণরা অবশ্যই চাকরি করতে হবে এবং তা হবে শিক্ষকতা বা অফিসিয়াল কোনো পোস্টে।
শুধু এ দৃষ্টিভঙ্গির জন্য দেশের কোটি কোটি যুবক শিক্ষিত হয়ে চাকরি আশায় বেকার জীবনযাপন করছে।’
তিনি মনে করেন, ঈমান ও আখলাক ঠিক রেখে যে কোনো হালাল পেশায় যুক্ত হতে শরিয়তে কোনো বাধা নেই।
এটুআই ও ইকরার সমঝোতা কওমি শিক্ষার উদ্দেশ্য পরিপন্থী: মাওলানা মামুনুল হক
আরআর