আবুদল্লাহ তামিম
আওয়ার ইসলাম
পাঁচ জেলার ইংরেজি বানান পরিবর্তন করা হয়েছে। গত সোমবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে তার তেজগাঁওয়ের কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত প্রশাসনিক পুনর্বিন্যাস-সংক্রান্ত জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটির (নিকার) সভায় বানান পরিবর্তন করা হয়।
ইংরেজি বানান পরিবর্তন হওয়া এই পাঁচ জেলা হলো চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, বরিশাল, যশোর ও বগুড়া। এর মধ্যে নতুন নিয়মে চট্টগ্রামের নাম হবে Chattagram, কুমিল্লার হবে Cumilla, বরিশাল হবে Barishal, যশোর Jashore ও বগুড়া হবে Bogura.
পূর্বে যথাক্রমে এসব জেলার নামের ইংরেজি বানান ছিল Chittagong, Comilla, Barisal, Jessore ও Bogra.
নিকারের বৈঠক শেষে সচিবালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে এ তথ্য জানান মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিব (সমন্বয় ও সংস্কার) এন এম জিয়াউল আলম।
জেলার নামের বানান পরিবর্তনের পর জনমনে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। স্যেশাল মিডিয়াসহ যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে এ নিয়ে আলোচনা করতে দেখা গেছে। বানান পরিবর্তনের প্রতিক্রিয়ায় অনেকেই স্যোশাল মিডিয়ায় ভাইরাল হওয়া কিছু অদ্ভুত জায়গার নামের ছবি প্রকাশ করে আবেদন করছে নাম পাল্টালে যেন এগুলো পাল্টানো হয়।
বহুদিন ধরে চলে আসা এ নাম পরিবর্তনের কারণে সরকারি নথিপত্র বাড়ির দলিল কাগজপত্র সবকিছু পাল্টাতে হবে। অনেকই এর কারণে বিরক্তি প্রাকশ করছেন।
এ নিয়ে কথা হয় কুমিল্লা জেলার চৌয়ারা বাজারের তেল ব্যবসায়ী আবদুর রহমানের সঙ্গে। তিনি বলেন, অনেকদিন ধরেই দেখছি বিমান বন্দর থেকে শুরু করে উদ্যান অনেক কিছুর নাম পরিবর্তন হয়েছে। এখন আমাদের জেলাসহ আরো চারটি জেলার নাম পরিবর্তন করেছে।
এ পরিবর্তনে আমরা কোনো ভালো কিছু আসা করছি না। বরং আমরা বিব্রত বোধ করছি এ পরিবর্তনে। আমরা আশা করবো এ পরিবর্তনের পেছনে না পরে যদি আমাদের জেলার উন্নতির পেছনে কাজ করা হয় আমরা খুশি হবো।
বগুড়া জেলার স্কুল শিক্ষক জামিল আহমদের সঙ্গে। তিনি বলেন, জেলার নাম পরিবর্তনে অর্থ না ব্যয় করে উন্নয়নের পেছনে ব্যয় করলে আমাদের উন্নতি হতো।
ঢাকা মুগদায় বসবাসকারী বরিশালের এক বাড়ির মালিক সিদ্দীকুর রহমান বলেন, আমি ফেসবুকে দেখলাম বড়বাল, সোনাপুর, কালাসোনাসহ আরো বিশ্রি ভাষার নাম আছে বিভিন্ন বড় বড় গ্রাম বা উপজেলার। সেগুলো পরিবর্তন না করে আমাদের এতদিনের চলে আসা নাম পরিবর্তনের কোনো যৌক্তিকতা দেখছি না।
যশোরের একজন ছাত্র মুনতাসির বিল্লাহকে এ বিষয়ে জিজ্ঞেস করলে তিনি পজেটিভ মন্তব্য করেন। বলেন, আগের বানানগুলো বেখাপ্পা ছিল যা উচ্চারণ করতে এবং মনে রাখতে অনেকটাই কঠিন ছিল। সহজ করার কারণে এখন সবার মনে রাখতে ভালো হবে।
নাম পরিবর্তনের ফলে ভোগান্তি হতে পারে বলে মনে করছেন, স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ ড. তোফায়েল আহমেদ। বলেন, পাঁচ জেলার নামের বানান সংশোধনে বড় ধরনের ব্যত্যয় ঘটবে বলে মনে হচ্ছে না।
তবে যারা এ মুহূর্তে পাসপোর্ট ব্যবহার করছেন, তারা যদি নতুন করে নাম সংশোধন করেন তা হলে তাদের সমপরিমাণ টাকা গুনতে হবে। আবার তিনি সংশোধন না করলেও হয়তো বিদেশের ইমিগ্রেশন বা অন্য কোনো দপ্তরে ওই পাসপোর্টধারী একটি অক্ষরের জন্য আটকে যেতে পারেন।
এজন্য বর্তমানে পাসপোর্ট রয়েছে এসব নাগরিকের জন্য পাঁচ বছর সময় দিতে হবে এবং বিদেশের মিশনগুলোয় দ্বৈত বানান ব্যবহারের সুযোগ দিতে হবে। যাতে করে তাদের এই পাসপোর্টধারী মেয়াদ শেষে নবায়নের সময় বানান সংশোধনের সুযোগ পায়।
ড. তোফায়েল আহমেদ বলেন, পাসপোর্ট ছাড়াও যারা ভোটার আইডি কার্ড, জন্মনিবন্ধন, শিক্ষা সনদে জেলার নামের বানান সংশোধন করবেন তাদের ব্যয়ের ক্ষেত্রেও সরকারকে ভাবতে হবে। যাতে তারা নতুন করে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত না হয়।
অন্যদিকে ওইসব জেলায় নামফলক, সাইনবোর্ডসহ ব্যক্তিপর্যায়ের আনুষঙ্গিক স্থাপনা/কাগজপত্র সংশোধনেও যেন চাপ না দেওয়া হয়।
তবে বানান পরিবর্তনকে একেবারেই নেতিবাচকভাবে নিচ্ছেন না সিনিয়র সাংবাদিক আহমাদ সেলিম রেজা।
মোবাইলে আওয়ার ইসলামকে তিনি জানান, কোনো দেশে কোনো সরকার যখন কোনো একটি কাজ করেন, তিনি অনেক কিছু চিন্তা ভাবনা করেই করেন, যেনো দেশের উন্নতি হয় জনগণের উন্নতি হয়।
তাই সরকার দেশের কোনো গুরুত্বের কথা চিন্তা করেই হয়তো এ সিন্ধান্ত নিয়েছেন, এতে জনগণের ভালো লাগতে পারে নাও লাগতে পারে।
তিনি মনে করেন, সরকারের যেটা কর্তব্য সেটা করেছে এবং করতেই হবে। আমি মনে করি ভালোর জন্য হলে অবশ্যই সেটা গ্রহণীয়। এ বিষয়ে এত কথা বলার প্রয়োজন মনে করি না।
মসজিদে গুলি ছোঁড়ার পর পাল্টে গেল এক মার্কিন সেনার জীবন