যিয়াদ বিন সাঈদ
কুন্দুজ নগরীতে উত্তাল দোলনায় নরম শয্যাচ্ছাদনে ডুকরে কেঁদে ওঠা হে আম্মাজান, আপনার সম্মুখে ঘুমিয়ে আছে রূপ-ঐশ্বর্যে মেখে থাকা আপনারই পুত্র, মুআম্মার, উসাঈদ কিংবা সুহাইব।
তারা ঘুমিয়ে আছে হে আম্মাজান! সমগ্র অস্তিত্বে শি'রা আর সুরাইয়ার আভা মেখে। তারা তো জড়িয়ে রেখেছে মাথায় এক মখমল আমামা। যা পৃথিবীর বুকে এখন অপূর্ব এক ঝাণ্ডার মত দুলছে, শুধু দুলে দুলে। উঠছেই ক্রমশ হে পরম মমতায় ভরা আম্মাজান।
আম্মাজান, আপনি জানেন কি; পৃথিবীর রক্ত সমুদ্রের শাসিত তন্ত্রে আপনার সন্তানেরা কেমন করে বুলবুল? অথবা আপনি কি জানেন হে আম্মাজান; এইতো খানিক আগে উড়তে উড়তে এসেছিলো একদল ত্বুয়ুরে মুহাজেরাহ; নিভৃতে একান্ত সন্তর্পণে তারা নিয়ে ছুটেছে আপনার বুলবুলদের নিয়ে স্বয়ং খোদার আরশে।
ঝিকিমিকি জ্বলছিলো নক্ষত্র। রিনিঝিনি অভিনবে খোদার এ মেহমানদের কোলে তুলে নিতে বেজে উঠছিলো দফফে মালাইকাহ। অথচ এতটা আনন্দ মুহূর্ত আপনার কেটে যাচ্ছে হে আম্মাজান, কিন্তু ক্যানো আপনি কেঁদে চলেছেন ডুকরে, অঝোরে আর নীরব বেদনা নিয়ে?
আম্মাজান, আপনিই বলুন, ফুলের বাগানে ছুড়ে দিলে বোমা, এর থেকে কী করে উথলে উঠবে বিষবৃক্ষ? যে ফুলকে খুব যতন করে, এত এত কাল ধরে গড়ন দিয়েছেন পরম ঈশ্বর। সিনা থেকে সিনা। কাল থেকে মহাকাল পর্যন্ত বুকের ভেতর বইয়ে বইয়ে।
অবশ্যই আম্মাজান, সেসব ন্যাটো জানে, 'ইক্বরা' এর যে গতি ইলাল ক্বিয়ামাহ ছুটে চলছে বিসসুরঅাহ, তা দমাতে না পারলে কালকের পৃথিবীটা আমাদের। তাই আম্মাজান, আপনের বক্ষে থাকা ফুলগুলো ওরা ছিন্নভিন্ন করে দিতে চায়।
ওরা চায় কোরআন বিলুপ্ত হোক। আর যারা আপনার আওলাদের মতই কুরআনের বাহক, তারাও মুছে যাক খুব খুব তড়িৎগতিতে। অথচ প্রভু কতটা দরাজ কণ্ঠে বলে দিয়েছেন আম্মাজান, ইন্না নাহনু নাযযালনায যিকরা ওয়া ইন্না লাহু লাহাফিযুন।
আমি জানি আম্মাজান, আপনার মন কেন কেঁদে ওঠে হঠাৎ হঠাৎ। আমি আরও জানি রক্তের ওপর প্রতিধ্বনির উপক্রমণিকায় বেড়ে ওঠা এ পৃথিবীর চির শাশ্বত কানুন। আমি আর আপনি যখন বিদ্রোহের অনল ধরে আম্মাজান, চিৎকার করি আযাদির জন্যে যুদ্ধের।
আর আমাদেরই সঙ্গে শ্লোগান তোলে পৃথিবীর গা গোত্রে গোত্রে নির্যাতিত আর পিতৃহারা আপনার আওলাদ, ঠিক তখনই, সে সময়টিতেই আমরা আম্মাজান, জঙ্গিবাদের স্বগতি আকৃতির ছলকে ওঠা ছোবলে গিরিশৃঙ্গ থেকে ধপাস করে পড়ে যাই পৃথিবীর বুকে।
রণডঙ্কা বাজে আমাদেরই বিরুদ্ধে। আমরা যতই বলি আম্মাজান, শান্তিকে বিলিয়ে দিতেই আমাদের এ বিপ্লব, ততই গণদাঙ্গার অপরুপ সুন্দর ছবি আমাদেরকে তাড়িয়ে বেড়ায়। 'জঙ্গি জঙ্গি' খেলায় ওরা আমাদেরকে বলে শুধু 'মারো আর মারো'।
আরও পড়ুন: খোদাহাফেজ একশ হাফেজ
কিন্তু আম্মাজান, সব থেকে সত্যের কথা তো জানেন কেবল মাওলাপাক। তিনি জানেন আপনার সন্তানেরা কুন্দুজের সে সুন্দর বিকেলটিতে বসেছিলো জড়ো হয়ে একমাত্র তারই জন্যে।
কুরআনের পাখি তারা, এ ভূষণে ভূষিত হবার জন্যেই কেবল। সেসব কুরআনের পক্ষিকূলকে নিজ আরশে মেহমানের মত দেখতে হয়তো মাওলার মনে ইচ্ছে ধরেছিলো খুব, তাই পাঠালেন তুয়ুরে মুহাজেরা।
তারা মাথায় বেধে দেয়া আমামার ভেতরই আবৃত করে, ফুলেল সৌরভে উড়িয়ে নিয়ে গেছেন আরশে। মাওলার সান্নিধ্যে। তাই বলি আম্মাজান, লা তাহযান। ইন্নাল্লাহা মাআনা।
তবে শুনুন আম্মাজান, আমার দিকে তাকান। আপনি তাকান একটু আমার কাঁপতে থাকা ওষ্ঠের ভাজে ভাজে। দেখুন কতটা ক্ষোভের প্রস্রবণ এখানে গেঁথে যাচ্ছে শুধু। আর ঝরাচ্ছে বিদ্রোহের অনলবর্ষী ক্রুদ্ধতা। আর ভেতরে থাকা ক্বলব, তার কথা তো আপনি জানবেন না আম্মাজান।
সময় আপনাকে জানাবে। যে সময়ের ক্বসম প্রভু করেছেন পরতে পরতে। তবে এতটুকু জানুন আপনি আম্মাজান, আপনার প্রেমেজর্জর সন্তানদের, যাদের ন্যাটোর বিধ্বংসী সাইক্লোনের সামনে বিলিয়ে দিতে হলো প্রাণ, রক্ত।
শুনুন আম্মাজান শুনুন। হাযাদ দাম লাইঁয়াকুনা আবাসান। বিওয়া'দিল্লাহ। একদিন মাওলার সঙ্গে আমরাও চিৎকার করে বলবো আম্মাজান, ‘ফানতাকামনা মিনহুম।’ প্রতিশোধের আগুন আপনার সন্তানেরা জ্বেলে দিয়ে চলে গেলো শুধু, উড়তে উড়তে, সমগ্র শরীরে আবৃত করে জান্নাতের পোশাক, কিন্তু এ রক্ত? জায়নামাজে থাকুন শুধু আপনি।
আর সমগ্র পৃথিবীতে ছড়িয়ে থাকা শতকোটি আপনার সন্তান, তারা নির্ঘুম, অপেক্ষমাণ। কান্নার বদলে আপনি হাসুন আম্মাজান। হাসুন শুধু হাসুন।
জঙ্গি জুজুর ভয়ে আপনার রূহের এ ছেলেরা একদম নিভে যাবে না নিশ্চয়। তারা আপনাকে আর কখনওই কাঁদাতে দেবে না। কুন্দুজ নগরীতে আপনি হেসে উঠলে আম্মাজান, শতকোটি অস্তিত্বে আবেগের তাড়নায় নিশ্চিত কেঁদে উঠবে। আর তখনই আম্মাজান, বেজে উঠবে যুদ্ধের রণডঙ্কা। ধ্বনিত হবে ইল্লাল্লাহর প্রকম্পিত বজ্রধ্বনি।
আরও পড়ুন: হাফেজদের রক্তে রঞ্জিত আল্লাহর কুরআন
আরআর