আওয়ার ইসলাম: রাজনৈতিক পরামর্শক ও তথ্য বিশ্লেষক প্রতিষ্ঠান ক্যামব্রিজ অ্যানালিটিকা ফেসবুকের পৌনে নয় কোটি গ্রাহকের তথ্য হাতিয়ে নিয়েছে। এসব গ্রাহকের বেশির ভাগই যুক্তরাষ্ট্রের।
শুরুতে পাঁচ কোটি গ্রাহকের তথ্য বেহাত হয়েছে বলে মনে করা হলেও ফেসবুক কর্তৃপক্ষের বিশ্বাস, প্রকৃত ভুক্তভোগীর সংখ্যা আরো বেশি। ক্যামব্রিজ অ্যানালিটিকা অনৈতিক উপায়ে এসব তথ্য হাতিয়ে নিয়েছে। এ ছাড়া ঝুঁকিতে রয়েছেন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমটির ২০০ কোটি গ্রাহক।
ফেসবুক কর্তৃপক্ষ জানায়, মোট ৮ কোটি ৭০ লাখ ফেসবুক ব্যবহারকারীর তথ্য বেহাত হয়েছে। এর মধ্যে ১১ লাখ যুক্তরাজ্যের গ্রাহক। বাকি ভুক্তভোগীর বেশির ভাগই যুক্তরাষ্ট্রের। ক্যামব্রিজ অ্যানালিটিকার একটি অ্যাপ ব্যবহারের অনুমতি দিয়েছিল ফেসবুক, যা প্রতিষ্ঠানটির জন্য কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে।
গোপনে ওই অ্যাপের মাধ্যমে কোটি কোটি ফেসবুক ব্যবহারকারীর ব্যক্তিগত তথ্য সংগ্রহ করে প্রতিষ্ঠানটি। বিপুলসংখ্যক ফেসবুক ব্যবহারকারীর এসব তথ্য গত মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রচারকাজে ব্যবহার করা হয়।
বিবৃতিতে ফেসবুকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মার্ক জাকারবার্গ বলেন, সত্যিকার অর্থে আমাদের আরো অনেক কিছু করতে হবে এবং আমরা সামনে এগিয়ে যাব।
বিবিসির প্রতিবেদন অনুযায়ী, বিপুলসংখ্যক গ্রাহকের তথ্য বেহাত হওয়ার ঘটনায় এটাই ফেসবুকের প্রথম আনুষ্ঠানিক বিবৃতি। এ ঘটনায় তীব্র সমালোচনার মুখে পড়তে হয়েছে মার্ক জাকারবার্গকে। ফেসবুক ক্যামব্রিজ অ্যানালিটিকার ‘দিস ইজ ইউর ডিজিটাল লাইফ’ নামের একটি কুইজ অ্যাপ ব্যবহারের অনুমতি দিয়েছিল। সোস্যাল মিডিয়া সাইটটির ৩ লাখ ৫ হাজার ব্যবহারকারী এ অ্যাপ ডাউনলোড করেছিলেন। যদিও এর আগে এ সংখ্যা ২ লাখ ৭০ হাজার বলা হয়েছিল।
ক্যামব্রিজ অ্যানালিটিকার এ অ্যাপটির ৯৭ শতাংশ ডাউনলোড যুক্তরাষ্ট্রে রেকর্ড করা হয়েছে। গবেষণার কাজে তথ্য নেয়ার কথা থাকলেও পরে তা ক্যামব্রিজ অ্যানালিটিকার হাতে চলে যায়। বিষয়টি সম্পূর্ণ ফেসবুকের নীতির পরিপন্থী বলে দাবি করেছে ফেসবুক কর্তৃপক্ষ।
বিবৃতিতে ফেসবুক কর্তৃপক্ষ জানায়, ক্যামব্রিজ অ্যানালিটিকার হাতে তথ্য গেছে কিনা, সে বিষয়ে আজ থেকে ফেসবুক ব্যবহারকারীদের নিউজফিডের ওপর একটি নোটিফিকেশন দেখা যাবে। ব্যবহারকারীদের প্রাইভেসি নীতিমালায়ও পরিবর্তন আনার ঘোষণা দিয়েছে ফেসবুক। নতুন নীতিমালায় গ্রাহক তথ্য সংগ্রহের বিষয় স্পষ্ট করা হয়েছে।
এছাড়া ফেসবুকের সাম্প্রতিক ঘটনা নিয়ে অভ্যন্তরীণ নিরীক্ষা করার কথাও বলেছেন মার্ক জাকারবার্গ। বিভিন্ন অভিযোগের জবাবে গত সোমবার নিউজ সাইট ভক্সকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে মার্ক জাকারবার্গ বলেন, ফেসবুক ব্যবহারকারীদের ব্যক্তিগত তথ্য বেহাত হওয়ার যেসব বিষয় সামনে আসছে, তা দূর করতে কয়েক বছর সময় লাগবে।
ফেসবুকের ব্যবসা মডেল ও ব্যবহারকারীর তথ্য ব্যবহারের সমালোচনার জবাবে তিনি বলেন, ফেসবুকের গুরুত্বপূর্ণ একটি সমস্যা বলে যাকে মনে করা হচ্ছে, তা হলো ‘আদর্শগত’। বিশ্বের অসংখ্য মানুষকে ইন্টারনেটের আওতায় আনতে নিরলস কাজ করে আসছে ফেসবুক।
এটা ঠিক, সোস্যাল মিডিয়া সাইটটি ব্যবহারের নেতিবাচক দিকগুলোয় খুব বেশি সময় দেয়া হয়নি। বিষয়টি নিয়ে খুব বেশি ভাবেনি কর্তৃপক্ষ। প্রযুক্তির প্রতিটি অনুষঙ্গের ইতিবাচক ও নেতিবাচক দিক রয়েছে। ফেসবুকও এর বাইরে নয়। ফেসবুক ব্যবহারের বেশকিছু নেতিবাচক দিক এখন সামনে আসছে।
বিশ্বব্যাপী এখন ফেসবুকের বিদ্যমান দুর্বলতাগুলো নিয়ে বেশি আলোচনা হচ্ছে। মার্ক জাকারবার্গ বলেন, ব্যবহারকারীর তথ্যের নিরাপত্তা খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। বিদ্যমান সমস্যাগুলোর সমাধানে কাজ চলছে। ব্যক্তিগতভাবে আমি মনে করি, সব সমস্যা যদি তিন থেকে ছয় মাসে সমাধান দেয়া যেত, তাহলে খুব ভালো হতো। বাস্তবতা হলো বিদ্যমান সমস্যাগুলো সমাধানে দীর্ঘ সময় প্রয়োজন হবে।
ফেসবুক ব্যবহারকারীদের তথ্য ক্যামব্রিজ অ্যানালিটিকার কাছে কীভাবে গেছে, এ বিষয়ে ব্যাখ্যা দিতে মার্কিন আইনপ্রণেতারা মার্ক জাকারবার্গকে কংগ্রেসের সামনে হাজির হতে বলেছেন। এ ছাড়া ব্রিটিশ পার্লামেন্টে হাজির হয়ে মার্ক জাকারবার্গকে ব্যাখ্যা দিতে বলেছে দেশটির পার্লামেন্টারি মিডিয়া কমিটি।
কেএল