আবদুল্লাহ তামিম: রাজধানী ঢাকার পুরানা পল্টন মোড়ে ইহুদিদের একটি ক্লাব এখনও রয়েছে। পুরানা পল্টন মোড়ে দোতলা একটি প্রাচীন ভবন পথচারীদের দৃষ্টি আকর্ষণ করলেও এর ইতিহাস কেউ জানে না।
তবে ভবনের গায়ে একটি শ্বেতপাথরে লেখা আছে ‘ফ্রিম্যাসন্স হল-১৯১০’। যে ক্লাবে গোপন বৈঠক চালাতো এই সম্প্রদায়ের মানুষ। যদিও এখন আর এই ক্লাবে আসেন না ইহুদি সম্প্রদায়ের কেউ, তবে ঢাকায় এখনও বসবাস রয়েছে তাদের।
তবে তারা এখন ঢাকায় নিজেদের পরিচয় গোপন রেখেই বসবাস করছেন। শুধু ঢাকাতেই নয় এই ভারতীয় উপমহাদেশেই ছিল ইহুদিদের আনাগোনা।
পুরানা পল্টনের প্রবীণ বাসিন্দা আবুল ফিদা চৌধুরী জানান, ‘আজ থেকে ৫০ বছর আগেও পল্টনের এ ক্লাবে ইহুদি সম্প্রদায়ের লোকজন ভিড় করত। ক্লাবের ভেতরে চলত তাদের আলাপ-আলোচনা, গোপন বৈঠক, খানাপিনা এবং নাচগান।
একাত্তরের স্বাধীনতাযুদ্ধের পর আর তাদের পল্টনের এই ফ্রিম্যাসন্স ক্লাবে খুব একটা দেখা যেত না। পরে ক্লাবটি পরিত্যক্ত ঘোষণা হলে সেখানে রমনা তহশিল অফিসের কার্যক্রম শুরু হয়। বর্তমানে ওই ভবনে ভূমি মন্ত্রণালয়ের প্রধান হিসাবরক্ষণের অফিস হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে।’
১৯৮০ সালের দিকে তাদের বেশির ভাগ ইহুদিই আমেরিকা কিংবা ইসরায়েলে চলে যান।এ উপমহাদেশে সর্বপ্রথম ইহুদিদের ক্লাব ফ্রিম্যাসন্স প্রতিষ্ঠিত হয় ১৭২৯ সালে কলকাতার ফোর্ড উইলিয়াম দুর্গে।
১৭১৭ সালে লন্ডনে ফ্রিম্যাসন্স আন্দোলন শুরু হওয়ার মাত্র দুই বছর পর কলকাতায় এর যাত্রা শুরু হয়েছিল। ১৭৫৩ সালে মাদ্রাজে এবং ১৭৫৮ সালে মুম্বাইতে এর প্রসার ঘটে।
ইহুদিদের রহস্যময় ক্লাব
১৯৪৭ সালে দেশ ভাগের সময়ও ঢাকায় বেশ কিছু ইহুদি পরিবার ছিল। এসব পরিবারের সদস্যরা ব্যবসা-বাণিজ্যসহ নানা পেশায় যুক্ত ছিলেন। কেউ কেউ হোটেল-রেস্তোরাঁও চালাতেন। ঢাকার বনেদি রেস্তোরাঁর জনক হলেন ইহুদিরা। এর প্রমাণ হলো গুলিস্তান এলাকার হোটেল রিজ।
সৈয়দ আবুল মকসুদ ‘ঢাকার বুদ্ধদেব বসু’ গ্রন্থে উল্লেখ করেন, ব্রিটিশ আমলে গড়ে ওঠা রিজ হোটেলটির মালিকানা পঞ্চাশের দশকে হাত বদল হয়। একই সঙ্গে তার নাম বদল হয়ে হয় ‘রেক্স’। মুক্তিযুদ্ধের আগে থেকেই রেক্স ছিল ঢাকার বনেদি বাসিন্দা ও কবি-সাহিত্যিকদের আড্ডাস্থল।
তখন সাদা চামড়ার বিদেশিদের আড্ডাস্থল ছিল ঢাকা ক্লাব। ঢাকা ক্লাবের বাইরে রেক্স রেস্তোরাঁ ছিল অনেকেরই আড্ডার প্রিয় জায়গা। অনেক রাত পর্যন্ত রেক্সে কবি-লেখকদের আড্ডা চলত বলে অনেকেই তাঁদের স্মৃতিকথায় উল্লেখ করেছেন।
‘ঢাকাই কথা ও কিস্সা’ গ্রন্থে কাদের মাহমুদ উল্লেখ করেন, ২০১৩ সালে সর্বশেষ হিসাবে দেখা যায়, ঢাকায় দুইশরও কম ইহুদি বসবাস করছেন। তাঁদের অস্তিত্ব সম্পর্কে ঢাকাবাসী খুব একটা জানেন না। তাঁরাও পরিচয় গোপন করে ঢাকায় বসবাস করতে ভালোবাসেন।’
পরে ১৯৬৪ সালে ২৫ ডিসেম্বর টেলিভিশন শুরু হলে সেখানে ঘোষক হিসেবে যোগদান করেন। দেখতে সুদর্শন মর্ডি কোহেন সহজেই টেলিভিশনের একজন জনপ্রিয় ঘোষক হিসেবে পরিচিতি অর্জন করেন। একসময় সংবাদ পাঠক হিসেবেও তিনি আবির্ভূত হন।
১৯৬৭ সালের আরব-ইসরায়েল যুদ্ধের পর তিনি তাঁর পরিবারসহ কলকাতা চলে যান। সেখানে তিনি তপন সিংহ পরিচালিত ‘সাগিনা মাহাত’ ছবিতে অভিনয় করেন। বাংলাদেশে থাকতেও তিনি নবাব সিরাজউদ্দৌলা ছবিতে অভিনয় করেছিলেন।
২০১৫ সালে বাংলাদেশ টেলিভিশনের ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে মর্ডি কোহেন ঢাকায় এসেছিলেন। ঢাকা থেকে কলকাতায় ফিরে গিয়ে তিনি মারা যান। কলকাতার নারকেলডাঙ্গায় তাঁকে সমাধিস্থ করা হয়েছে।
অন্যদিকে ১৯২১ সালে প্রতিষ্ঠিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা উপাচার্য পি জি হার্টগ জন্মগতভাবে ইহুদি পরিবারের সদস্য ছিলেন।
তিনি শুধু উপাচার্যই ছিলেন না, যে স্যাডলার কমিটির চূড়ান্ত সুপারিশ ও প্রতিবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল সে কমিটিরও সদস্য ছিলেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগদানের আগে তিনি লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৭ বছর চাকরি করেছিলেন।
১৯২১ সালের ১ জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম প্রথম শুরু হলেও হার্টগ উপাচার্য হিসেবে নিযুক্ত হয়েছিলেন ১৯২০ সালের ১ ডিসেম্বর। চাকরির মেয়াদ শেষ হয়েছিল ১৯২৫ সালের ৩১ ডিসেম্বর। তিনি একজন সফল উপাচার্য ও বিশ্ববরেণ্য শিক্ষাবিদ ছিলেন।
তথ্যসূত্র: ডেইলিমনিটর ও ইন্টারনেট
আরও পড়ুন: দাওয়াত ও তাবলীগের নীতি ও আদর্শ (১)