আতাউর রহমান খসরু
আওয়ার ইসলাম
আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে ইসলামপন্থী দলগুলোকে জোটে ভেড়াতে চেষ্টা করছে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দল ও বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট।
উভয় পক্ষ মনে করছে আগামী নির্বাচনে ইসলামপন্থীদের সমর্থন গুরুত্বপূর্ণ ফ্যাক্ট হিসেবে দেখা দিবে।
বিশেষত হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের সমর্থনকে বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছে উভয়পক্ষ। সরকার ও দেশের বৃহৎ বিরোধী দল বিএনপি উভয়পক্ষই হেফাজতের আশির্বাদ পেতে উদগ্রীব।
এজন্য আপন আপন বলয়ের আলেমদের মাধ্যমে হেফাজতের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা অর্জনের চেষ্টাও করছে উভয়পক্ষ।
তবে এখনও রাজনীতি ও নির্বাচনের বাইরে থাকারই পক্ষে হেফাজতে ইসলামের নীতিনির্ধারণী মহল। তারা কঠোরভাবে রাজনৈতিক সংশ্রব থেকে সংগঠনকে মুক্ত রাখার চেষ্টা করছেন।
হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা আজিজুল হক ইসলামাবাদী এ বিষয়ে আওয়ার ইসলামকে বলেন, ‘জন্ম থেকে আজ পর্যন্ত হেফাজত রাজনীতিমুক্ত এবং ভবিষ্যতেও তাই থাকবে।
নির্বাচনে কোনো পক্ষকে সমর্থন করার প্রশ্নই ওঠে না। হেফাজতে ইসলাম দেশের ইসলাম ও মুসলমানের স্বার্থে অরাজনৈতিক প্লাটফর্ম হিসেবেই কাজ করবে।’
‘অবশ্য একটি ইসলামি সংগঠন হিসেবে ইসলাম বিদ্বেষী যে কোনো ব্যক্তিকে ভোট না দেয়ার আহ্বান জানাবে হেফাজত। বলেন মাওলানা আজিজুল হক।
বিএনপি দীর্ঘদিন যাবৎ কওমি মাদরাসা ও ইসলামপন্থীদের নিজের অখণ্ড ভোট ব্যাংক মনে করলেও তাদের এ ঘোর ভেঙ্গেছে। বিশেষত কওমি মাদরাসার সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নে সরকারের নানান উদ্যোগ ও ইসলামপন্থী কয়েকটি দল বিএনপি জোট ভাঙ্গায় ইসলামপন্থীদের ভোট নিয়ে আশঙ্কা তৈরি হয়েছে বিএনপির মনে।
নতুন করে কোনো ইসলামি দল যেনো জোটত্যাগ না করে সে ব্যাপারেও সতর্ক দৃষ্টি রাখছেন দলের হাইকমান্ড। যোগাযোগও বাড়িয়েছে ইসলামি দলগুলোর সঙ্গে।
একইভাবে আদর্শিক দূরত্ব উপেক্ষা করেই ইসলামি দলগুলোকে জোটে জায়গা করে দিতে চায় আওয়ামী লীগ। এবারে জোটের বামপন্থী দলগুলোর আপত্তি থাকলেও আওয়ামী লীগ মনে করছে ইসলামি দলগুলোকে জোটে ভেড়ালে আখেরে ভোটের রাজনীতিতে লাভবান হবে তারা।
ইতোমধ্যে বেশ কিছু ইসলামপন্থী দল আওয়ামী লীগের সঙ্গে জোটবদ্ধ হতে আগ্রহও প্রকাশ করেছে। তাদের মধ্যে রয়েছে, মাওলানা জাফরুল্লাহ খানের দল বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন, মো. নূরুল ইসলাম খানের গণতান্ত্রিক ইসলামিক মুভমেন্ট, মাওলানা শাহ মোস্তাকিম বিল্লাহ সিদ্দিকীর জমিয়তে হিজবুল্লাহ বাংলাদেশ, আবদুর রশিদ প্রধানের বাংলাদেশ ইসলামিক পার্টি ও কাজী আবুল খায়ের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ মুসলিম লীগ।
যদিও দলগুলোকে রাজনৈতিক মাঠে খুব একটা কার্যক্রম নেই বললেই চলে। এদের মধ্যে মাওলানা জাফরুল্লাহ খান কিছুটা পরিচিত মুখ হলেও তিনি মূল খেলাফত আন্দোলন থেকে কদিন আগে ছিটকে পড়েছেন।
উল্লেখিত দলগুলোর মধ্যে সমন্বয়ের কাজ করছেন গণতান্ত্রিক ইসলামিক মুভমেন্টের চেয়ারম্যান মো. নূরুল ইসলাম খান।
তবে এ ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগের অনেক কেন্দ্রীয় নেতার পরামর্শ হলো, মূল জোটে না ভিড়িয়ে বিএনপির মুখোমুখী একটি বিকল্প ইসলামি জোট তৈরি করাই বুদ্ধিমানের কাজ হবে। এতে ভোট ও জোট উভয় ক্ষেত্রেই লাভবান হবে তারা।
নূরুল ইসলাম খানও বিষয়টির প্রতি ইঙ্গিত করে বলেন, মুক্তিযুদ্ধের প্রতি অবিচল আস্থা ও ইসলামি মূল্যবোধে বিশ্বাসী হয়ে আমরা ইতিমধ্যে ১৫টি দল একটি পৃথক জোট গঠনের প্রক্রিয়া এগিয়ে নিয়েছি। আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন জোটের সঙ্গে নির্বাচন করার আগ্রহ আছে। তবে আমরা ১৪ দলের হয়ে পৃথকভাবেও নির্বাচন করতে পারি।
তিনি যে জোটটি করতে যাচ্ছেন সেটির নাম হবে ইসলামিক ডেমোক্রেটিক অ্যালায়েন্স।
অন্যদিকে বিএনপি জোটভূক্ত ইসলামি দলগুলোর একাধিক নেতা আওয়ার ইসলামকে বলেছেন, সরকার তাদের নানাভাবে চাপে রাখার চেষ্টা করছে। প্রলোভনের প্রতি ইঙ্গিতও করেছেন কেউ কেউ।
তবে তারা জোট ছাড়ছেন না বলেও প্রতিবেদককে জানিয়েছেন।
খেলাফত মজলিসের যুগ্ম মহাসচিব ও ঢাকা মহানগর সভাপতি শেখ গোলাম আসগর বলেন, ‘আমরা এখনও ২০ দলীয় জোটে আছি। যদি কোনো কারণে জোট ছাড়ি তবে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিয়েই ছাড়বো।’
তবে সরকারের পক্ষ থেকে চাপে থাকার কথা স্বীকার করে বলেন, বহু ধরনের চাপের মধ্যে আমরা আছি। সরকার বিরোধী দলগুলোকে চাপে রাখতে কি করছে তা কারো অজানা নয়। মামলা, হামলা ও হুমকি তো আছেই। সব কথা মিডিয়াতে তো বলাও যায় না।’
একই সঙ্গে সরকারের পক্ষ থেকে প্রলোভনের কথাও বলেন এ নেতা। তিনি জানান, ২০১৪ সালের পূর্বে সরকার দলীয় জোট তাদের মন্ত্রিত্ব অফার করেছিলো। এবারও এমন কিছু আভাস তারা পেয়েছেন।
তিনি দাবি করেন, আমরা যেহেতু আসন ও মন্ত্রিত্বের জন্য রাজনীতি করি না, তাই সবকিছু উপেক্ষা করে জোটে আছি। যা অনেক ইসলামি দল পারে নি।
এ নেতার কাছে জানতে চেয়েছিলাম এবার নির্বাচনে না গেলে নিবন্ধন বাতিল হতে পারে। বিএনপি নির্বাচনে না গেলে আপনারা কি করবেন?
তিনি বলেন, বিএনপি ও জোটের সবাই নির্বাচনে যেতে আগ্রহী। আশা করি, সরকার সুষ্ঠু নির্বাচনের ব্যবস্থা করবে। যদি শেষ পর্যন্ত বিএনপি নির্বাচনে না যায় তবে আমরা হয়তো তাদের জন্য দলের অস্তিত্ব হুমকির মুখে পড়তে দেবো না।’
২০ দলীয় জোটের অন্যতম শরিক জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ। এ দলের উভয় অংশই (কাসেমী ও ওয়াক্কাস) বলেছেন তারা জোটে আছেন এবং জোট ছাড়ার কোনো ইচ্ছা তাদের নেই।
আল্লামা নূর হোসাইন কাসেমীর নেতৃত্বাধীন অংশের যুগ্ম-মহাসচিব মাওলানা মন্জুরুল ইসলাম আফেন্দি বলেন, ‘জোট ছাড়ার ব্যাপারে কোনো আলোচনা দলে হয় নি। আমরা জোটে আছি। আর সরকারের পক্ষ থেকেও কোনো চাপ বা প্রলোভন নেই আমাদের প্রতি।’
দলের অপরাংশের যুগ্ম-মহাসচিব মাওলানা ওয়ালি উল্লাহ আরমান বলেন, ‘বিশেষ কোনো চাপ বা প্রলোভন নেই সরকারের পক্ষ থেকে। তবে বিরোধী দল হওয়ায় কিছুটা চাপ তো আছেই। যেমন আমাদের সভাপতিকে একাধিক মামলায় জড়ানো হয়েছে এবং তাকে হাজিরা দিতে বাধ্য করা হচ্ছে।’
তাদেরও জোট ছাড়ার কোনো ইচ্ছে নেই বলে জানান এ নেতা।
২০ দলীয় জোটের এক সময়ের গুরুত্বপূর্ণ অংশিদার ছিলো ইসলামী ঐক্যজোট। দলটি ২ বছর আগে আনুষ্ঠানিকভাবে জোট ছেড়েছে। বর্তমানে কোনো জোটে নতুন করে অন্তর্ভূক্ত না হয়ে বিকল্প ইসলামি জোট করার চেষ্টা করছে।
দলের চেয়ারম্যান মাওলানা আবদুল লতিফ নেজামী বলেন, ‘আপাতত কোনো জোটে যাওয়ার পরিকল্পনা নেই। আমরা ইসলাম দলগুলো নিয়ে বিকল্প ইসলামি জোট গঠনের চেষ্টা করছি। প্রতিষ্ঠালগ্নে যে দলগুলো নিয়ে ইসলামি ঐক্যজোট গঠিত হয়েছিলো আমরা তাদের সাথেই যোগাযোগ করছি।’
তবে সবাই গুরুত্ব অনুভব করলেও উদ্যোগটি কাঠামোগত কোনো অবস্থায় পৌঁছে নি বলে জানান তিনি।
দেশের অভিজ্ঞ রাজনীতিবিদ ও বিশ্লেষকদের মত হলো, আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে সংশয়মুক্ত হওয়ার সুযোগ এখনও নেই। বিশেষত বৃহৎ বিরোধী দল বিএনপি নেত্রীর কারাগার থেকে মুক্তি ও নির্বাচনে অংশগ্রহণ ইত্যাদি বিষয়ে নিশ্চিতভাবে কোনো কিছুই বলা যাচ্ছে না।
তাই আগামী নির্বাচনের আগে দেশের রাজনীতিতে হয়তো নানান ধরনের নাটকীয়তা দেখা দিবে। আর তার অংশিদার হবে ইসলামি ধারার দলগুলোও।
নির্বাচন নিয়ে কী ভাবছে ইসলামী দলগুলো
[আওয়ার ইসলাম বৃহত্তর কলেবরে প্রকাশ করতে যাচ্ছে রমজানুল মোবারক সংখ্যা, আপনার মাদরাসা-স্কুল বা কোম্পানির বিজ্ঞাপন দিয়ে সহযোগিতা করুন। আপনার কপি সংগ্রহ করতে ফোন করুন 01717831937 বিকাশ]
-রোরা