শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪ ।। ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ ।। ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬


মারকাযুত তাকওয়ায় মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

হাওলাদার জহিরুল ইসলাম
আওয়ার ইসলাম

গতকাল বৃহস্পতিবার মারকাযুত তাকওয়া ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার ঢাকা’র ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষে ইফতা বিভাগের ছাত্রদের বিদায় অনুষ্ঠান উপলক্ষে হামদ নাত ও বক্তৃতা প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়৷

মারকায অডিটরিয়ামে বিকেল ৩টা থেকে এ প্রতিযোগিতা শুরু হয়৷ হামদ নাত পর্বে বিচারকের দায়িত্ব নেন স্বপ্নসিঁডি’র পরিচালক হুমায়ুন কবির শাবিব ও বন্ধন শিল্পীগোষ্ঠীর পরিচালক হাফেজ এমদাদুল ইসলাম।

'বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে ওলামায়ে কেরামের ভূমিকা’ শীর্ষক বক্তৃতা প্রতিযোগিতায় বিচারকের আসন অলংকৃত করেন বিশিষ্ট নজরুল গবেষক মুক্তিযোদ্ধা কবি মহিউদ্দীন আকবর এবং আওয়ার ইসলাম টোয়েন্টি ফোর ডটকমে’র প্রধান সম্পাদক মুফতি আমিমুল ইহসান

মারকায প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক মুফতি হাবিবুর রহমান মিছবাহ'র সভাপতিত্বে তরুণ শিক্ষার্থীরা মুক্তিযুদ্ধে ওলামায়ে কেরামের ভূমিকার ওপর ধারাবাহিক বক্তৃতা উপস্থাপন করেন৷ তুলে ধরেন মুক্তিযুদ্ধে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে আলেমদের ব্যক্তিগত ও প্রাতিষ্ঠানিক ভূমিকার কথা৷ চট্টগ্রামের নানুপুর মাদরাসা, হাটহাজারী মাদরাসা ও বরিশালের চরমোনাই মাদরাসার বিশেষ ভূমিকার কথা শোনান উঠে আসে তাদের বক্তৃতায়।

হজরত মাওলানা মুহাম্মাদুল্লাহ হাফেজ্জী হুজুর রহ. শায়খুল হাদিস আল্লামা আজিজুল হক রহ. চরমোনাইয়ের মরহুম পীর সৈয়দ ফজলুল করিম রহ. শায়খ কাজী মুতাসিম বিল্লাহ রহ. আল্লামা মোস্তফা আজাদ রহ. মাওলানা ইমদাদুল হক আড়াইহাজারী রহ. সাবেক সাংসদ মাওলানা আতাউর রহমান খান রহ. ও আল্লমা ফরিদ উদ্দীন মাসউদ-সহ তাবলীগ ও দেওবন্দী ধারার বহু আলেমের ঐতিহাসিক ভূমিকার কথা উঠে আসে তরুণ প্রতিযোগীদের বক্তব্যে৷

মারকাযের বিদায়ী ছাত্র মুহাম্মাদ আব্দুল্লাহ আল ফুয়াদের সঞ্চালনায় সভাপতির বক্তব্যে মুফতি হাবিবুর রহমান মিছবাহ বলেন, আজকের তরুণরা মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত ইতিহাস ভুলতে বসেছে৷ কোনো কোনো ক্ষেত্রে তরুণদেরকে মুক্তিযুদ্ধের ভুল ইতিহাস শেখানো হচ্ছে৷ মুক্তিযুদ্ধে ওলামায়ে কেরামের অবদান পাশ কাটিয়ে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত ইতিহাস লেখা সম্ভব নয়৷

মারকাযুত তাকওয়া সর্বদাই পড়ালেখার পাশাপাশি ক্রিয়েটিভ বা মননশীল কিছু কাজ করে থাকে৷ তারই অংশ হিসেবে আজকের এই ব্যতিক্রমধর্মী বক্তৃতার আয়োজন৷ তরুণদের মাঝে দেশপ্রেম ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ছড়িয়ে দেয়া এবং ওলামায়ে কেরামের অবদান সম্পর্কে অবগত করানোই এ প্রতিযোগিতার মূল লক্ষ্য৷

কবি মহিউদ্দীন আকবর বলেন, আমি আজ মাদরাসার তরুণদের মুখে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক বক্তৃতা শুনে দারুণ অভিভূত৷ মাদসারাসার ছাত্ররাও যথেষ্ট ইতিহাস সচেতন বলে মনে হচ্ছে৷ তিনি বলেন, স্বাধীনতা যুদ্ধে আমি সম্মুখযুদ্ধে অংশ গ্রহণ করেছিলাম৷ আমি দেখেছি, মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন বহু মাদরাসা মসজিদ ছিলো মুক্তিবাহিনীর আশ্রয়স্থল৷ অসংখ্য মসজিদের ইমাম মুয়াজ্জিন খাদেমরা মুক্তিযোদ্ধাদের সহযোগিতা করতেন। তাদের খাবারের ব্যবস্থা করতেন৷

অনেক ইমাম মুক্তি বাহিনীর গোয়েন্দা হয়ে কাজ করেছেন৷ তাদের মাধ্যমে ইনফরমেশন আদান-প্রদান হতো৷ সেসব আলেম ওলামা সরকারিভাবে হয়তো স্বীকৃতি বা ভাতা পান নি৷ আমি মনে করি তাদের প্রকৃত স্বীকৃতি ও মর্যাদা স্বয়ং আল্লাহ প্রদান করবেন৷ তবে ওলামায়ে কেরামের অবদান অস্বীকার করে কিংবা তাদের ভূমিকা এড়িয়ে গিয়ে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের পরিপূর্ণ ইতিহাস লেখা সম্ভব নয়৷ বাংলাদেশে কোনো মাদরাসায় এই প্রথম মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক প্রতিযোগিতার আয়োজন করায় মারকাযুত তাকওয়াকে অভিনন্দন জানান তিনি।

প্রতিযোগিতা শেষে বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন মুফতি হাবাবুর রহমান মিছবাহ, মুফতি আমিমুল ইহসান, কবি মহিউদ্দীন আকবর ও মুফতি হোসাইন আহমদ৷ বক্তৃতায় প্রথম স্থান অর্জন করেন মাদানীনগর মাদরাসার শিক্ষার্থী তাহমিদুল আলম৷ তাকে ৫০০০ টাকার বই পুরস্কার দেয়া হয়৷ দুই বিষয়ে ৬ জন বিজয়ীকে মোট ২০ হাজার টাকা পুরস্কার প্রদান করা হয় বলে মারকায সূত্রে জানা যায়৷

এ ছাড়াও অংশগ্রহণকারী প্রতিযোগিদের মারকায পরিচালক মুফতী হাবিবুর রহমান মিছবাহ'র পক্ষ হতে তার লিখিত 'বদলে যাও বদলে দাও' 'রোহিঙ্গা শিবিরের অলিগলি' ও 'পাশ্চাত্যের মোকাবেলায় নববী আদর্শ' বইগুলো পুরস্কার প্রদান করেন।

রাত ৯ টায় দোআর মাধ্যমে প্রতিযোগিতার সমাপ্তি ঘোষণা করা হয়৷


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ