শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪ ।। ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ ।। ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬


রোদের প্রকোপে বিপর্যস্ত রোহিঙ্গা জনজীবন

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

আবদুল্লাহ তামিম: চৈত্রের কাঠফাটা রােদ পুড়িয়ে দিচ্ছে সব। কোথাও একটু ছায়া নেই, মায়া নেই। শুধু গরমের নৈরাজ্য চারদিকে।এমন খোলা ময়দানেও লাখ দশেক মানুষের আশ্রয়। সূর্যের উত্তাপ আর ত্রিপলের তৈরি বিদ্যুহীন কুঁড়েঘরগুলােও দিনের বেলায় বসবাসের যােগ্যতা হারায়। গরম বাতাসের সঙ্গে উড়ে আসা ধুলােবালিও যেন আগুনের ফুলকি হয়ে ফোটে শরীরে।

আশপাশের ন্যাড়া পাহাড়েও গাছের ছায়া পেতে ছুটছে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রােহিঙ্গারা। গরমে ক্যাম্পে বসবাসকারী মানুষগুলাে অতিষ্ঠ। তীব্র গরমে দেখা দিচ্ছে বিভিন্ন রােগ-বালাই। বেশি আক্রান্ত নারী ও শিশু। আছে ক্ষুধার জ্বালাও।

সহায় সম্পদ, আত্মীয়স্বজন হারিয়ে রােহিঙ্গারা বাঁচার স্বপ্ন নিয়ে বাংলাদেশে এসেও যেন আশার হাতছানি দেখছে না। একদিকে প্রচণ্ড গরমের খরতাপে পুড়ছে, অন্যদিকে ক্ষুধার জ্বালা। এ যেন এক বিভীষিকাময় পরিস্থিতির মুখােমুখি তারা।

ছােট ছােট শিশু মায়ের কাছে খাবার চেয়েও পাচ্ছে না। সন্তানের ক্ষুধা মেটাতে বুকের দুধও দিতে পারছেন না। কারণ তারাও দিনের পর দিন অভুক্ত।

রাখাইনের বুচিদং তমবাজার এলাকা থেকে পালিয়ে এসে এখানে আশ্রয় নিয়েছেন ইমাম হােসনের স্ত্রী আয়েশা বেগম (২০)। কিছু পাওয়ার আশায় অপরিচিত লােক দেখেই এগিয়ে আসেন। চোখেমুখে ক্ষুধার জ্বালা।

এক প্রতিবেদককে স্থানীয় ভাষায় তিনি বলেন, স্বামী জ্বালানি কাঠ সংগ্রহ করতে গেছেন। ঘরে চাল নেই। তাই ত্রাণ আনতে গিয়েছিলাম, না পেয়ে চলে এসেছি। ছােট মেয়েটাকে নিয়ে এখন ছােলামুড়ি কিনে খাচ্ছি। এখানেও কোনাে ধরনের সুযােগ-সুবিধা পাচ্ছি না।

পলিথিনের ঝুপড়িতে গরমের তীব্রতায় ঘুমানাে যাচ্ছে না। প্রাণ যায় যায় অবস্থা। অনেকে একটু প্রশান্তির জন্য খােলা আকাশের নিচে রাত কাটান। তবে তীব্র গরমে শিশু ও বৃদ্ধরা আক্রান্ত হচ্ছেন ডায়রিয়ায়। ধুলােবালির কারণে বাড়ছে শ্বাসকষ্টসহ বিভিন্ন রােগ।

লম্বাশিয়া ক্যাম্প ৩-এ আশ্রয় নিয়েছেন লাল মিয়ার ছেলে সােনা মিয়া। তিনি বলেন, চাল-ডাল পেলেও মাছ, মাংস কিংবা অন্য নিত্যপ্রয়ােজনীয় জিনিসপত্র কিনতে টাকা না থাকায় অনেক কষ্ট হচ্ছে। এখান থেকে আমাদের কোথাও যেতেও দেওয়া হচ্ছে না। কাজ করারও সুযােগ নেই। বুচিদং থেকে আসা শামসুল আলমের ছেলে নইম আক্ষেপ করে জানান, কাজের সুযােগ না থাকায় অধিকাংশ রােহিঙ্গাই বেকার।

দৈনিক আয়রােজগার না থাকায় কঠিন বাস্তবতার মুখে পড়েছে পালিয়ে আসা লােকগুলাে। গত বছরের ২৫ আগস্ট-পরবর্তী সময় প্রতিবেশী মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সেনাবাহিনীর নির্যাতন-নিপীড়নের হাত থেকে প্রাণে বাঁচতেই পালিয়ে আসে লাখ লাখ রােহিঙ্গা।আশ্রয় নেয় কক্সবাজার সীমান্তে।

সাত মাস আগে ক্যাম্পে আসা মজিদ জানান, রাখাইনে তিনি লতাপাতা দিয়ে ওষুধ বানিয়ে ডাক্তারি করতেন। এখানেও দিব্যি করে যাচ্ছেন। গ্রামে ২৫ কানি জমির মালিক ছিলেন মজিদ। বর্তমানে লম্বাশিয়া ক্যাম্প ৩-এর ১২৩ পরিবারের মাঝি হিসেবে মহল্লাবাসীকে দেখভাল করছেন।

তাদের দুঃখ-দুর্দশার কথা তুলে ধরে মাঝি আবদুল মজিদ বলেন, প্রথম দিকে বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা লােকজন রােহিঙ্গাদের নগদ টাকা ও খাদ্যদ্রব্য দিয়ে সাহায্য-সহযােগিতা করলেও এখন তা নেই। রেশনও মেলে না ঠিকমতাে। প্রয়ােজনীয় চাহিদা পূরণের টাকা নেই।

নিরাপদ পানির অভাব। জ্বালানির জন্য কাঠের অভাব তাে আছে। সব কিছু মিলিয়ে রােহিঙ্গারা একপ্রকার মানবেতর জীবনযাপন করছে। কক্সবাজারের সিভিল সার্জন ডা. আবদুস সালাম জানান, তীব্র গরমে রােহিঙ্গাদের মাঝে নানা রােগ দেখা যাচ্ছে। বিশেষ করে ডায়রিয়াসহ কয়েকটি রােগ বেশি হচ্ছে। তবে সরকারি-বেসরকারি ২১৫টি মেডিক্যাল টিমের পাশাপাশি আটটি ফিল্ড হাসপাতালে তাদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।

কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মাে. কামাল হােসেন জানান, নিজ দেশের নিরাপত্তা বাহিনীর নির্যাতনের শিকার হয়ে রাখাইন থেকে প্রায় ১২ লাখ রােহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। তারা উখিয়া ও টেকনাফের ৩০টি ক্যাম্পে বসবাস করছে। রােহিঙ্গাদের আশ্রয় দিতে গিয়ে যেসব পাহাড় বৃক্ষশূন্য হয়ে গেছে সেগুলােতে নতুন করে বনায়নের মাধ্যমে পরিবেশ রক্ষার ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

আরো পড়ুন২৫ হাজার রোহিঙ্গা শিশু মরণব্যাধী স্বাস্থ্যঝুঁকিতে


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ